বাচ্চাটার জামায় নীল বোতাম। সাদা সুতোতে সেলাই। বাচ্চাটার লাল জামাটা একটু ছোটো। নীল হাফ প্যান্ট। পার্কের একটা কোণে বসে মোবাইলে গেম খেলছে।
কিছুটা দূরে বাবা মা প্রচণ্ড ঝগড়া করছে। বাচ্চাটা মোবাইলটা রেখে গঙ্গার ধারে রেলিং এর ফাঁকের সামনে এসে দাঁড়াল। সূর্যাস্ত হচ্ছে। নৌকা চলছে। পাখিরা ঘরে ফিরছে। এখনও ঝগড়া চলছে।
কিছুটা দূরে কয়েকটা ডাস্টবিন। বাচ্চাটা কয়েকটা কাগজের টুকরো মাটি থেকে তুলে ডাস্টবিনে ফেলল। একটা পোকা ডাস্টবিন থেকে তুলে হাতে নিল। দেখল। রেলিং এ এনে বসালো। পোকাটা উড়ে গেল। ঝগড়া চলছে এখনও।
কিছুটা দূরে আইস্ক্রিম, ফুলুরিওয়ালা, সিগারেটের দোকান, ফলওয়ালা, ঝালমুড়িওয়ালা। বাচ্চাটা ঘুরে ঘুরে সব দেখতে দেখতে কয়েকটা ফেলে দেওয়া ঠোঙা, আইস্ক্রিমের কাঠি, পোড়া দেশলাই কাঠি পকেটে ভরল। রেলিং এর ধারে এলো। একটা একটা করে গঙ্গায় ফেলল। একটা নৌকা পাড়ের কাছেই বাঁধা। দুলছে। রেলিং এর ডানদিক থেকে কিছুটা এগোলে গঙ্গায় নামার দরজা। সিঁড়ি। তার বাঁদিকে নৌকাটা বাঁধা। ঝগড়াটা চলছে।
বাচ্চাটা রেলিং-এর গেটের কাছে এসে দাঁড়ালো। একটা পিঁপড়ের সারি চলেছে মাটি বেয়ে বাগানের দিকে। বাচ্চাটা বাগানে ঢুকল। ঢালু পাড়ের গায়ে ফুলের গাছের সার। বাচ্চাটা টাল সামলাতে সামলাতে একটা একটা ফুল হাতে করে ছুঁলো, ছিঁড়ল কয়েকটা, দু-তিনটে পকেটে ভরল। গঙ্গায় ফেলবে।
ডিভোর্স হয়ে গেছে ওদের এখন। তিন বছর হল। কেউ আসে না এই শহরে ওদের দুজনের মধ্যে একজনও। অপরাধটা কার বেশি? শুনেছি ছেলেটা চাকরি ছেড়ে ফটোগ্রাফিতে আছে, আর মেয়েটা স্কুলে চাকরিটা ছেড়ে বাড়িতেই আছে।
পার্কটার নাম 'পলাশ' করা হয়েছে তিনমাস হল।