সৌরভ ভট্টাচার্য
25 June 2020
একজন পোস্টম্যান, তাকে ঘিরে তিনটে গল্প। মারাঠি সিনেমা, পোস্টকার্ড। আমার বেশ লাগল সিনেমাটা, আমাজন প্রাইমে দেখলাম। গল্প বলার ভঙ্গিও বেশ ছিমছাম। কোনো অতিচেষ্টা নেই।
প্রথম গল্প একজন বৃদ্ধের, যিনি দীর্ঘদিন এক কাঠচেরাইয়ের দোকানে কাজ করতে করতে শেষ জীবনে এসে দাঁড়িয়েছেন। মালিকের ছেলে লোভী, অমানুষ, নির্দয়। সেই এখন মালিক। বৃদ্ধ যখন কাজ থেকে অবসর নিয়ে নিজের পরিবারের কাছে ফিরতে চায়, তখন মালিক বলে তার এক হাজার টাকা ধার আছে। কি করে ধার হল? কবে নিল সে ধার? বৃদ্ধের মনে পড়ে না। তবু সে মেনেই নেয়। সহকর্মীরা বলে তোমার ছেলে তো বড় হয়েছে, স্বাবলম্বী হয়েছে। ওকে বলো তোমায় টাকা পাঠাবে। বৃদ্ধ তাই করে। কিন্তু ছেলে লিখে পাঠায়, এখন তাদের অনেক খরচ কি করে পাঠাবে এ বছর টাকা..হয় তো পরের বছর। বৃদ্ধ কষ্ট পায়। কিন্তু বিশ্বাস হারায় না। সে ঈশ্বরকে চিঠি লেখায় একজনকে দিয়ে। তার টাকার দরকার, ঈশ্বর যেন পাঠান। পোস্টম্যানের হাতে আসে চিঠি...
দ্বিতীয় গল্প, একজন মানুষ সৈনিকের পোশাক পরে দাঁড়িয়ে থাকে গার্লস হোস্টেলের সামনে। পোস্টম্যান হোস্টেলে চিঠি দিতে ঢুকলেই তাকে গেটে আটকে দেয়। তার মেয়ে এই স্কুলে পড়ে, তার মা নেই, সেই তাকে বড় করছে, কিন্তু তার মেয়েকে তার সাথে দেখা করতে দেয় না স্কুল কর্তৃপক্ষ। পোস্টম্যানকে ভীষণ পীড়াপীড়ি করে সেই সৈনিক যেন সে তার মেয়ের খোঁজ এনে দেয়। কিন্তু সে মেয়ে কই? এই নামে কেউ কি পড়ে সেই স্কুলে? সৈনিক পরিচয়পত্র দেখায়। কিন্তু সে মেয়ে তো বহুকাল আগে এই স্কুলে পড়ত। সৈনিক বলে কিন্তু তার মেয়েকে যে করে হোক খুঁজে বার করে দিতেই হবে পোস্টম্যানকে। সে তো পোস্টম্যান তার কাজই তো বার্তা পৌঁছে দেওয়া। পোস্টম্যান তাকে এড়িয়ে যায়। কিন্তু কোনো না কোনো উপত্যকায়, পাহাড়ি কোনো ঢালে সে সৈনিক পোস্টম্যানের পথ আটকায়। তাকে তার মেয়ের খবর এনে দিতেই হবে। তাকে তার হয়ে বলে দিতেই হবে তার বাবা তাকে ভোলেনি, তার বাবা তার সমস্ত চিঠি পেয়েছে, যা সে হোস্টেল থেকে লিখেছে তার ছোট্টো হাত দিয়ে। তখন তার বাবা আসামে। তাকে দেখতে তার কাছে আসতে তার বাবা ছুটি পেয়েছিল তো...কিন্তু ফেরার পথে ওই যে পাহাড়ের চূড়ার বাঁক, ওইখান থেকে তার বাবার বাসটা খাদে পড়ে যায়। তার বাবা আর তার আদরের মেয়ের কাছে পৌঁছাতে পারে না। কিন্তু সে যে খুব ভালোবাসে তার মেয়েকে, কে দেবে এ খবর তার মেয়েকে এক পোস্টম্যান ছাড়া? খুঁজে বার করো আমার মেয়েকে পোস্টম্যান।
তৃতীয় গল্প, গুলজারের। সে বাঈজী। সে প্রতিদিন পোস্টম্যানের সাইকেলের পিছনে ধাওয়া করে, আমার কোনো চিঠি নেই পোস্টম্যান? অবশেষ চিঠি এলো। বার্তা এলো সে আসবে। এদিকে বর্ষাও এলো। পোস্টম্যানও ভিজল গুলজারের চোখের দৃষ্টিতে। ভিজল না, পুড়ল। তারপর?