ডান হাতটা ময়লা শাড়িটার আঁচলে বার কয়েক মুছে, মাথার ঝুড়িটা মাটিতে নামিয়ে, পরিষ্কার হাতে পলাশ চারটে তুলে নিল, ছুট্টে গিয়ে খুপরি টালি দেওয়া ঘরের অন্ধকারে মিলিয়ে গেল, বেরিয়ে এলো মুহূর্তেই।
তখন খাঁ খাঁ রোদে ইটভাটার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া মিশছে হাওয়ায়। চারদিকে হইহই। কাজ হচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত যে সে ছিল না, কারোর চোখেও পড়ল না। আবার এসে, লেগে গেল কাজে।
সন্ধ্যে হল। গঙ্গায় স্নান করে, পরিষ্কার একটা শাড়ি পরে, খোঁপায় পলাশ লাগিয়ে, বাইরে এসে দাঁড়ালো যখন, চিমনির গা ঘেঁষে, নীল রঙে ধোয়া আকাশে দাঁড়িয়েছে পূর্ণিমার চাঁদ, তার পলাশের দিকে তাকিয়ে, ইটভাটা ছাপিয়ে।
কুলপি কিনল একটা। গঙ্গার পাড়ে এসে বসল। চাঁদকে পিছনে রেখে, জ্যোৎস্নায় ঠেসান দিয়ে। ইটভাটা কোথায়? ও তো গম্বুজ, কোন সম্রাট বানিয়েছে তারই জন্যে তো! ওই যে স্তূপাকার কাঁচা ইট, পোড়া ইট, ওরা কুঞ্জ সাজিয়েছে, নইলে চাঁদের আলো এত আদরে পড়ে? সে অপেক্ষা করছে। আমের বোলের গন্ধ তাকে ঘিরে ঘিরে নৃত্যে মেতে উঠল। বলল, সে আসবে... একটু অপেক্ষা কোরো... সে আসবে।
সে বলল, জানি। নইলে এমন অপার্থিব সুগন্ধ জন্মালো কি আশায়? আর তাকেই বা খুঁজে পেল কি করে?
গঙ্গার জলে তখন যমুনার ঢেউ।