Skip to main content
 
 
 
Pink দেখে এলাম। কোনো ফিল্ম রিভিউ লিখতে বসিনি। অত গভীরে গিয়ে সিনেমার টেকনিক্যাল দিকগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখব, সমালোচনা করব - সে বিদ্যা আমার নেই। যতটা ভালো অভিনয় করলে প্রত্যেকটা চরিত্রকে সত্যি মনে হয়, প্রত্যেকে ততটা ভালো অভিনয় করেছেন। যেরকমভাবে একটা গল্পকে বললে তার বাস্তবতা নিয়ে কোনো সংশয় জাগে না - ততটা বাস্তবভাবে বলা হয়েছে। 
শুরুতে একটা ভুল কথা বলে শুরু করলাম। মাফ করবেন। 'পিঙ্ক' দেখে এলাম না, কয়েকটা চড় খেয়ে এলাম। আমার সামনে সিনেমার পর্দাটা বারবার আয়না হয়ে যাচ্ছিল। আমি প্রাণপণ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলাম তো... পারছিলাম না... চারদিক বড্ড অন্ধকার যে। আর পর্দার আলোর রিফ্লেকশানে যে মুখগুলো আমার আশেপাশে ভেসে উঠছিল... ওরাও আমারই মত তো... আয়নার মতই তো...
খোলাখুলি বলি। আমিও তাই ভাবি তো... ছোটো ছোট প্যান্ট পরা মেয়েগুলো... পার্টিতে মদ খাওয়া মেয়েগুলো... নাভির নীচে শাড়ি পড়া মেয়েগুলো... অকারণে গায়ে হাত দেওয়া মেয়েগুলো... বেশি ফ্রেণ্ডলি মেয়েগুলো... খারাপ চরিত্রের মেয়ে। ওদের কামভাব শাড়ী পরা, সালোয়ার পরা শান্ত স্বভাবের মেয়েদের থেকে অনেকগুণ বেশি। ওরা সহজলভ্য। ওদের সাথে শুতে যাতে না হয় সেই চেষ্টা করেই নিজের শুদ্ধতা বজায় রেখে চলা উচিৎ। ওরা যে কোনো আছিলায় আমায় ফাঁসাবার জন্য... আমায় ওদের স্তরে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করে চলেছে। 
কেন? এর জন্য একটা দর্শন আছে। যেহেতু এটা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। তাই মেয়েদের উপর অনেকরকম বিধিনিষেধ আমাদের পূর্বপুরুষেরা চাপিয়েছে (খেয়াল করা উচিৎ এখানে পূর্বমেয়েরা বলা হয় না। এমনকি আমাদের সাংখ্যদর্শনেও পুরুষ সদা শুদ্ধ বুদ্ধ মুক্ত... প্রকৃতিই যত বন্ধনের মূল। ভাবুন এর শিকড় কতদূর! সেই প্রকৃতিকে কামদ্বারা, শ্রদ্ধাদ্বারা, মাতৃভাব দ্বারা তুষ্ট না করতে পারলে ইহকাল পরকাল দুই নষ্ট।) সেই শোধ নেওয়ার জন্য ওরা এতটা বাড়াবাড়ি শুরু করেছে। 
আমাদের শালীনতার একটা পাঠ দেওয়া হয়েছে। এবং সারা পৃথিবীর অধিকাংশ সভ্যতাতেই মেয়েদের ও ছেলেদের বিধিনিষেধের রীতিনীতি আলাদা। বিশ্বের তাবড় তাবড় সাহিত্য এর সাক্ষী। সে সব যুগে যুগে পাল্টানো হয়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে, আর সে পরিবর্তনকে সমাজ স্বীকার করে এসেছে।
আমরা পারিনি। যতটা পেরেছি ততটা দায়ে পড়ে মেনেছি, বাধ্য হয়ে মেনেছি। যেন প্রয়োজনে সামনের বাগানটা বাধ্য হয়েছি বিক্রী করতে ফ্ল্যাট বানানোর প্রোমোটারের হাতে দিয়ে, আসলে আমি চেয়েছিলাম বাড়ির সামনে একটা বাগান। তাই রোজই সামনের বহুতল ফ্ল্যাটটার দিকে তাকাই আর দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মনে মনে ভাবি, আর যেন কোনো বাগান ফ্ল্যাটে না পরিণত হয়। ফ্ল্যাটের একটা ছাদ ভেঙে পড়লেই আশান্বিত হই... একদিন পুরো ফ্ল্যাটটা ভেঙে পড়বে আর আমি সাধের বাগানটা ফিরে পাবো...
ভাবছেন হয় তো এরকম একটা উদাহরণ কেন আনছি। কারণ এতটাই ইনোসেন্ট আমাদের দাবীটাকে আমরা ভেবে থাকি মেয়েদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণের কথা ভাবতে গিয়ে। ওই কথাই বলি না... যতই ঘ্যাম দেখাও মাগী... শোয়ার সময় তো সেই আমার নীচেই শুতে হবে... এমন নিষ্পাপ প্রাকৃতিক মনোভাবের অধিকারী আমি। 
লজ্জা নারীর ভূষণ - এ কথা আমি বিশ্বাস করি না বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো? পারব না। মা বোন বউ... এরা আমার বাড়ির দামী আসবাব। এর বাইরে যারা আছে তাদের বুক আছে, যোনি আছে, নরম শরীর আছে... আড়চোখে দেখো... সোজাসুজি না... যদি চোখ মেরে বসে মেয়েটা... আজকাল মেয়েরা যা হয়েছে...
সত্যি কথা বলব। আমায় এটা শেখানো হয়েছে। ছোটবেলা থেকে অভিভাবক, ধর্মগ্রন্থ, ফটোতে বাস করা ভগবানের অথরিটি পাওয়া মহাপুরষের বাণীর বই... শিক্ষক শিক্ষিকা... এরা সবাই শিখিয়েছেন যে এটা। আমাদের এগুলো নিয়ে ভাবতে বললে কেমন মনে হয় সমুদ্রের জল নোনতা কেন এরকম একটা আজগুবি প্রশ্ন করা হচ্ছে। 
আর এর সবচাইতে বড় রক্ষক হচ্ছে আমাদের পুরুষেরা না... আমাদের মেয়েরা। বেশিদূর যেতে হবে না। নিরানব্বই ভাগ সিরিয়ালগুলোর দিকে তাকালেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায়, আমরা কোনটাকে ধ্রুবসত্য বলে বিশ্বাস করে আসছি। 
কোনো মেয়ে যদি নিজের শারীরিক চাহিদার কথা বলে - সে বেশ্যা। এ কথা পুরুষ না, মহিলাদের মুখেই শুনেছি। বিধবাদের আমিষ খেতে নেই কারণ তাতে তাদের কামভাব বেড়ে যাবে, সমাজের ভিত ধ্বসে যাবে... পুরুষ বিপত্নীক হলে এসব নিয়ম নেই... কারণ বিয়ে মানে ধর্মের শাসনে একজন করে মেয়ে পোষা... জানি না আমাদের সমাজে ডিভোর্স হলে, পুরুষ বেকার হলে, ডিভোর্সী স্ত্রী যদি স্বনির্ভর হন তাহলে কোর্ট তার কাছে স্বামীর খোরপোষ দাবী করে কিনা... 
মূলে অনেক গোলমাল। অনেক জট। এ ধরণের প্রশ্নগুলো আরো শোনা অভ্যেস করতে চাই। এই সিনেমাটা প্রতিটা স্কুলে, বিশেষ করে ছেলেদের স্কুলে একবার করে দেখানোর ব্যবস্থা করা যাক। 
সব শেষে যে হাতটা ধরবার ইচ্ছা নিয়ে হল থেকে বেরোলাম... অমিতাভ'র সেই কালো কোর্ট পরা হাতের একটু স্পর্শ নেওয়ার ইচ্ছা নিয়ে এ প্রসঙ্গের ইতি টানলাম... মেয়েদের 'না' মানে না... না বলার অধিকারটা তার জন্মগত... আমায় দিতে হবে না তাকে... শুধু মনে রাখলেই হবে কথাটা... এ কথাটা শুধু 'না' এর ক্ষেত্রেই না... কোনো অধিকারই আমরা কাউকে দিতে পারি না... শুধু সেটা সসম্মানে মেনে চলতে পারি আর তাতেই আমার সম্মানটাও থাকে...
Top of Form