মানুষ ভাবে। ভাবতে ভাষা লাগে। ভাষার দরকার কি ছিল? ভাবা? না ভাবনাটা প্রকাশ করা? উত্তর এলো, দুই। অর্থাৎ, ভাবতেও ভাষা লাগে, ভাবনা প্রকাশ করতেও ভাষা লাগে। কিন্তু যখন একা হও? তখন? উত্তর হল, তখনও নিজের সাথে কথা বলতে ভাষা লাগে।
অর্থাৎ, নিজেকে দু'টুকরো করে ফেল তখন। নিজেই বক্তা, নিজেই শ্রোতা। তাই তো?
তাই।
আর এমন হয় না, যখন কেউ বক্তা নেই, কেউ শ্রোতা নেই। মন নেই। কারণ ভাষা নেই। মন থাকলেই মনের মালিক আছে। ছায়া মানেই যেমন আলোর বাধা আছে। তেমন হয় না? যখন ভাষা জন্ম দিচ্ছ না কোনো। ভাষা নেই মানে চিন্তা নেই। চিন্তা নেই মানে মন নেই।
কি আছে তবে?
হৃদয়।
হৃদয়ের মালিক নেই?
পাগল হলে, হৃদয়ের মালিক কি যে সে? তাকে ভাষায় পাবে?
তবে?
শোনোনি ঋষি গেয়েছেন, যতো বাচো নিবর্তন্তে অপ্রাপ্য মনসা সহা - যেখান থেকে ভাষা আর মন শূন্য হাতে ফিরে আসে, না পেয়ে। সেকি পাওয়ার? সে হারাবার।
তুমি হারিয়েছ?
উত্তর শুনে কি হবে? কি করবে, নুড়ি জমাবে? জ্ঞানের নুড়ি? সারাজীবন শুধু মানুষের উত্তর কুড়িয়ে গেলে.... ফেলে দাও... ওসব এঁটোকাঁটা ঘেঁটেই কি জীবন কাটাবে? নুড়িতে শ্যাওলা ধরে। নুড়ি ফেল।ডুব দাও।
কিভাবে?
ওই যে বললাম, ভাষা মানেই দুই। দুই মানেই অতৃপ্তি। অজ্ঞান। মোহ। ভাষার পারে যাও। এক হও। নিজের মধ্যে এক হও।
ঈশ্বর?
ঈশ্বর মানে কি?
জানি না।
গীতায় পড়োনি? সর্বং! মানে সব। ঈশ্বর মানে সব।
সব মানে কি?
সবের মানেও যা, একের মানেও তাই। দুই নাই।
আমার প্রশ্নের উত্তর নেই তবে?
সেখানে প্রশ্নও নেই, উত্তরও নেই। ওসব ভাষার রাজত্ব। সেখানে যেতে গেলে ভাষা থামাও। "এবার নীরব করে দাও হে তোমার মুখর কবিরে"....
সুর?
সুর মানে সব। সুর মানে প্রাণ। সুর মানে শ্বাস। সুর মানে হৃদয়।
হৃদয়ের মালিককে চাই না?
না, হৃদয় যখন একা, তখন হৃদয়ের মালিক আর হৃদয় এক। হৃদয় যখন ভাষাচ্ছন্ন তখনই সব ঢাকা। শ্রাবণের মেঘের মত। ভাষা মানুষের। নিস্তব্ধতা ভাবের।
শ্রাবণের মেঘ কাটে কি করে?
মাঝে মাঝে শ্রাবণ সন্ধ্যায় পূর্ণিমা দেখেছ না? কেমন চারদিকে মেঘের আড়ালের থেকে সে হেসে যায় তোমার দিকে তাকিয়ে। চাঁদই সত্য, মেঘ নয়। মেঘ সাময়িক।
ভাষা যদি এতই বাধা, তবে সেই ভাষায় যে এত গান, এত শ্লোক, এত গাঁথা, এত উপদেশ?
ওসব মালা। ফুল। নিঃশব্দতার বাগানে ফোটা ফুল। যার নিস্তব্ধতার বাগান নেই, তার ফুল নেই। ধার করা ফুলে মালা গেঁথে তাক লাগানো যায়, প্রাণে শান্তিধারা জন্মায় কই?.... নিস্তব্ধ হও... নিশ্চল হও.... মগ্ন হও... ভাষাহারা হও.... ভাষার পারে যাও...." নীরব যিনি তাঁহার পায়ে নীরব বীণা দেব ধরি"....
[ছবিঃ Suman]