Skip to main content
২৫ শে বৈশাখ

আজ কি কিছু বলার দিন? আমি বুঝে উঠতে পারি না। একবার ভাবি না, আজ চুপ থাকার দিন। যা কিছু তিনি সারাটা জীবন জুড়ে বলে গেছেন, সেই মনন সাগরে স্নান করার দিন। সাঁতার কাটার দিন। রোজই আসি। তবে আজ সারাদিনই সেই সাগরের সাথে কাটানোর দিন। আজ অন্য কোনো কথা নয়। আজ শুধু তিনি।


কি বলব? তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ? কতটা প্রাসঙ্গিক তাঁর রচনা আজকের সময়ে? প্রিয় গান, কবিতার উদ্ধৃতি? না। এর কোনোটাই না। তবে?
তবে বলব, কিছু অনুভবের কথা। একটা সময় মনে হত, খুব মনে হত, আচ্ছা যদি ওনার জন্মের আগে জন্মাতুম কি হত? জীবনটা তো সম্পূর্ণ বসার ঘর থেকে ফিরে যেত! শাস্ত্রের শাসনে জীবনের পরম দয়িতকে চিনতুমই না। সে নিজে এসে আমার হৃদি আসনে বসতে চাইলেও তাকে বিশ্বাস করতুম না। বলতাম, তুমি কে হে? কই তোমার ঐশ্বর্য? কই তোমার অঘটনপটিয়সী মায়া? কই তোমার আয়ুধ? আমার মন্ত্র পড়া হল না আর এরই মধ্যে তুমি ঘরে সেঁধোলে যে? এমন আরো কত অর্বাচীনের মত তর্ক জুড়তুম।


কি করে জানতাম, সে অসীম নীল আকাশের সাথে তাকায়! কি করে জানতাম সে আমার ব্যাথায় ব্যাথায় পা ফেলে আমার সাথে সাথে ফেরে! কি করে জানতাম আমার সংসারে ঘোর তাণ্ডব, সংশয়ের দোলা এসবই তারই লীলার অংশ! আরো কত কত বলব? বলা যায় না। নিজের সাথে যে নিজের পরিচয় ঘটায়, তার পরিচয় ঘটাবে কোন আমি? চোখকে দেখব কোন চোখে? হৃদয়কে জানাব কোন হৃদয় দিয়ে? সাগর তার তিলমাত্র অংশ নদীর বুকে আনলেই জোয়ার, সাগরকে ধরবে কোন নদী? আর এখানে বলবার লোকটা তো ডোবার চাইতেও ছোট। তবু সে ডোবার জলে সাগরের জল এসে পড়েছে বৃষ্টির সাথে। সূর্যের আলো, চাঁদের আলো এসে পড়েছে করুণা করে। এই ঢের। এতেই তার গর্বের সীমা পরিসীমা নেই।


বাণীর একটা অসুবিধা হল, সে খণ্ডিতভাবে জাগায়। সে পুরো সত্তাকে জাগরিত করতে পারে না। সুর পারে। তাই পেরেছে। একজনের নাকে অক্সিজেন সিলিণ্ডার বেঁধে তাকে ঘোরালে সে সর্বদা সুস্থ অক্সিজেন পায় বই কি, তবে সেটা তার স্বাস্থ্যকর অবস্থা নয়, এ বলা বাহুল্য। যে অক্সিজেন সে বাতাস থেকে পায় তাই তাকে স্বাস্থ্য দেয়, সুস্থ করে। তেমনই সুর। সে ভিতরে গিয়ে চেনা-অচেনার রাজ্যে দোলা লাগায়। উদাস করে। গানের বাণী তখন শরীর ধারণ করে সম্পূর্ণ একজন আত্মনির্ভরশীল সত্তা। যেন এক ব্যক্তিসত্তা। সে কথা বলে। মনের অলিতে গলিতে চলে ফিরে বেড়ায়। সে জাগায়। সামঞ্জস্যহীন জাগরণ না। উত্তেজনার ক্ষণিক উন্মাদনা না। সে জাগায় পরিপূর্ণতায়। সে উদ্বোধিত করে।


বারবার তাই বলেছেন, লোভ না করার কথা। শান্ত থাকার কথা। শ্রীহীন না হওয়ার কথা। রুদ্রকে বরণ করার কথা। ভীষণকে না ফেরানোর কথা। দুর্বল, আত্মশক্তিহীনতায় কোনো গর্ব নেই। দীনতার অনুভব বড়র কাছে হোক, বলশালীর কাছে না। এ জোর, এ শক্তি - সাধনালব্ধ। কিসের সাধন? সহজ হওয়ার সাধন। সত্যে, মঙ্গলে, কল্যাণে।
কথার শেষ নেই। কিছু কথা হল। এই থাক। প্রার্থনা এই যেন প্রার্থনার মূল্য বুঝি। যেন শান্ত হই, শিবের মধ্যে সংসারকে দেখি, একের মধ্যে সবাইকে পাই।
(ছবিঃ সুমন)