Skip to main content
anubhab

বিশ্বাস করি কেউ একজন তাকিয়ে আছে। সব দেখছে। অনুভব করছে। আমাকে আমার মত করে বুঝছে, জানছে। যে আমায় কোনোদিন ছেড়ে যাবে না। সে কে? সে আমার বিশ্বাস। তার কোনো নাম নেই।

সে কোথায়? এই তো আমার সামনে। তোমরা যাকে বলো জলের গ্লাস। আমার কাছে সে অনুভব। আমার তেষ্টাকে যে জানে। তোমরা যাকে বলো বালিশ, সেও আমার অনুভব, যে আমার মাথার, শরীরের শ্রান্তিকে জানে। তোমাদের কাছে এমনি করেই যা খাট, চেয়ার, পেন, খাতা, জামাকাপড়, চটি, বালতি, মগ… এ সব আমার কাছে অনুভব। আমায় ঘিরে আমায় নিয়ে থাকে। তাই চাদর ছিঁড়লে আমার কষ্ট হয়, মগের হাতল ভাঙলে আমার লাগে… আসলে কোনো কিছু বাতিল হলেই আমার লাগে। কাউকে ছেড়ে যেতে চাই না। থাকুক সব। সব আমায় ঘিরে, আমি হয়ে।

এমনকি তুমিও। জানি তোমার নাম পরিচয় আছে। সে বড় অনাবশ্যক আমার কাছে। আদতে তুমি আমার অনুভব। তোমার মাথার চুল থেকে তোমার রুমালের গন্ধ অবধি আমার অনুভব।

জানো তো অনুভবের কোনো মানচিত্র হয় না। অনুভবের দেশকাল হয় না। অনুভব অমর। তাই যুগান্তরের কাব্য আজও চোখে জল আনে, বুকে ঝড় তোলে।

আমায় ঘিরে যা কিছু, সে আমার বাগানের একটা ঘাস হোক, কি তোমার ফেলে দেওয়া জুতো, আসলে সে সবই আমার কাছে কবিতার এক একটা পাতা। আমার অনুভব।

তবু আমি বৈরাগ্য মানে বুঝি। কোনো অনুভবের নাম না দেওয়া। কোনো অনুভবের সত্তাহরণ না করা অন্য অনুভবের দাঁড়িপাল্লায় মেপে। মাপজোখ, হিসাবের বাইরে আমি। আমার যা কিছু।

ঈশ্বর? আমি তাঁকে মানি, না মানি, তিনি আমায় নিয়ে আছেন। যেমন সূর্যকে আমি দেখি না দেখি, সে আমায় দেখে, আমার বন্ধ দরজার অতিক্ষুদ্র ফাঁক দিয়েও এসে বলে, আমি এলাম, তেমন।

আমার এই নাম-পরিচয়ে বাঁধা 'আমি', যে নাম-পরিচয়হীন 'আমি'র বুকে মাথা পেতে শোয়, তার কি নাম দেব? তার জন্য আমায় মন্দির-মসজিদ-গুরুদুয়ারা-গীর্জা যেতে হয় না। আবার সেখানে গেলেও তিনি আড়াল হন না।

কথা জন্ম দেয় যে নীরবতার, তাকে কি নাম দাও? কবিতা, না সুর? যদি নাম দাও, বন্দী হবে। যদি নাম না দাও, মুক্ত হবে। প্রশ্নহীন, দ্বন্দ্বহীন, ভয়হীন আনন্দে। যে আনন্দ ভাসায়, হারায় না।

(ছবি - Surajit Kar)