Skip to main content

বসার ঘরে টিমটিমে আলো জ্বলছে। জানলায় নেট লাগানো। একটু আগে ধুপকাঠি জ্বলছিল হয়ত, ঘরটা একটু ধোঁয়া ধোঁয়া। মিষ্টি গন্ধ।
      বড় ঘরটা বেশ। মিঠু আর প্রদীপ চেয়ারে বসে। তাদের মাথার উপরের ফ্যানটা বন্ধ। ওদিকে পাত্রপক্ষ, ছেলের বাবা-মা, মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে।
      মিঠু অফিস থেকে সোজা লিলুয়া বাসস্ট্যান্ডে নেমেছে। প্রদীপ দাঁড়িয়েছিল, মিঠু'র বোনের জন্য পাত্র খোঁজা চলছে।
      মিঠুর ঘামে ব্লাউজটা ভিজে চাপ হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছা করে দু'বার উপরের দিকে তাকালো। কিন্তু খেয়াল করা হল না, সেও জোর করেই, মিঠু বুঝল। সামনের টেবিলে চা ভর্তি দুটো কাপ, ডিশে চারটে সন্দেশ, পাশে চানাচুর ভর্তি দুটো প্লেট।

- মেয়ে এম এ-টা পুরো করল না কেন?
- বাড়িতে কিছু অসুবিধা ছিল তাই...
      মিঠু বলল। মায়ের শরীর খারাপ চলছিল, বলতে পারত, তাই বলে, বলতে ইচ্ছা করল না। মেয়ের মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে গলাটা টানটান করে বসল মিঠু।

- মেয়ে রাঁধতে পারে?
- ওই ঘরোয়া কিছু
- অ...
      ছেলের বাবা ডান হাতের কড়ে আঙুলের নখ খেতে খেতে পা দুলিয়ে দুলিয়ে মিঠুকে দেখছে। মিঠুর অস্বস্তি হচ্ছে, কারণ ঘাম। ঘাম ভীষণ অসামাজিক।

- আমরা পুরো নিরামিষ, মেয়ে মানিয়ে নিতে পারবে তো?
      মিঠু হাসল। প্রদীপ রেগে যাচ্ছে বোঝাই যাচ্ছে। ও রেগে গেলে স্টিফ হয়ে, ডানদিকে কাত হয়ে বসে। মাঝে মাঝে গলা খাকারি দেয়। রাগ গিলছে।

- আমার ছেলের কোনো নেশা নেই, মেয়ের?
      ছেলের মায়ের কাষ্ঠ হাসি। প্রদীপ অস্ফুটে বলল, বাল।

- বাবু তো মা বলতে অজ্ঞান? তা তোমার বোন এসে মা-ছেলের মধ্যে বিভেদ বাধাবে না তো?
      আবার ছেলের মায়ের কাষ্ঠ হাসি। ছেলের বাপ গুনগুন করে গান গাইছে। সুর শুনে মনে হচ্ছে শ্যামাসংগীত। আবার পাশ থেকে, বাল।
- ছেলে কিন্তু বউ নিয়ে যাবে না... ও তো আমাদের মুখ চেয়েই বিয়েটা করছে... নইলে ছোটোবেলা থেকে রামকৃষ্ণ মিশনে যাতায়াত তো, ওইভাবেই বড় হওয়া, মহারাজরা যা ভালোবাসে ওকে। ওনার তো বাইরে বাইরেই পোস্টিং ছিল, ব্যাঙ্কের এত উঁচুপোস্ট বুঝতেই পারছ... আমিই মানুষ করেছি ছেলেকে... ছেলে মুরাদাবাদে একটা ছোটো ঘরে থাকে… আবার ঘর নেবে... প্রাইভেট ফার্ম বুঝতেই পারছ... এখন তো জমাতেই হবে.... পরে আমরা যখন থাকব না....
- আমরা তো বোনের বিয়ে দেব না
      প্রদীপ বোম ফাটার মত ফাটে না, হাউই বাজির মত উড়ে যায় হুস করে।
      ছেলের বাবার গান থামল, মানে?
- ওর বিয়ে তো ঠিক হয়ে গেছে, আপনাদের ফোন পাওয়ার দুদিন পর, আপনাদের এক প্রতিবেশী আমার বন্ধু, বলল যা এমন চান্স মিস করিস না, অদ্ভুত জীব...দেখে আয়… তাই আরকি… আইনক্সেই যাই এই লিলুয়ায়, তা মিঠু বলল, চলো... তাই আর কি...
      সরু অন্ধকার বারান্দা ছেড়ে যখন বাইরে এল দু’জন তখন সন্ধ্যে হব হব। প্রদীপ বেরিয়েই একটা সিগারেট ধরালো, মিঠু পেটে একটা হাত দিয়ে হেসেই যাচ্ছে, তার চারমাস চলছে এটা... হঠাৎ হাসির দমক থামিয়ে প্রদীপকে জিজ্ঞাসা করল, ক'টা উপড়ালে...
      প্রদীপ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, আর বোলো না মাইরি, কেন যে তোমার বোন একটা প্রেম করতে শিখল না… কি সব আইটেম মাইরি....
      মিঠু হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল... পেটে হাত দিয়ে বলল, মেয়ে হলে ছোটোবেলাতেই পটানো শিখিয়ে দেব বুঝলে… নইলে শালীর বিয়ে দিতেই যে ক'টা উপড়িয়েছ, মেয়ে অবধি বাকি থাকবে না....
      প্রদীপ বলল, অসভ্য কথা বোলো না, ও শিখবে...
      মিঠু বলল, শিখেই জন্মাক...