আত্ম-প্রচার ও আত্ম-প্রকাশের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান আছে।
প্রথমটা, আলো নিজের মুখে ফেলে বাজারে ঘুরে বেড়ায়। সে মুখে প্রয়োজনের থেকে বেশি সাজ, জিভে প্রয়োজনের থেকে বেশি ভাল কথা, চোখ স্বাভাবিকের থেকে বেশি চকচকে।
আত্ম-প্রকাশে আলো নিজের তাগিদেই বাইরে আসে। অন্যের চোখে তা আপনিই পড়ে। চোখে আঙুল দিয়ে বিজ্ঞাপিত করতে হয় না।
সমস্যাটা অন্য জায়গায়। আত্ম-প্রচারে সময় খুব বড় একটা বাধা। কারণ সেখানে ধৈর্য্য নেই, আছে উত্তেজনা। উত্তেজনার কাছে সময়ের ধীর গতি বড়ই বিরক্তিকর। সে হইচই বাধিয়ে, ধুন্ধুমার কাণ্ড বাধিয়ে পথে নেমে পড়ে। বহু মানুষ অনুগামীও হয়। বিশেষ করে যারা আরেকটি নতুন উত্তেজনা খুঁজছিল তারা। আগের উত্তেজনাগুলো পুরোনো হয়ে যাওয়াতে, চাই নতুন কিছু যে! মুশকিল হল সব উত্তেজনার শেষ এক পরিণামে- সময়ের ধীর স্থির গতির পায়ে খেলনাগুলো রেখে, কালের গহন গভীরে আত্ম-বিলীন হওয়া। তার ঝুলিতে সঞ্চয় বলতে, কিছু মৃত শুকনো নিন্দা-প্রশংসার কাঁকড়। আনন্দ নেই।
আত্ম-প্রকাশে সে অধৈর্য্যতা নেই। তার মূল শক্তি অধ্যবসায়। সময় তার দোসর, গতি নির্দেশক। তার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। সে নিমগ্ন তার সাধনায়। কখন যে সে লোকচক্ষুর মাঝে এসে পড়েছে সে খেয়ালও তার থাকে না। তার মনে হয়, এ বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের এক ক্ষুদ্র অংশ তার মন-প্রাণ রূপ ধারণ করে, প্রকৃতির বিচিত্র খেলায় অংশ নিয়েছে, সৃষ্টির খেয়ালে। অন্যের প্রশংসা তার উপজীব্য না, অন্যের নিন্দা তার বাধাও না। অন্যের প্রশংসা-নিন্দাকে সে অন্যের বলেই দেখে। তার একমাত্র সাধ, অন্তরাত্মাকে তুষ্ট করা। অন্তরে প্রসন্ন হওয়া, আনন্দিত হওয়া।