পার্থক্য শুরু হয় পেন্সিল বক্স আর টিফিন বক্সের মান থেকে। তারপর টিফিন বক্সের ভিতর খাদ্যের মান, প্রকারভেদ থেকে। তারপর ইউনিফর্ম হলে কাপড়ের মান থেকে। সাইকেলের মান থেকে, বেল্টের মান থেকে।
তারপর আসে মেধার হায়ারার্কি। মধ্যমেধা, নিম্নমেধারা হলঘরের চেয়ারে বসে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান দেখে। নিজেকে দেখে। নিজের মেধার অক্ষমতা দেখে। দূরত্ব মাপে। যেন পাঁচিল তোলা চারদিকে। পাঁচিল ডিঙানোর মত অত উঁচু মই কই তার?
উপায় আছে, মন দাও। আরো মন দিয়ে পরিশ্রম করো। কেউ কেউ পারে মন দিতে। কেউ কেউ পরিশ্রম করে এগিয়ে যেতে পারে। অনেকেই মন দিতে পারে না। কি করে মন দেয়? কোনো কৌশল কেউ জানে না। সবাই শুধু বলে, মন দাও। মন যদি পেন-পেন্সিল হত এখনি হাতে করে দিয়ে দিতাম। মন যদি পাথরের মত ভারি হত, নিশ্চল হত তবে অনায়াসে বইয়ের অক্ষরগুলোর উপর বসিয়ে রাখতাম। তবু কেউ কেউ পারে। কি করে পারে সে নিজেও জানে না, সে শুধু জানে সে পারে। অনেকেই পারে না।
অনেক পার্থক্য। সাম্য কোথায়? ফাঁকা আশ্বাসের তুবড়ি জ্বলতে যতক্ষণ নিভতেও ততক্ষণ। জ্বলন্ত তুবড়িই ভালোবাসে সমাজ। তারপর লাথি মেরে ভাগাড়ে ফেলে দেয়। সবার তুবড়িতে তো এত বারুদ থাকে না।
কিন্তু কেউ খোঁজ নেয় না, সে পড়ুয়া ছাড়া আর কি হতে পারত? কেউ জিজ্ঞাসা করে না। অক্ষরমালার বাইরে যে তার মন কোথাও কোথাও ঘুরে বেড়ায়, একটা ছোটো বাসা বেঁধে ঘর করে, হোক সে খেলাঘর, কেউ খোঁজ নেয় না। মান দেয় না। ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিতে চায়। যেন সে এক বালাই, গেলেই হয়। তবে তার জন্য শিক্ষায়তন কোথায়? তার শিক্ষক কোথায়? যে ছাপাখানার বাইরের জগতকে চেনে? কেউ খুঁজে পায় না। শুধু পাখিটা মরে না। তার ভিতরে কাগজগুলো খসখস গজগজ করে না। সেই কাগজের স্তূপেই কৃত্রিম কলতান তোলে। তারা "শিখানো গান" শিখে "বনের গান" ভুলে যায়। ইচ্ছা করেই ভুলে যায়। খাঁচার বাইরে আসে। খাঁচার গুণগান করে। আরো পাখির শাবককে সে খাঁচায় আনার জন্য প্রকল্প বানায়। দেশ সোনার খাঁচায় শিক্ষিত হয়ে ওঠে। শুধু কিছু পাখি বন্যই থেকে যায়। ব্যর্থতার শিরোপা সমাজ থেকে পায়। সে শিরোপাকে খ্রীষ্টের ক্রসের মত বহন করতে করতে, রক্তাক্ত হতে হতে, রাস্তায় দাঁড়ানো সফল মানুষদের বিদ্রুপ উপেক্ষা সহ্য করতে করতে মনে মনে বলে, আমার জন্য কি কোনো বিদ্যালয় বিশ্বজুড়ে কোনোদিন হবে না?