সৌরভ ভট্টাচার্য
3 February 2022
সমস্যাটা হল
মেয়েটার বাপের বাড়ি রইল না
কিন্তু বাপের বাড়ির গ্রামটা রয়ে গেল
বীরনগর
মেয়েটা
যে এখন থাকে কলকাতায়
যে দুই ছেলের মা
স্বামী উচ্চপদস্থ, উচ্চবিত্ত
সে মাঝে মাঝেই শিয়ালদা চলে আসে
বীরনগর যাওয়ার ট্রেনের ঘোষণা শোনে
ট্রেনটার প্লাটফর্ম ছেড়ে
ধীরে ধীরে চলে যাওয়া দেখে
তারপর দুই চোখ জল
আর এক বুক কান্না নিয়ে
নিঃশব্দে ফিরে আসে
গাড়িতে বসে
এসি চালায়
গান চালায়
ড্রাইভারকে বলে,
চলো
একদিন মেয়েটার কি হল
কাউকে না বলে
ধুম করে বসে পড়ল
কৃষ্ণনগর লোকালে
জানলার ধারে
লেডিস কম্পার্টমেন্টে
ট্রেন ছাড়ল
বাদাম কিনল
দিলখুশ কিনল
পেয়ারা কিনল
একটা একটা স্টেশানের-
মাঠের, রাস্তার
হাওয়া মাখল
জানলায় মাথা রেখে
মনে মনে বলল,
মা আমি আসছি
বীরনগরে নামল
রিকশা নিল
গেল বাপের বাড়ির পাড়ায়
চেনা বাড়িতে অচেনা পরিবার
সে এক গ্লাস জল চাইল
বলল, আমি এ বাড়িতে জন্মেছি
আমার বিয়েও হল এ বাড়ি থেকেই
ওই যে মায়ের রান্নাঘর
এই যে পেয়ারা গাছ মায়ের হাতে লাগানো
উঠানের এই মন্দিরটা বাপির প্ল্যান ছিল
তারা শুনল
তাদের সেদিন বিয়েবাড়ি
রাণাঘাটে
বড্ড তাড়া
তারা চলে গেল
বাড়িতে তালা দিয়ে
সে রইল নির্বাসিত
রাস্তায়
বন্ধ তালা মেয়েটাকে বলল,
এবার ফের, আর আসিস না
মেয়েটা স্টেশানে এলো
ফেরার ট্রেনে বসল
মোবাইলের স্ক্রিন জুড়ে
সাতাশটা মিসড কল
ছেলেদের, স্বামীর
জানলায় মাথা রাখল
হাওয়া কপালে হাত বুলিয়ে বলল,
আবার আসিস
কিচ্ছু হারায়নি
মানুষ মনে রাখে না
মাটি মনে রাখে
মেয়েটা ব্যাগটা খুলল
পেয়ারা গাছের একটা ডাল
আড়ালে ভেঙে এনেছে
মায়ের আঁচল
টবে লাগাবে
ঝুলবারান্দায়
টেক্সট করল
"ফিরে বলছি"...