পুকুর পাড়ের ঝোপের নিবিড় যে অন্ধকারটা, আমার খুব চেনা। সামনের বাড়ির ছাদে নারকেল গাছটার পাতার বড় ছায়াটা লুটিয়ে আছে, সেও আমার খুব চেনা। হাল্কা হওয়ায় পুকুরের বুকে যে শিরশিরানো ঢেউ ওঠে, তাদের প্রত্যেক ঢেউটাকে আমি জানি।
ঠিক কি পরিচয়ে চিনি বলতে পারব না। তবে চিনি। চলতে ফিরতে দেখেছি, এমন অনেক কিছু কত সহজেই মনের গভীর তলায় নেমে যায়, সেখান থেকে সাড়াও আসে অতিপরিচিতের মত। একটা বক গাছের ডাল ছেড়ে সামনে দিয়ে যখন উড়ে গেল, মন খানিক তার পিছু পিছু চোখের সাথে গেল, তারপর উদাস হয়ে ফিরে এল, যেই সে চোখের আড়াল হল। তাকিয়ে রইল শূন্য গাছের ডালটার দিকে। তারপর আবার মনের উপর তলার কথারা এসে ভিতর তলার কথাদের দিল ঢেকে।
মনের গভীরের কথা প্রকৃতি টের পায়। সে মায়ের মত প্রলেপ দিয়ে যায় অজান্তেই। মনের গভীরের অনেক শোক তাপ জুড়িয়ে যায়, যদি তাকে কেউ বুঝতে পারে, সমাধানের পথ মুশকিল আসানের মত না দিতে পারলেও সব সময়। মানুষের গভীরতম একটা আকাঙ্খা - তাকে কেউ বুঝুক, গভীরে গিয়ে বুঝুক।
মানুষ পারে না। প্রকৃতি পারে। তাই মাঝে মাঝে প্রকৃতির কাছে এসে নিজেকে মেলে ধরলে সে নীরবে, মনের বহু ক্লেদ, গ্লানি, ক্ষোভকে মিটিয়ে দেয় শান্ত শীতল স্পর্শে। বুঝতেও দেয় না। কারণ তার কাজ সচেতনে না, অচেতনে।
এ ভাবেও সুস্থ থাকা যায়। নিজের মধ্যে নিজের সাথে সম্পৃক্ত থাকা যায়, যদি আরেকটু প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা যায়।
সৌরভ ভট্টাচার্য
29 July 2016