Skip to main content

তবু চলতে ফিরতে কেন জানি ক্যালেণ্ডারে চোখ। বাংলা দিনপঞ্জিকা তো নেই, ইংরাজী ক্যালেণ্ডারেই চোখ। ইংরাজি সংখ্যার নীচে ক্ষুদে ক্ষুদে অক্ষরে লেখা - ১ আষাঢ়। 
        কি আদিখ্যেতা! নাগরিক জীবনে এর কি গুরুত্ব বাপু? তুমি কি চাষবাস করবে? না কবতে লিখবে? যদি ভাব কবতে লিখবে, সে তো সেকেলে বস্তু বাছাধন আমার! 
        তবু মাঝে মাঝে আকাশে চোখ। কারণ মেঘের সাথে আমার গোপন মনের কোথাও না কোথাও, কিছু না কিছু একটা যোগসূত্র তো আছেই। মেঘের চিরকালের আমন্ত্রণ আমার অবচেতন মনের গহনে। যার নাগাল যখন-তখন পাই কই? মেঘ মনের গভীরের কথাগুলোর, অব্যক্ত যন্ত্রণাগুলোর সই। আর বর্ষার মেঘ মানে দুই সইয়ের চতুর্মাস্য কাল যাপন। যখন তখন মনের ঝাঁপি খুলে কখনও কদম্বের গন্ধ, তো কখনও ভিজে মাটির গন্ধে পাগল করা। বৃষ্টিজলের ধারার মাটির বুকে ভাসা ছোটো ছোটো বুদবুদের, ক্ষণকালের অস্তিত্বের সুখে ভরপুর। তাই মেঘলা দিনে আমি আনমনা। 
        কিন্তু বাছা, এতো কাজের কথা নয়? 
        সেইখানেই তো শান্তি খুড়ো। কাজের কথা না বলতে পারার মত অজুহাত বর্ষা ছাড়া আর কে দেয় বলো। "বেরোতে পারছি না, হাঁটুজল"... "কাকা ট্রেন বন্ধ, লাইনে জল"... "কাল ভিজে আজ জ্বর"... আহা! কত্ত অজুহাত খুড়ো। এমন বিবেকের দংশনহীন মাঠঘাট ভাসানো সুখ বর্ষা ছাড়া কে দেয় কাকা? বাড়ির লোকের সাথে খিচুড়ি থেকে পুরোনো দিনের গল্পের ঝাঁপি, দুই-ই আনে বর্ষা। আমরা যখন মেঘলা অন্ধকারে তুমুল প্রেমে চটকাচটকি, মাখামাখি, কান্নাকান্না - বাইরে তখন ঝরঝর... ঝরঝর... ঝরে চলেছে প্রকৃতির আদিম কান্না... আদিম স্নেহ... আদিম সোহাগ... বর্ষা। তুমি বুঝবে না কাকা, মানুষ কাজের থেকে অনেক বড়। সে কথা ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারা যায় কই? তোমার জগতে ইন্দ্রিয়সুখের অঢেল আয়োজন, তোমার জগতে কান্না ক্ষোভের, অভাবের, তাই বিশ্রী সে। মানুষের মধ্যে যে সুখের কান্না সে কই তোমার? তুমি ভুলে যাও মানুষ কাঁদতেও ভালোবাসে। সে তোমার ওই মাল্টিপ্লেক্সে অন্ধকার ঘরের কৃত্রিম কান্না নয়। দুটো চোখের উপর চোখ রেখে হৃদয় মুচড়ানো কান্না, কোলবালিশে মুখগুঁজে বুকের ভিতর উত্তাল সাগরের ঢেউ আছড়ানো কান্না, উদাস চোখে বর্তমানের বেড়াজাল ছিঁড়ে অনশ্রু কান্না। তুমি বুঝবে না কাকা। তুমি কান্না মানে জানো শূন্যতা। কান্না মানে পূর্ণ হৃদয়ের অসহায় অসীম ভালোবাসাও, তুমি জানো না।
        তাই তোমার মতে আজ 16th June হলেও সে শুধু আমার কেজো পোশাকে, তোমায় ভোলাতে। আমার ঘরের জামায় আজ ১লা আষাঢ়। তুমি চোখ-কান বন্ধ করো। আমি ভিজতে নামি মনে মনে, তোমার আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরকে কাঁচকলা দেখিয়ে। আমার বর্ষার খবর সে জানে না, পায় না। আমায় এ বর্ষামন্ত্র কে শেখালো? রবীন্দ্রনাথ গো! সেও কি বলে দিতে হয়?