Skip to main content

দুঃখ পেলে কী করো?

আজ্ঞে রিল দেখি।

আরো দুঃখ পেলে কী করো?

আরো রিল দেখি।

আরো আরো আরো দুঃখ পেলে কী করো?

আজ্ঞে আরো আরো আরো রিল দেখি।

বেশ। আর যখন রিল দেখো না, তখন? জগৎ অনিত্য, পরিবর্তনশীল ভাবো?

হ্যাঁ। যারা যারা হাড়মজ্জা জ্বালিয়েছে তারা মরে যাচ্ছে ভাবি। এখন অল্প সুখ, এ পরিবর্তন হয়ে আরো সুখ আসবে ভাবি।

বেশ বেশ। নিজের মৃত্যু নিয়ে ভাবো?

না। না ভাবলেও যা হবেই, তা নিয়ে তো ভাবার কোনো কারণ দেখি না।

বেশ বেশ। নির্বাণ চাও না?

আলবাত চাই। ঘাম নেই। দুশ্চিন্তা নেই। সুগার ফল নেই। হেডেক নেই। ম্যালিগন্যান্ট টিউমার নেই। ট্যাক্স নেই। বিল নেই। আহা! কে না চায়!

এই কী নির্বাণ! এই বুঝেছ?

আজ্ঞে এর বেশি ভাবতে লজ্জা লাগে। মানুষের তো একটা বিবেক থাকা দরকার নাকি!

তাও বটে। বেশ বেশ। তা চাও কী? হঠাৎ এই বুদ্ধগয়ায় এই বোধিবৃক্ষের তলায় বসেছ কেন?

আজ্ঞে, বড় গরম। এইখানে যা একটু ছাওয়া। তা ছাড়া আপনার নাম তো সেই কবে থেকে শুনে আসছি। তাই…যদিও আমি হিন্দু! মায়ের ভক্ত! মা, বুঝেছেন? তারাপীঠ ছিল আপনার টাইমে? মায়ের ওখানে যাই। মায়ের প্রসাদ পাই। মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। ব্যস, আর ওসব নির্বাণ নিয়ে কী করব মশায়….

======

গয়া স্টেশান। রাতের ট্রেন। প্রায় এগারোটা বাজে। দু ঘন্টা লেট ট্রেন। খাওয়াটা বেশি হয়ে গেছে। মা বাবার পিণ্ডি দিতে আসা। একাই আসা।

বউয়ের ফোন এলো। “এই জানো…পরেশদা চলে গেলেন….”

ফোনটা পকেটে ভরে চোখটা বন্ধ করে বসল। পরেশ, তার পারিবারিক শত্রু। কম বাণ মারেনি পরেশকে তান্ত্রিক দিয়ে। হাজার টাকার যজ্ঞ করে ওর ব্যবসা ডুবিয়েছে। পক্ষাঘাতে পড়েছিল। মরে গেল!

মনে মধ্যে হঠাৎ বোধিবৃক্ষের পাতাগুলো ঝরঝর করে কেঁপে উঠল। চোখ খুলে তাকাল। সামনে পরেশ দাঁড়িয়ে। কী চেহারা!

ভূষণের চোখে জল এলো। পরেশ তার দিকে তাকিয়ে। স্থির চোখে তাকিয়ে। ভূষণ হাঁটু মুড়ে বসে প্ল্যাটফর্মে। হাতজোড় করে তাকিয়ে পরেশের দিকে। সে যে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেল। শত্রুতাও তো একটা সম্পর্ক। কিন্তু তার জন্যেও তো ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকতে হয়।

পরেশ কিছু বলল না। মিলিয়ে গেল।

ভূষণের সব ব্যর্থ লাগছে। এত টাকা। এত সৌভাগ্য। এত যাগযজ্ঞ সব মিথ্যা লাগছে। পরেশ সত্যিই চলে গেল! এত ভঙ্গুর সব! এত মিথ্যা! এত অল্প ক্ষমতা মানুষের! ওপারে গেলে সব ক্ষমতা, সব কারসাজি জিরো!

======

ভূষণ হাওড়ায় নামল। চাদ্দিকে কী ভিড়! শহরের মধ্যে, মানুষের মধ্যে একটা নেশা আছে। ভূষণ সেই নেশাকে দেখছে নিজের মাথায়। আবার জন্মাচ্ছে। সব ঢেকে দিচ্ছে। শুধু আমি। আর আমি।

ভূষণ গয়া স্টেশানে বসে যে আমিটায় ছিল, তাকে খুঁজছে। পাচ্ছে না। এ তো শহুরে আমি। বজ্জাৎ আমি। নষ্ট আমি। কিন্তু এই এসেছে সঙ্গে। ওই আমিটা কোথায়?

গাড়ি চলছে কলকাতার রাস্তায় এঁকেবেঁকে। এত বাঁক। এত বাঁক। এতক্ষণে পরেশকে দাহ করা হয়ে গেছে। কী ভঙ্গুর সব! সব ব্যর্থ। মিথ্যা। জঞ্জাল।

======

গাড়ি এসে দরজায় দাঁড়ালো। বউ এসে বলল, এসো। কী যে হল, পরেশদা…..

ভূষণ বলল, বেশ হয়েছে শালার! এটাই তো চেয়েছিলাম অ্যাদ্দিন!

=====

শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে ভূষণ। ল্যাংটো। সামনে দাঁড়িয়ে পরেশ। ল্যাংটো। ভূষণ স্তম্ভিত তাকিয়ে। তার জিভ, মন, বুদ্ধি এমন বিষে অভ্যস্ত যে সে চাইলেও আর বদলাচ্ছে না। তার নিজেরই তৈরি অভ্যাস। অভিশাপ দেওয়ার অভ্যাস। অনেক পুরোনো অভ্যাস। পরেশ কী চায়? জানে না। কিন্তু পরেশের কাছে সে চায়। ক্ষমা! কেন? নইলে সামনে কোনোকিছুরই কোনো মানে পাচ্ছে না যে!

=======

ভূষণ স্নান করে বাইরে বেরিয়ে এসে বলল, আমি পরেশের বাড়ি যাব।

বউ বলল, ওরা ঢুকতে দেবে না। অপমান করবে।

ভূষণ এটাই শুনতে চেয়েছিল। এটা শুনেই এই অজুহাতে যাবে না ঠিক করেছিল। বউকে ঢাল করে রেখে বোধিবৃক্ষের সামনে। নিজেকে বাঁচিয়ে।

কিন্তু পা এগিয়ে দরজার দিকে চলে গেল। জিভ বলল, তবু যাওয়াটা উচিৎ….

ভূষণ দেখল তার মধ্যে একটা বিদ্রোহ জন্মাচ্ছে। শান্তির জন্য। ক্ষমার জন্য।

========

বাড়ির সামনে একটা এতবড় অশ্বত্থগাছ আছে আগে খেয়াল করেনি। তার একটা পাতা মাটি থেকে কুড়িয়ে পকেটে নিল। এগোলো।

বউ বলল, কী পড়েছিল?

ভূষণ বলল, বোধ।