মেয়েটা যতবার মুখ লুকিয়ে কাঁদতে চাইছে, ততবার কয়েকটা চুল মুখের মধ্যে ঢুকে পড়ছে। আবার মাথা তুলে চুলগুলো বার করে কানের পিছনে সরিয়ে, আবার টেবিলে মাথা নীচু করে কাঁদতে শুরু করছে। কাঁদতে কাঁদতেই ভাবছে চুলগুলো আরেকটু ছোট করে কাটবে সামনের বার।
রেজাল্টটা পেন্সিল বক্স চাপা আছে। এইটের অ্যানুয়ালের রেজাল্ট। অঙ্কে পঞ্চান্ন। কেঁদে কেঁদে চোখটা লাল রাখতে হবে, মেয়েটা জানে। বাবা ফিরবে দশটায়, মা সাড়ে নটায়। ততক্ষণ অনেকবার কাঁদতে হবে। চোখটা সিঁদুরের মত লাল হলে মার কম হবে।
একবার উঠে চুলটা আয়নায় দেখে এলো। ব্রাউন কালার করেছে সাইডগুলো। দারুন লাগছে!
আবার কাঁদতে বসল।
মিতার রেজাল্ট আজ। বর্ষার অফিসে ঢোকার আগে মনে ছিল। শুভ আসার পর আর মনে নেই। শুভ নতুন জয়েন করেছে। তার উল্টোদিকের টেবিলে বসছে। কি গলা গানের! বর্ষা অফিসে ঢুকেই ওয়াশ রুমে যায় আজকাল। লিপস্টিক লাগাত না আগে। ইদানীং লাগাচ্ছে। নতুন কি একটা ফেসক্রীম দিয়েছে লাডলী তাকে। সেটাও লাগায়। মুখটা অনেকক্ষণ ফ্রেশ লাগে।
বর্ষা অফিস থেকে বেরোবার আগেও একবার ওয়াশরুমে ঢোকে। আজও ঢুকেছে। মুখে একরাশ বিরক্তি। শুভর সাথে লাবণ্য একটু বাড়াবাড়িই করছে না!
যা হোক, তবু জোর করে ঘষে ঘষে মুখের আর ঠোঁটের রঙ তুলছে। পরিতোষের যা নজর! আর মেয়েটাও পেয়েছে বাপের দৃষ্টি, শকুনে চোখ... শালা!!
পরিতোষ আজ কাল করতে করতে, আজ হ্যাঁ বলেই দিল লিজাকে। ঘাটশিলায় লিজাদের একটা বাগানবাড়ি আছে। এটা এমন কিছু অন্যায়ও নয়। সে তো ঘুষ নিচ্ছে না! আর এমন কিছু ঘ্যামা দেখতেও না মেয়েটাকে, বডিটাও সো সো.... ডেভলপড তো নয়ই। লিজার একটা প্রোমোশান শুধু তার একটা সইতেই আটকে। দিতে ইচ্ছা করছে না। কাকলি অনেক বেশি ডিজার্ভিং, জানে পরিতোষ। কিন্তু ভীষণ ঘ্যাম মেয়েটার। ওর হাজব্যাণ্ড ইনকাম ট্যাক্সে বড় চাকরি করে সেই নিয়েই বোধহয়।
লিজা অনেক বেশি সাবমিসিভ। যাই হোক লিজাই পাচ্ছে প্রোমোশানটা, পরিতোষ ঠিক করেই নিয়েছে। তার নিজের একটা পার্সোনাল ডিম্যান্ড তো থাকতেই পারে!! এটার মধ্যে কিছু অন্যায় দেখে না পরিতোষ।
মোবাইলটা চার পাঁচবার অন্ করেও অফ্ করল। বলবেটা কি বাড়িতে?
হ্যালো কে? মিতা? মাকে বোলো......
মিতা রাতে একাই শুতে গেল। মা রাত করে ফিরবে। বাবা ফিরবে না। মিতা জানে, মা রাত করে ফিরবে মানেই, প্রচুর মদ খেয়ে আসবে, তাকে উত্তাল আদর করবে, আর কাঁদবে। বাবা থাকলে খিস্তির বন্যা ছুটত। আজ সেটা হবে না, শান্তি!