Skip to main content

সিধু একটা সিগারেট প্যাকেট একজন খদ্দেরকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল, একটা খুনও তো করতে পারিস… তবে তো আর এরকম রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে বেড়াতে হয় না রে ভর দুপুরে…..

পচা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, যা বলেছেন। খুন-ডাকাতি করে মাথার উপর ছাদ, চানের জল, দু'বেলা খাবার পাওয়া যায়। আর কিছু না করে….

পচা দুটো টাকার একটা কয়েন নিয়ে বলল, আসি দাদা… আবার পনেরো দিন পর।

পচা এসে মাঠে বসল। মুড়ি চানাচুর খেতে খেতেই ঘুম এসে গেল। ঘুমিয়েও গিয়েছিল… হঠাৎ মনে হল কে যেন ডাকছে।

দাদা এদিকে ধানগাছ আছে?

ভিখারিকে দাদা!

পচা ধড়মড় করে উঠে বলল, আছে… ওদিকে..

বাড়িতে কাল লক্ষ্মীপুজো.. আপনি আসবেন?

পচা চোখটা কচলে ভালো করে দেখল। একটা লোক, কাঁচাপাকা দাড়ি, চোখে চশমা, বেজায় রোগা। মুখটা হাসি হাসি। এত হাসি কিসের? পাগল?

না না পাগল নই… আমার নাতনিও এসেছে.. মান্তু?... এসো মা, দেখো কাকা একজন….

একটা লাল ফ্রক পরা বাচ্চা মেয়ে এসে বলল, কাকা তোমার বাড়ি কোথায়?

পচার মাথাটা টাল খেয়ে গেল। বাড়ি? ভিখারিকে কেউ বাড়ি জিজ্ঞাসা করে নাকি?

পচা বলল, সে অনেক দূর…

মেয়েটা বলল, আমাদের বাড়ি কাছে, এসো, আসবে?

পচা 'হ্যাঁ' বা 'না' কিছুই বলল না। আসলে জানে না কি বলবে। এরা কি সবাই পাগল?

দাদু এক আঁটি ধান তুলে এনে বলল, আপনার ভাগ্যে পেলাম। নইলে আবার ঘাস নিয়ে বাড়ি যেতাম। বউ যা বকত!

মেয়েটা কাশবনে ঢুকে গেল। কাশবন থেকে ডাকল, দাদু… কাকা… এদিকে এসো… দেখে যাও কি….

তারা দৌড়ে গেল। পচা সাধারণত দৌড়ায় না। হাঁফ ধরে গেল।

কাশবনে মেয়েটা বসে। হাতে একটা পিতলের লক্ষ্মী। দাদু বলল, বাহ! এতো দারুণ হল… আমায় আর কিনতে হবে না রে…. আহা কি চোখমুখ…

পচা দাদু-নাতনিকে রেখে বেরিয়ে আসতে যাবে…হঠাৎ দাদু পিছন থেকে এসে বলল, এ লক্ষ্মী বুঝি আপনার?

পচা বলল, আমি ভিখারি… আমায় দেখে বোঝেন না? কানা নাকি?

দাদু থমকে গেল। বলল, আমরা তো সবাই ভিখারি। নইলে ঠাকুরের সামনে অত দেহি দেহি কেন? এতে রাগের কি আছে…তা এ মূর্তি তোমার না?

পচা একটু নরম সুরে বলল, না।

অকারণে রেগে লাভ নেই। এরা সব বদ্ধ পাগল।

নাতনি এক গুচ্ছ কাশফুল পচার হাতে দিয়ে বলল, সোজা যাও…. বাঁদিকে গিয়ে ডানদিকে ঘুরবে। বড় একটা বটগাছ পড়বে। ওর নীচে আমাদের বাড়ি। লাল রঙের। গিয়ে এটা রেখে এসো তো।

পচা দেখল এই সুযোগ। এই ফাঁকে পাগলগুলোর কাছ থেকে ছাড়া পাওয়া যাবে।

যেমন বলা তেমন এসে দাঁড়ালো বটগাছের তলায়। বাড়ি কই? এতো মন্দির! সাধে কি বলে পাগল!

মন্দিরে ঢুকল। শিবের মন্দির। কাশগুলো রেখে বলল, নাও। নিজে পাগল, দুনিয়া শুদ্ধ পাগল বানিয়েছ।

এই বলে ফিরছিল, হঠাৎ কি মনে হল, পকেট থেকে কয়েনটা বার করে বলল, নাও… খালি তো চেয়েই গেলাম সারা জীবন…. মুড়ি কিনে খেও….

বেরোতে যাবে, এমন সময় দৌড়াতে দৌড়াতে একজন ঢুকল… ঢুকেই তাকে দেখে বলল, কই?

পচা চোখ কপালে তুলে বলল, কই মানে? কি কই?

সে বলল, আরে আমি মন্দিরের পুরোহিত, বাবা আমায় স্বপ্ন দিয়ে বলল, তুমি নাকি লক্ষ্মী পেয়েছ? কই?

পচা বলল, কই মানে? সে তো কাশবনে…

পুরোহিত বলল, যাও না লক্ষ্মীটি… আমি পুজোর জোগাড় করি ততক্ষণ….

পচা বলল, আমায় দেবে কেন? ওটা তো ওদের…

পুরোহিত বলল, কথা বাড়িও না ভাই… যাও না… বাবা বলেইছিল তো ওটা তোমার… তুমি বোঝোনি….

পচার মাথাটা টাল খেল। দুনিয়াশুদ্ধ সব পাগল বাবা.. তুমিও পাগল… জগতজোড়াও পাগল…. চিনব কি করে বলো…

কাশবন ফাঁকা। লক্ষ্মীমূর্তিটা পড়ে আছে। হাতে নিল। সারা কাশবন ধানের গন্ধে ম ম করছে। পচা মূর্তি নিয়ে মন্দিরে এলো। পুরুত তাকে এক থালা খিচুড়ি দিল। বলল, বসে খাও।

পচা বসল মন্দিরের এক কোণায়। খিচুড়ি আর কান্না একসঙ্গে গিললো। খাওয়া হল। উঠে বেরোতে যাবে, পুরোহিত বলল, কাল পুজো আছে। এসো। আর শোনো….

পচা দাঁড়ালো….

পারলে একটু মুড়ি চানাচুর মেখে এনো বাবার জন্য…. বাবা বলছিল…

পচা হাঁ করে তাকিয়ে…. কি বলে? বিশ্বেশ্বর তার কাছে মুড়ি চানাচুর খাবে?….

পুরোহিতের চোখের কোণা চিকচিক করে উঠল… বলল, বাবা আমার জগত ভিখারি জানো না?