Skip to main content

- হ্যাঁ দাদা, বেরোবে না?
- ওরা রেডি?
- হ্যাঁ তো, বৌদি, দুই ছেলে সব রেডি, ওঠো, এরপর ফ্লাইট মিস করবে যে...
- হুম... তোর বৌদিকে একবার পাঠিয়ে দে তো...


- হ্যাঁ গো ডাকছিলে?
- হুম, একটু বোসো তো...
- কাল রাত্তিরেও ঘুমাও নি, তুমি ঠিক আছ তো?
- না গো... আচ্ছা তোমার মনে হচ্ছে না কিছু একটা ভুল হচ্ছে কোথাও?
- কি নিয়ে বলছ?
- এই যে আমরা যে উৎসবে যাই, সেখানে একটা গোলমাল হচ্ছে কোথাও?
- কেন তুলসী কিছু বলেছে?
- না, তুলসীও না, রত্নাও না, কেউ কিছু বলে নি, আর ওরা বলবেই বা কত, কেউ শুনলে তো...
- কি করবে, এবারটা ছেড়ে দেবে? যাব না?
- সেটা কি ভালো দেখায় গো... দেখি, তুমি একবার শম্ভুদার নাম্বারটা লাগাও তো...


- হ্যাঁ বলো... কি হয়েছে, বেরোওনি এখনও?
- না দাদা, কেমন একটা খটকা লাগছে...
- বুঝেছি, আমিও কাল গিন্নীকে বলছিলাম... যা হোক এ সবই সাময়িক, কিন্তু যাওয়াটা দরকার বুঝলে...


- নাও ফোনটা... আচ্ছা তুমি বলো তো... আমাদের জীবনে আমরা প্রাধান্য কিসে দিয়েছি...
- আমার তো মনে হয় কর্তব্যে...
- দেখো আমার সমালোচনা হয়েছে... আমার বালির কেসটার স্ট্র্যাটেজী নিয়ে... সে রাজতন্ত্রে সমালোচিত হতেই হয়... তারপর তোমার শেষ ডিসিশানটার জন্যেও আমাকে অনেকে দায়ী করে... সে থাক... আমি কোনো কৈফিয়তে যাব না... কিন্তু আমি ভেদবুদ্ধি রেখেছি, মানে আর কি দলতন্ত্র তৈরি করেছি এমন উদাহরণ কই?
- না তা করোনি
- তুমি দেখো, আমরা যখন চিত্রকূটে ছিলাম, কত আদিবাসীর সাথে রেগুলার আমাদের মিট হত, ওরা ভিজিট করতে আসত, আমি কোনো ডিসক্রিমিনেট করিইনি কোনোদিন... তবে আজ এসব ...


- দাদা, তুলসীদা এসেছেন... সাথে কবীরদাও...
- আরে আরে ভিতরে আসতে বলো...


তুলসী এসে গড় হয়ে প্রণাম করলেন, কবীর দূরে দাঁড়িয়ে মিটমিট হাসতে হাসতে হাতজোড় করে বললেন, প্রণাম জানবেন।


- আমায় আপনার অনুজ বললেন একবার আসতে, আমি তাই কবীরদাকে সাথে নিয়ে এলাম। উনি আমার থেকে ভালো যুক্তিতে কথা বলতে পারেন। আপনি তো জানেন আপনাকে দেখলেই আমি কেমন বিহ্বল হয়ে যাই, চোখ ঝাপসা হয়ে আসে...
- ঠিক আছে, ঠিক আছে, তুমি যে এসেছ তুলসী আমি তাতেই কৃতার্থ, কবীর বসুন।
- দেখুন আমি জোলা, তাঁতি, আপনাকে আমি কোনোদিন শারীরিকভাবে দেখিনি, কিন্তু তাতে আমার আপনার উপর শ্রদ্ধা কমেনি। আমার বারবার মনে হয়েছে শিখা আর আলোর বৃত্তে কোনো ভেদ নেই। তুলসী শিখার উপাসক, আমি আলোর বৃত্তের। একই তো না?
- সে তো নিশ্চয় ভাই... কিন্তু আমিও তো বলি তবে আজকে এমন কেন হচ্ছে? আচ্ছা তুলসী তুমি বলো তো, আমার স্বভাবের বর্ণনা করতে গিয়ে তুমি কোনটা আমার সবচাইতে প্রিয় বলেছ...?


কবীর বললেন, প্রভুকো প্রেম সবসে প্যায়ারা... আপনার ভালোবাসার উৎসব সব চাইতে প্রিয়...
তুলসী হাসলেন... বললেন, তুমিও দাদা তাই বলেছ... ঢাই অক্সর প্রেম কে পঢ়ে সো পণ্ডিত হোয়ে... প্রেম – এই আড়াই অক্ষরের মাহাত্ম্য বুঝলেই সে পণ্ডিত...

- এবার তোমরাই বলো... ভালোবাসায় লক্ষণরেখা টানা যায়? রাবণ শুধু লঙ্কাকেই পেয়েছিল... আমি কি অযোধ্যাকে ত্যাগ করে সমগ্র ভারতকে তথা মানবতাকে পাইনি? ভালোবাসায় কি দাঁড়ি টানা যায় তুলসী? গুহক চণ্ডালকে কি আমি জড়াইনি? সে কি খেত? শাকপাতা? তা তো নয় তুলসী... আমি কি শবরীর এঁটো খাইনি কবীর? আমি তো ভেদ করিনি... তবে আমার নামে এত ভেদ কেন? ... (বলতে বলতে গলা বুজে এলো... চোখ সজল হল)


       তুলসী কেঁদে ফেললেন, বললেন, প্রভু এত কষ্ট পাবেন না... মানুষের বুদ্ধি কলুষিত আজ স্বার্থবুদ্ধি তে... যেখানে রাম সেখানে কাম বা স্বার্থ কই?...
       তুমি জন্মালে, তোমায় ঋষি নিয়ে গেল রাক্ষস মারতে, যজ্ঞের সুবিধা করে দিতে... তুমি গেলে... তোমায় বলল হরধনু ভেঙে বিয়ে করতে... তুমি করলে... তোমায় বনে পাঠাতে বলল, তুমি গেলে... রাবণ মা'কে নিয়ে গেল... তুমি তাকে উদ্ধার করে লঙ্কাতে অসুররাজ্য শেষ করলে... বিভীষণকে রাজা করলে... তুমি ফিরে এলে... তারপর তোমার রাজ্যবাসীর নানা কথায় তোমার নিজের পরিবারের স্বার্থ ভাবলে না... তবে তোমার স্বার্থ কই? তুমি তো সেতু বাঁধার পক্ষে চিরকাল... সেতু ভাঙোনি তো... আমি যা লিখতে পারিনি ত্যাগরাজ দক্ষিণভারতে বসে তা লিখেছে... 'বন্দৌ রঘুনন্দনম্ সেতুবন্ধনম্...' তুমি তোমার মত করে শান্তিতে কই ছিলে প্রভু, শুধু কয়েকটা দিন চিত্রকূট ছাড়া? মায়ের সাথে তোমার সেখানে সে প্রেমাভিষেক দেখে কি জগতের চোখ জুড়ায়নি প্রভু?
       কবীর চুপ করে শুনছিলেন, এবার বললেন, মানুষের মন্দবুদ্ধি ক্ষুদ্রতাতেই জন্মায় রাজা... বৃত্তের কেন্দ্র সত্য, পরিধিকে সত্য করতে গেলে ক্ষুদ্র হতে হয়, সে পরিধিকে নাম দেওয়া হোক অসীম... যে অসীমের সুরে হৃদয় বাঁধেনি সে তো মস্তিষ্কের মধ্যে ব্যবসা খুলেই বসেছে রাজা... তার কাছে আর কি সত্যধর্মের পাঠ?
       দাদা, জয়দেব, লালন, নানক, দাদু, মীরা, ত্যাগরাজ, চণ্ডীদাস, রামকৃষ্ণ, চৈতন্য, রবীন্দ্রনাথ, মহাত্মা... আরো কত কত মানুষ তোমায় ডাকতে এসেছে... তারা সবাই বলতে এসেছে.... ওঠো... আলো জ্বালতে হবে...

       রাম উঠে দাঁড়ালেন... বললেন, অঞ্জনীর ছেলেটা কই?

       বাতাস বলল, আমি ওকে আগেই পাঠিয়ে দিয়েছি... তুলসীর সে কথাটা দিয়ে... কুমতি নিবার, সুমতি কে সঙ্গী...
       সুমতির সলতে পাকাতে বলেছি মানুষকে, তবে তো আলো জ্বলবে..

       তুলসী নতজানু হয়ে বসলেন জানকীর সামনে। বললেন, মা, ভারত তো সেদিনই অযোধ্যাকে হারিয়েছিল যেদিন তোমায় ত্যাগ করে শুধু প্রভুকে নিয়ে রাজধর্ম চেয়েছিল। আমি আমার রামায়ণে সেই পর্বকে তাই রাখিনি মা। কাঁচের বদলে কাঞ্চন পেলে তাকে বলে ত্যাগ, আর কাঞ্চনের জায়গায় কাঁচ পেলে তাকে বলে বঞ্চনা, ভারতবাসী সেদিন নিজেকে বঞ্চিত করেছিল মা...আজ সে বুঝেছে...তুমি এগিয়ে এসো মা.....

       কবীর বললেন, ঠিক বললে দাদা...এইখানে তোমার সাথে আমি একমত...খালি বামুনগুলোকে একটু বেশি তোল্লাই দিয়ে ফেলেছ তুমি....


       সবাই একসাথে হো হো করে হেসে উঠল....