Skip to main content

পায়ে নরম চটি পরলে ব্যথা হয় না পায়ে। এ আমিও জানি, আমার পা-ও জানে। পায়ের তলায় নুড়ি পড়লে, মন উল্লাসে নেচে ওঠে, যেন প্রতিশোধ নেওয়া গেল। হাঁটতে হাঁটতে বলি, দেখ কেমন লাগে। ব্যথা দিতে পারলি? পারলি না তো!

সগর্বে এগিয়ে যাই। রাস্তার ঢেলা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, দেখছি পরের দিন আয়।

আসলে সংসারে যাদের ব্যথা দেওয়ার ক্ষমতা থাকে তাদের উপর আমাদের একটা অদ্ভুত আকর্ষণ থাকে। মন বারবার বলে, কী এমন ক্ষমতা আছে ওর, কী করে পারে?

নরম চটির তলায় নুড়ি পড়ে। পায়ে অনুভব হয়। কিন্তু ব্যথা লাগে না। বিজয়ীর আনন্দ মনে। রাস্তা পড়ে আছে সামনে অনন্ত, কিন্তু মন পড়ে আছে নুড়ির খোঁজে। কী রহস্যময় মন।

যুধিষ্ঠিরকে নারদ বলেছিলেন, সংসারের রাস্তায় কাঁটাময় পথ। সন্তোষের চটি পরে হাঁটো। কাঁটা ফুটবে না।

সন্তোষ সাধনার ফল। আঘাতে বিষাদ জন্মায়। প্রত্যাঘাতের ইচ্ছার উষ্মা সরিয়ে সন্তোষ জন্মায় কই?

জগন্নাথ মন্দিরের বাইরে এলাম, চটি নেই, কোথায় খুলেছি মনে নেই। চারদিকে কাজ হচ্ছে রাস্তায়। উঁচুনীচু, এবড়োখেবড়ো। হাঁটতে প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে। এত আকুলভাবে জগন্নাথকে ডাকিনি মন্দিরে এই খানিক আগে, যতটা আকুলতা নিয়ে চটি খুঁজছি।

বেশ খানিকবাদে পেলাম। উফ! শান্তি, শান্তি, শান্তি। চটির রঙ না, চটির ব্র‍্যাণ্ড না, চটির অবস্থা না, কিছুই দেখার নেই তখন। সে আমাকে ব্যথার হাত থেকে বাঁচাবে, ব্যস, এতটাই। রাস্তার নুড়িপাথরকে তো বলতে পারি না, সরে যাও। কিন্তু চটিকে বলতে পারি, কাছে এসো।

আকুল হয়ে একদিন এমনিই একটা অদৃশ্য চটি খুঁজব। একদিন বুঝব নুড়িপাথর, এবড়োখেবড়ো রাস্তা শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু ওই চটিটা চাই। যেমন চটিটা না চাইলেও পায়ে চটিটাকে গলিয়ে নিই, আঁকড়ে থাকি পায়ের সঙ্গে, যেন ছিটকে না যায়। তখন যারা ব্যথা দেয় তাদের প্রতি আর কোনো আকর্ষণ নেই। ব্যথাকে অনুভব করব, নরম চটির তলায় নুড়ির মত, কিন্তু তাকে ঘরে ডেকে তুলব কেন? ব্যথা কি কখনও নিজের হয়?