Skip to main content
 
 
       তখনও ঈশ্বর ভগবান হয়ে ওঠেননি। আকাশটা রঙ করা হচ্ছে। উনি একটা গামছা কোমরে জড়িয়ে তদারকি করছেন। জল ঢেলে ঢেলে সমুদ্র নদী খালবিল বানানো হয়ে গেছে। মাটি চেলে চেলে পাট পাট করে সমভূমি বানানো হয়ে গেছে। চেলে যে বালিগুলো বেরিয়েছে তা দিয়ে মরুভূমি বানানো হয়ে গেছে। পাথর সাজিয়ে পাহাড় বানানো হয়েছে। 
       এইবার গাছ লাগানো হবে। বীজগুলো মাটিতে শুকোতে দেওয়া আছে। শিকড় হব হব করছে। অঙ্কুরটাও ফুটল বলে। 
       এবার কিছু প্রাণী আসবে ডাঙায়। ততদিনে গাছগুলো বড় হয়ে যাবে। সমুদ্রের তলায় কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী ছাড়া হয়েছে। সেগুলো বড় হচ্ছে। ঈশ্বর অপেক্ষায় আছেন মানুষের। কিন্তু মানুষ আসার আগেই তাঁকে ভগবান হয়ে উঠতে হবে। অনেক অঙ্ক হিসাব কষে দেখেছেন, মানুষ আসতে এখনও বেশ কয়েক লক্ষ বছর দেরি। কিন্তু সেও বা কি, দেখতে দেখতেই কেটে যাবে। 
       ঈশ্বর আকাশের রঙ দেখতে দেখতে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছেন। বাতাসে হাতটা ভাসাতে ভাসাতে বলছেন, সব সময় ঝড় হবি না। বললেই থেমে যাবি। সমুদ্রের ঢেউকে বললেন, তোকেও বললাম, মনে রাখিস। এইসব বলতে বলতে অনেকটা দূর হেঁটে এসেছেন। একটা মালভূমির মাথায় দাঁড়িয়ে। দুটো হাত দু'দিকে প্রসারিত। চোখটা বন্ধ। হাওয়া সারা গায়ে বুলিয়ে যাচ্ছে আদর। হঠাৎ মনে হল ডান হাতের উপর কিছু সুড়সুড় করছে। চোখ মেলে তাকালেন, একটা ছোট্টো নীল পাখি। তাঁর দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। তিনি সামনে তাকালেন। দেখলেন নানা রকম প্রাণীতে উদ্ভিদে ভরে গেছে চারদিক। গাছেদের মধ্যে কেউ লতানো, কেউ বৃক্ষ, কেউ ফুল ফুটিয়েছে, কেউ ফোটায়নি, কেউ উঁচু, কেউ ছোটো। প্রাণীরাও নানারকম। কেউ হামাগুড়ি দিচ্ছে, কেউ লাফাচ্ছে, উড়ছে। কতক্ষণ চোখ বন্ধ রেখেছিলেন? তবে যে মানুষ আসতে আর বেশি দেরি নেই! আনন্দে তাঁর চোখে জল এলো।
 
       এই কথাগুলোই তিনি আবার ভাবছিলেন ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সময়। তারপর অনেক রাতে কয়েকটা পেরেক নিয়ে চলে গিয়েছিলেন, একা। সেই পেরেকগুলো সবসময় সাথে রাখেন। তাঁর খুব কাছে কোনো মানুষ গেলে তার হাতে দিয়ে দেখতে বলেন, আর বলেন, দেখো একটাতেও জং ধরেনি। 
       আমি কি করে জানলাম? এই তো ক'দিন আগে অমুকের মা সেই অমুকের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মারা গেল বৃদ্ধাবাসে। তো তাকে যখন শোয়ানো ছিল একটা সাদা চাদর ঢেকে মাটিতে, আমি দেখলাম তো, একজন পাগল এক মুঠো ঝাঁ চকচকে পেরেক হাতে বলছে, দেখো না... দেখো...