Skip to main content

এটা কবিতা না তো
   একটা কমলালেবু। তুমি দাঁড়াও,
  আমি একটা একটা কোয়া ছাড়িয়ে তোমার হাতে দিই,
      তুমি খাবে কি না খাবে, তা শুঁকে দেখে ঠিক কোরো

 আমি যখন পুরীর হোটেলে ঢুকলাম,
   তার খানিক পরেই ঢুকলেন ওনারা, সাথে সে-ও।
 কে? বলছি, আগে এই কোয়াটা নাও
      একটা খুব বড়লোকের পরিবার
 দামী শাড়ী পরা দুই বউ (বয়েস পঞ্চান্ন তো হবেই)
  তাদের দু'জন স্বামী
আর সাথে সে।

কে? বলছি তো,
   তার বয়েস বুঝতে পারলাম না
   হয়তো বত্রিশ বা ঊনপঞ্চাশ হবে
 একটা হলুদ, মলিন সালোয়ার কামিজ গায়ে
   কয়েকটা হাড়ের উপর তা রেখে
   ঢুকল হোটেলে ওদের পিছনে পিছনে,
সত্যি বলতে ও যে মেয়ে ওর সালোয়ার কামিজ ছাড়া আর কেউ ছিল না তার সাক্ষী,
চোখ তুলে তাকালো। যেন বলল,
   ক্ষমা করবেন দাদা (অথবা বাবু) আমি এখনও বেঁচে আছি
   অকারণে খাচ্ছি, শ্বাস নিচ্ছি -এ সবই আপনাদের... জানি...তবু....
ক্ষমা করবেন…

 খেলে কোয়াটা?... আচ্ছা ছাড়ো...
   আমি তখন সমুদ্র স্নানে বেরোচ্ছি
 ওকে দেখলাম, দোকান থেকে কিনে
   এক প্লাস্টিক জিলিপি, কচুরী আর তরকারি নিয়ে যাচ্ছে...বাবুরা খাবে..উচ্ছিষ্ট ও-ও পাবে!
তাকালো আবার, বলল...
    এইটুকুই তো পারি... যদিও বাঁচি তার চেয়ে অনেক বেশি...
ক্ষমা করবেন...

 আমি তখন সমুদ্র নেয়ে ফিরছি
   তাকে দেখলাম, এক বালতি ধোঁয়া ওঠা জল নিয়ে
      হাড়গুলোর সাথে যুদ্ধ করতে করতে দোতলায় উঠছে
 তাকাবে কি করে? ওর সারাটা শরীর মন তখন অকারণ বেঁচে থাকার কড়ি গুনছে যে!

   খেতে বেরোচ্ছি। ও আরেক বালতি জল নিতে নীচের দিক নামছে।
যখন খেয়ে ঢুকলাম
  ওকে দেখলাম রোদে দাঁড়িয়ে
মাথার মধ্যে যে একমুঠো চুল -
  তাকে রোদে মেলে,
মুখে একটা স্বর্গীয় প্রসন্নতা
  অভাগীর এই একচিলতে বিলাসিতা!
জল নেওয়ার অছিলায়, আর সকলকে ফাঁকি
দিয়ে নীচে এলাম
  জিজ্ঞাসা করলাম, কি নাম আপনার?
সে বিস্ফারিত চোখে তাকালো। ভুলে গেছে কি?
  ওদের সাথে কত বছর আছো?
মুখের মধ্যে হাজার চামড়ার ভাঁজ
  কত ইতিহাসের পাতা!
"ও বোবাকালা গো!"
  হোটেলের মাসির ঘোষণা নেপথ্যে

মিথ্যা কথা!
  আমি শুনেছি ওর আপন মনে বকা!
 ফিরে গেলাম।
  আচ্ছা বলো তো কিসে মানুষ অজান্তব?
 মানুষকে জন্তু বানানো যায় কিসে?
    মানুষ আলাদা হয়ে সভ্য হল সেদিন
 যেদিন যৌনতার সাথে মান জড়ালো
 পণ্ডিতেরা তা বলে না?
না বলুক। ওরা যা জানে না, সেটা জানার তথ্যে রাখতে চায় চেপে। সে কথা বইতে নেই ছাপা!

 মানুষকে কিসে বানাবে জন্তু?
  যৌনতার সম্মানবোধকে করো উৎপাটিত দু'হাতে
   সে কব্জায় তোমার।
    আর মেয়েদের যৌনতা?
 সে তো দ্বিতীয় শ্রেণীর। বাক্যের বিধেয়পদ।
   কিম্বা এই কমলালেবুর মত-
কয়েক কোয়া খেলে, রেখে দিলে
  আবার পরে খাবে বলে
     শুকিয়ে যাবে?
যাবে। ওর বীজ থেকে গাছ বানিয়ে নাও তার আগে,
    বংশগতি থাকবে।
   তারপর পাবে ওরকম আধখাওয়া কমলালেবু কত! এখানে ওখানে কতই আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে

 মেয়েটার সাথে আরো দেখা হয়েছিল কয়েকবার
   ভেবেছিলাম সমুদ্রের ঢেউয়ে ফেলেই আসব ওর গল্প
 পারলাম না তো!
   ওর চোখের মধ্যে যে কথার সমুদ্র
তার প্রতিটা ঢেউকে ছুঁয়ে বুঝেছিলাম
  ভীষণ ভীষণ লোনা...
    জিভে দাও পুড়ে যাবে
চোখে পড়লে অন্ধ হবে...
  আগাছায় তবু ফুল ফোটে
  উচ্ছিষ্টে বাঁচা মানুষ শুধুই নোনতা...


ওই দেখো..কমলালেবুটা খেলে না যে!
  নোনতা ছিল নাকি?

Category