Skip to main content

ছবি তুলতে জানেন? আমাদের একটা ছবি তুলে দেবেন? এই, এই যে, এই বোতামটা চিপলেই খচ্ করে আওয়াজ হবে, হ্যাঁ হ্যাঁ, এইভাবেই, দেখবেন পিছনে ঝর্ণাটা যেন আসে…

স্বামী-স্ত্রী পাশাপাশি দাঁড়ালেন, সজনীবাবু ছাতাটা দুই পায়ের ফাঁকে হাঁটুদুটো দিয়ে চেপে লেন্সে চোখ রেখেই 'আঁক্' করে উঠলেন।

ভদ্রলোকের পাশে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?

ভদ্রলোক ওখান থেকে চীৎকার করে বললেন, কি দেরি করছেন মশায়, শাটারটা চিপুন না….

শাটার চিপে, ক্যামেরা হাতে দিয়ে, ছাতা না খুলেই দৌড় লাগালেন সজনীবাবু। কেন হল এরকম?

হোটেলে এসে চোখেমুখে জল দিয়ে বসলেন। ঘামছেন। এদিকে রুমে পাখাও নেই। থাকলে স্পিডটা বাড়িয়ে শুয়ে পড়তেন। তবে কি ভুল দেখলেন?

যা হোক, সারাদিন হোটেলেই গড়িয়ে, হোটেলেই খাবার আনিয়ে, বেশ খাসা একটা দিবানিদ্রা দিয়ে রাস্তায় বেরোলেন। হেঁটেই ঘুরবেন। পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে বেশ লাগে। পদে পদে রহস্য।

একটা ফাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন সজনীবাবু, পাশে লম্বা লম্বা পাইন গাছের সারি। ঝিঁঝি ডাকছে। সজনীবাবুর ইচ্ছা একটা গান করেন। যদিও এই চড়াই-উতরাইতে দমের অবস্থা খারাপ। তবু মানুষ চাইলে কি না পারে। সজনীবাবু গান ধরলেন, শ্যামা মা কি আমার কালো রে…. শ্যামা মা কি আমার কালো…

হঠাৎ হাওয়ায় এক নারীকণ্ঠ বলে উঠল, শ্যামা কালো হবে না তো কি মেরীর মত ফর্সা হবে? আ গেল জ্বালা!

থমকে দাঁড়ালেন সজনীবাবু। ডান কানে তর্জনী ঢুকিয়ে কয়েকবার নাড়া দিলেন। কি হল কেসটা? কে বলল?

আরে আমি গো আমি….

সজনীবাবুর মুখটা হাঁ। হাতের থেকে ছাতা রাস্তায় পড়ে গড়াচ্ছে। সজনীবাবুর সামনে দাঁড়িয়ে সেই ভদ্রলোকের স্ত্রী!

তিনি ফস্ করে সজনীবাবুর হাত ধরে বললেন, এই এদিকে একটু জঙ্গলে এসো না গো… দুটো কথা আছে….

সজনীবাবু খেয়াল করলেন হাতটা বরফের ইলিশের মত ঠাণ্ডা। সজনীবাবু কেঁদে ফেলে বললেন, আমার ঘাড় মটকাবেন না… দেখুন প্লিজ… আমি মরে গেলে আমাকে দেখার কেউ থাকবে না… আমি সংসারে এক্কেবারে একা..

ভদ্রমহিলা বললেন, আমি কুসুমকলি। এই শোনো না, আমার একটা কাজ করে দেবে প্লিজ…., বলতে বলতে ভদ্রমহিলা সজনীবাবুকে নিয়ে ঘোর পাইনের জঙ্গলে উপস্থিত। চারদিকে ঝিঁঝি ডাকছে। কি ঘোর লাগা অবস্থা!

সজনীবাবু রুমালে চোখ মুছে বললেন, কি বলুন?

কুসুমকলি বললেন, না… আপনি-টাপনি না… বলো… বলো

সজনীবাবু বললেন, বেশ বেশ… যদিও আপনি অন্যের স্ত্রী…

সে তো ছিলাম… কিন্তু গতকাল রাতেই আমি আসলে হার্ট অ্যাটাক করে মরেছি… কিন্তু ওকে জানতে দিতে চাইছি না…

ধুর... এরকম হয় নাকি…, সজনীবাবু মৃদু প্রতিবাদ করে বললেন।

সব হয়। ওই যে দূরে দেখো… আহা, এইদিকে… কি দেখছ?

রাস্তা….

আরে ধুর, বাইকে একজন বসে দেখছ না?

সজনীবাবু বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ বুলেটে বসে..

কুসুমকলি লজ্জা পেয়ে বললেন, কি হ্যাণ্ডসাম না গো?….

সজনীবাবুর মনে ঈর্ষার লাল পিঁপড়ে কামড়ালো… বললেন, সে তো বটেই…

ও যমদূত জানো… আমায় নিতে এসেছে…, এই বলে কুসুমকলি লজ্জায় ঠোঁট কাটলেন দাঁতে….

সজনীবাবু বললেন, তা যান…

কুসুমকলি বললেন, আরে ধুর… আমার ওর কি হবে? ওই ছেলেটা অ্যাপ্স দেখে বলেছে ওর এখনও দেরি আছে….. তা তুমি একটা উপকার করো না…. আমি আমার বরকে নিয়ে আসব ওই খাদের ধারে… তুমি একটু টুক্ করে ওকে ঠেলা দিয়ে দেবে প্লিজ…. আমি আর ও একসঙ্গে ওর বাইকে চলে যাব…

সজনীবাবু বললেন, একদম না... আমি ওসব পারি না….

কুসুমকলির মুখের ভাব পালটে গেল। বলল, থাক। আমি সব জানি। অনেক রিসার্চ করে তবেই আমি এখানে এসেছি। মালতী বাইরে আয়।

সজনীবাবুর মনে হল নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাচ্ছে। প্যান্ট ভিজছে। সামনে দাঁড়িয়ে একি সত্যি?

মালতী! সেই কবে এই মুসৌরিতেই পাহাড়ের কোলে এক সন্ধ্যেবেলা ধাক্কা দিয়েছিলেন…

মালতী বললেন, দেখো তুমি যখন সন্ধ্যাকে নিয়ে সুখী হয়েচ, আমি আর কিছু চাইনাকো…সে তুমি আমায় পথের কাঁটা ভেবেচ…. ধাক্কা মেরেচ…. ভালোই করেচ… নইলে কি আর আমি ওকে পেতাম…., এই বলে মালতী সেই যমদূতকে দেখালো….

সজনীবাবুর পৌরুষ সজনীবাবুর সামনেই আত্মহত্যা করল। সজনীবাবু বললেন, আমি ধাক্কা দেব। নিজেও পড়ব।

মালতী চীৎকার করে বলে উঠলেন, না না প্লিজ… তুমি আমার এমন সর্বনাশ করতে পারো না, জীবনে এই প্রথম আমি যমের ঘরে সুখের মুখ দেখেছি… তুমি কেড়ে নিতে পারো না….

সজনীবাবু চুপ। মালতী চুপ। কুসুমকলি চুপ। শুধু ডাকছে ঝিঁঝিপোকা।

কুসুমকলি বললেন, আমি চললাম। তুমি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমায় জানাবে। আমি রাতে হোটেলে আসব।

গল্পের শেষে কি হয়েছিল আমার জানা নেই। তবে শুনেছি নাকি সজনীবাবুকে আর কোনোদিন কেউ দেখেনি ইহলোকে।