যিনি নোবেল পেলেন সাহিত্যে, যার নামের ঠিক বানান শুধু কিছু লোক জানে, বাকিরা সবাই ভুল জানে, তিনি আত্মজীবনী লিখেছেন মেলা। আমি পড়ে দেখলাম দু একটা। বপু বড় নয় বেশি। ছোটো ছোটো। মা'কে নিয়ে একটা লেখা। মায়ের শেষদিনগুলোর কথা। পড়তে পড়তে আমার একবার মনে হল, মায়ের প্রাইভেসিও কি কোথাও বিঘ্নিত হচ্ছে না? মায়ের ডিগনিটি? নোবেল পেয়েছেন, তাই আর কিছু বলা ঠিক হবে না। আরো অনেক পুরষ্কার পেয়েছেন। নিজের কত ব্যক্তিগত কথা লিখেছেন, সে গোপন প্রেমের কথা, কত গোপন, আমাদের ভাষায় অশ্লীল ইচ্ছার কথা। বাবা রে বাবা! মেয়েমদ্দর মনে এ সব ইচ্ছা জাগে শুনলে মনুর বংশধরেরা কি করত কে জানে বাপু! তবু সে লিখেছে। তাদের দেশেও নাকি মেলা গোলমাল, তবু সে লিখেছে।
মজার কতাটা কি জানো, ওই জটিল নাম্নী লেখিকা যে পুরুষতন্ত্র ধুয়ে লিখেছেন, নোবেল পেয়েছেন এই নিয়ে কত কথা শুনছি। আর এখন যেটি হচ্ছে ইরাণে, সেই নিয়ে কত কম কথা শুনছি। না না, আমি চুলটুল কাটতে বলছি না গো, বালাইষাট, আমি বলছি আমাদের নোবেলঘ্রাণী বিবেকের কথা। কেমন যেন গোলমেলে সব।
তো কথা হচ্ছে আমি কি থোড়াই সাহিত্যের গুণ বিচারে বসেছি। তাও কি হয়? আমি বলছিলাম আমাদের ঝলক উদারতার কথা। ঝলক উদারতা কি? সে জানতে কালনা যেতে হবেক। সেখানে গৌরনিতাইয়ের ঝলক দর্শন হয়। মানে হল গিয়ে যে-ই না দাঁড়ালে মন্দিরের সামনে, অমনি অল্প এট্টুসখানির জন্য খুলবে দরজা, আবার বন্ধ করে দেবে। সে-ই হল উদারতার নিদর্শন আমাদের। ঝলক।
কেন, বাংলায় লিখে আমাদের এক লেখিকা কি নাস্তানাবুদ হয়নি কো! বাবা রে বাবা! ধর্ম থেকে পুরুষতন্ত্র হয়ে সমাজ সব সে খেয়ে দিয়েছিল নাকি! তাড়াও তাড়াও! তারপর আরেক লেখিকা, কি দোষের মধ্যে তার বইয়ের নাম ছিল একটা অন্তর্বাসের নাম! ব্যস। এখনও দেখি, সে কিছু একটা বললেই তেড়েফুঁড়ে সব বলতে আসে, ওই অন্তর্বাসের নাম দিয়ে যে বই লেখে সে-ই লেখিকা? ম্যাগো মা! কি পোশাক পরে দেখেছিস? হ্যাঁ রে ব্যক্তিগত জীবন কেমন? বাবা রে বাবা! সব চলে এলো! লিপস্টিকের রঙ থেকে পোশাক, শরীর, হাঁটাচলা সব আলোচনায় বসে গেল। তারাই আবার সে কঠিন নাম্নী লেখিকার বইয়ে সাহসের আঁচে উদারতার রুটি সেঁকবে! মা গো মা! কই যাই! আমি লেখা নিয়ে তুলনায় বসছি আবার ভেবোনি যেন…সে ক্ষমতা আমার নেই কো! আমি আমাদের ভাবসাবের কথা বলছি আরকি!
আমার কেমন লেগেছে পড়তে? আমার এখন সব ভালো লাগে পড়তে। ঠোঙা থেকে, পুচকে মামুর এবিসিডি হয়ে সে সব পুরষ্কার পাওয়া বই অবধি। কেন? কে জানে। বয়েস যত বাড়ছে বুঝছি কিস্যু জানা হল না, অগত্যা বগলে স্কেল নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে কি হবে? আজ যা ভালো লাগে না, কাল তা-ই ভালো লাগবে! মন কি আর ধ্রুব রে পাগল!
মনের কত দিক! তাই দেখি শুধু আর অবাক হই! সেদিন মণ্ডপে এক ভদ্রলোককে দেখলাম কুকুর নিয়ে মণ্ডপে হাজির। বলে ওরা নাকি ঠাকুর দেখার ভীষণ বায়না করছিল। আর তার বাড়িরই আয়া সকালে চারটে বিস্কুট খেয়ে, সারাদিন তার বাড়ি রেঁধেবেড়ে না খেয়ে রাতে দুটো ভাত ফুটিয়ে খেয়েছে প্রথম দিন গিয়ে। পরেরদিন থেকে ভাত রুটি নিয়ে যায়। ভাই রে, কুকুরের মনের কথা বুঝিস আর মানুষের বুঝিস না? এইতেই আমার যত গোল হয় আসলে। ইংরাজিতে অনুবাদ পড়লে যা সাহসিকতার পরিচয় হয়, বাংলায় সেগুলোই নিছক পাবলিসিটি স্টান্ট আর অশ্লীল দেগে যায় কি করে? মানে কি আমরা নোবেল কমিটির মত এত সুক্ষ্ম সাহিত্য বিচার শিখে গেছি ফেসবুকের টাইমলাইনটা মাগনা পেয়ে? তবে আর এখানে বসে আছি কেন? নোবেল কমিটির কাছে আবেদন করলেই হয়, দাদা আমাদেরও বাছাবাছিতে দলে নেন না কেন? দেখেন না হঠাৎ তারাশঙ্করকে নিয়ে হইচই পড়ে গেল, যে সব বইয়ের উপর ধুলো জমছিল তারাই আবার বাইরে আসছে, মায় নোবেলের পাতায় নাম উঠেছিল বলে শুধু। তাই হয়!
যা হোক! কি করে সেই কঠিন নাম্নী লেখিকার বই পড়েছি জিজ্ঞাসা করে আর লজ্জা দেবেন না… নেট থেকে ডাউনলোড করে। সৎ উপায়ে? উঁহু!