সৌরভ ভট্টাচার্য
18 January 2020
ফানুসটা ওড়ানো হবে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করা হল। নির্দিষ্ট দিন, সময় জানিয়ে দেওয়া
হল।
লোকে
লোকারণ্য নির্দিষ্ট দিনে। ফানুসে আগুন দেওয়া হল। লোকে উৎসুক, মায় সদ্যোজাত বাচ্চাগুলো
পর্যন্ত কাঁদা ভুলে, মুখে আঙুল দিয়ে ফানুস ওড়া দেখছে। রাজার ফানুস। মন্ত্রীর মনোগত
ইচ্ছা বহুকালের।
এই ফানুস উড়ে উড়ে নাকি ইন্দ্রের সভা অবধি যাবে।
মেঘ ফাটিয়ে বৃষ্টি হবে। চাষ হবে। চারদিক সুজলা সুফলা হবে। আর দেশে কোনো রোগ, দারিদ্র্য
বালাই থাকবে না।
ফানুস উড়ল। উড়ে উড়ে মিলিয়ে গেল। লোকে বসে থাকল।
সপ্তাহ গেল। মাস গেল। বছর গেল। সবাই অপেক্ষায়। মাঝে মাঝেই ঘোষণা চলছে রাজভবন থেকে,
আপনারা অধৈর্য হবেন না, সব খবর সময় মত জানবেন, সুদিনের আর দেরি নেই। আপনারা শুধু আকাশের
দিকে তাকিয়ে থাকুন।
এমন কোনো দেশ আছে যেখানে নিন্দুক নেই? এদেশেও
আছে। তারা এর তার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে, "এই যে মশায়, বাড়ি যে ফাঁক
হয়ে গেল! চাষের জমিতে যে ঘাস গজিয়ে জঙ্গল হল! বিদ্যালয়ের ঘরে ঘরে যে শান্তশিষ্ট গরুতে
গরুতে ভর্তি হয়ে গেল!"
কেউ শোনে, কেউ শোনে না। যারা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে
যায় তাদের হাত ধরে কেউ না কেউ বসিয়ে দেয়। যারা তাও দু'পা হেঁটে বাড়ির দিকে যায়, তাদের
চোখ রাঙিয়ে রাজার পেয়াদা জেলে ভরে দেয়। কেউ কেউ বলে বাড়ি যাওয়ার পথে হোগলা বনে বন্দুক
হাতে বসে আছে রাজার অনুচর; গেলেই গুলি।
যারা তাও উঠে আসে তাদের অনেকেই ফেরে না। যারা
ফেরে তাদের কথা বেশির ভাগ লোকেই বিশ্বাস করে না, বলে, নিন্দুকের দলে ভিড়ে এসব বকছে!
তো হল কি, তারা বসেই থাকল। বসেই থাকল। ঘরদোর
সব কিছুতে ঘাস গজালো। চাষের জমিতে দশ মানুষ প্রমাণ ঘাস উঠল। বিদ্যালয়ের প্রতিটা শ্রেণীকক্ষে
দশ প্রজন্ম গরুতে ছেয়ে গেল। গ্রামের লোক 'হাঁ' করে আকাশের দিকে চেয়ে থাকল। নিন্দুকেরা
হাঁ-করা গ্রামবাসীর দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল। রাজা আর মন্ত্রী গান গেয়ে গেয়ে
সারা গ্রাম ঘুরে বেড়াতে লাগল, আর বলতে লাগল.... "ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি মোদের গ্রামে
এসো... বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেব প্রাণ ভরে খেলো...."