Skip to main content

 

শুনলাম বিপুলের (নাম পরিবর্তিত) বাবা বাজার করে ফেরার সময় রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরেনি আর। হাসপাতালে মারা গেলেন। বয়েস হয়েছিল। ডাক্তার বলেছেন, মৃত্যুর কারণ, হিটস্ট্রোক।

বিপুল আমার ছাত্র ছিল। অনেক দিন আগের। ওকেও আমি জীবনবিজ্ঞান পড়িয়েছি। পরিবেশবিদ্যা পড়াতে গিয়ে "গ্লোবাল ওয়ার্মিং" বুঝিয়েছি। এর থেকে কত নাম্বারের প্রশ্ন আসে সাধারণত, হয় তো সে নিয়ে আলোচনাও করেছি। গতবার বোর্ডের পরীক্ষায় এসেছিল কিনা, সে বছর এই প্রশ্নটা ইম্পর্ট্যান্ট কিনা, হয় তো সেই নিয়েও কথা বলেছি।

এখন সে সব মনে নেই। মনে আছে সিলেবাসে ছিল। কিন্তু সেই সিলেবাস যে সাদা কাপড় আর কম্বলের আসন নিয়ে আষাঢ়ের আকাশের নীচে ঘেমে-নেয়ে ছোটাবে বিপুলকে, বুঝতে পারিনি। মানুষ মারা গেলে অনেক কাগজের কাজ থাকে তো, তাই অনেক দৌড়াতে হয়।

তারপর বাড়ির সামনে এলো ফেরিওয়ালা। কিছু কিনতে হয় ওর কাছ থেকে। কোনো কোনো অসহায়তা দেখলে নিজের মধ্যে একটা অপরাধবোধ জন্মায়। কিছু একটা কমপ্লেক্সও বলা যেতে পারে। কী কমপ্লেক্স বলতে পারব না। ইম্প্যাথি কি কমপ্লেক্স? জানি না। কিন্তু সেই জন্যেই, নিজেকে বাঁচানোর জন্য কিছু কিনতে হয়।

সে যখন এটা সেটা দেখাচ্ছিল, তখন আমার হাতে ধরা আজকের খবরের কাগজ। যে কাগজে লেখা আছে, হু, মানে ডব্লুএইচও বলেছে, ভারতের যা হিটওয়েভ চলছে তাতে পাখায় কিছু হবে না, আপনারা এসিতে থাকুন। এসি ছাব্বিশে না কত তে যেন করে রাখার পরামর্শও দিয়েছে। তবে নাকি বাঁচা যাবে বিপদ এড়িয়ে।

ফেরিওয়ালাকে টাকা দিলাম। সে একগ্লাস জল চাইল। ক্রমাগত ঘামতে ঘামতে অপরাধীর মত দুই গ্লাস জল খেল। কার যে কীসে অপরাধ লাগে!

আসলে ন্যায্যতার দাবী, সাম্যের দাবী তো মনুষ্যত্বের দম্ভ না! সে দম্ভে যখন বাস্তবের আঘাত লাগে তখন এক আপাত অনির্দেশ্য অপরাধবোধের জন্ম হয়। সে কোনদিকে কাকে নিয়ে যায় বলা শক্ত। কাকে নির্বাক করে, আর কাকে চতুর করে সে হিসাবও কঠিন।

ওকে আমি সত্য গোপন করে গেলাম। ওকে বলা উচিৎ ছিল তোমার বাড়ির পাখাটা খুলে এসি লাগাও। ছাব্বিশে করে রাখো। তবে ভালো থাকবে। তোমরা সবাই বিপদের বাইরে থাকবে। বললাম না। সত্য গোপন করে গেলাম। ডব্লুএইচওকে ছোটো করতে ইচ্ছা করল না।

আজ শুনলাম বর্ষা ঢুকেছে। নাকি কাল পরশু ঢুকবে। এর মধ্যে দুপুরের মরুভূমিতে রাস্তা হারিয়ে মারা গেছে অনেকে। আরো যাবে। প্রতি বছর এ সংখ্যা আরো বাড়বে। মরুভূমি তো শুধু বালির হয় না। শুধু বালির হলে মরুভূমি অত ভয়ের হত না। মরুভূমি, মরুভূমি হল বালি আছে বলে না, জল নেই বলে।

আমাদের মধ্যেও কী যেন একটা কমে যাচ্ছে, পৃথিবীর জলস্তরের মত নেমে যাচ্ছে, কী বলুন তো? দরদের স্তর? নাকি প্রজ্ঞার স্তর? দুটো কি আলাদা?