ওকে কেউ বলবে, ও যেন কবিতার কাছে ফিরে যায়। এই যে নিন্দার সাতকাহন নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে, আসলে তো ক্ষোভ নয়, রাগ নয়, এ অভিমান। কবি বলেই যে না ওর এত অভিমান। এত যে নালিশ, এত যে চোখ রাঙারাঙি, এও কি আসল? নয় তো। ওকে বলো, ও যেন কবিতার কাছে ফিরে যায়।
আমি ওর পিছল, উদাস চোখ দেখেছি। কেমন ভর দুপুরে নিঝুম সন্ধ্যার অন্ধকার ঘেরা চোখ ওর, আবার গভীর রাতে যেন লক্ষ তারার আলো, ওর চোখে। দেখেছি, অনুমানে।
ওকে বলো, কবিতাকে বন্ধক রাখা যায় না। হয় তো শেষ শ্বাসটুকু বন্ধক রেখে হীরে জহরত কেনা যায়, কিন্তু কবিতাকে বন্ধক রাখা যায় না। ও কবিতাকে বন্ধক রেখে গদ্যের কারাগারে সশ্রম কারাদণ্ড দিচ্ছে নিজেকে। কেন? কিসের এত জেদ ওর? লক্ষ শব্দের উপন্যাস লিখেও স্বস্তি পাবে না ও, এক লাইনের কবিতার কাছে ঋণী থেকে, তাকে বাইরের দরজায় অপেক্ষায় করিয়ে রেখে। ওকে বলো, এত অভিমান, সে ক্ষুদ্রবুদ্ধি মানুষগুলোর জন্য নয়, কবিতাকে বঞ্চিত করেছে বলে।
কবিতার কাছে ফিরুক। একটা শব্দের জন্য ফিরুক হন্যে হয়ে দিনরাত এক করে। কবিতা শরীর মন নিংড়ে জন্মায়, ও কি জানে না তা? ও সব জানে। তবু মানবে না। বাইরের সবটুকু হাততালি ভিতরের দরজার বাইরে পড়ে থাকে। ভিতরে যা যায়, সে অন্তর্যামীর প্রসাদ। মানুষ কি অন্তর্যামীকে টপকাতে পারে? যুগে যুগে চেয়েছে মানুষ, পারেনি তো!
কবিতাকে ডাকুক আবার সে। ওকে কেউ বলো, অন্তর্যামীকে ডিঙিয়ে বাইরে এলে শুধু ক্ষোভই জন্মাবে। মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ পাথেয়, অন্তর্যামীর প্রসন্নতা, সে যদি কবিতার ভাষায় আসে, সাধ্য কি তার তাকে ঠেকায়? বাজারের বিকিকিনি, লাভ-লোকসানের কথা সেখানে চলে না। সেখানে শুধু নিবেদনেই ভরে ওঠে প্রাণ। সেকি জানে না এ সব কথা? সব জানে। তবু কি মোহের বশে কবিতাকে করেছে নির্বাসিত।
ওকে কেউ বলো, ও যেন কবিতার কাছে ফিরে যায়। কবিতার কাছে গেলে শীতল বাতাস গায়ে লাগবে। সব জুড়িয়ে যাবে। তুচ্ছ যা অপমান, নিন্দা-কুৎসা, সব সময়ের স্রোতে কোথায় হারিয়ে যাবে! সে শুধু কবিতার গায়ে আলতোভাবে হাত রাখুক, বলুক, আমি এসেছি, দরজা খোলো। আশ্রয় পাবে, সসীমের দরজা অসীমের আঙিনায় খুলে গিয়ে।