নির্বাসিত প্রেম। সংসারের বাইরে সংসার। রাধার যেন আসতেই হত। সে যদি বলত, কৃষ্ণ, তুমি তোমার গৌর-নিতাই নিয়ে এগোও। বিশ্বে ধর্মপ্রচার করো, জগৎ উদ্ধার করো। আমার সেখানে কি কাজ বলো?
কৃষ্ণের কোনো যুক্তি থাকত? তিনি মনে মনে কষ্ট পেলেও হয়ত মুখ ফুটে কিছু বলতে পারতেন কি? বলতেন না। একে পুরুষ তায় পুরুষোত্তম। অভিমান কি ছাড়া যায়?
কিন্তু রাধার তো সে দায় নেই। পুরুষোত্তমের অভিমানের চেয়ে বৃহৎ অভিমান যে পুরুষোত্তমের প্রেমের সর্বস্ব হারানোর অভিমান। যে অভিমানের কাছে পুরুষোত্তমের অভিমান সাগরের তুলনায় দীঘি।
কৃষ্ণ জানতেন। সংসারের শেষ প্রান্তে নির্বাসিত হলেও ভক্তহীন হতে পারেন, রাধাহীন কদাপি নয়। সেই রাধাতেই তৈরি হবে আরেক সংসারের সূচনা। সৃষ্টি যদি শুধু শক্তিতে হত তবে অসুরের চাইতে বড় স্রষ্টা সংসারে মেলা ভার ছিল। সৃষ্টির মূল সুর প্রেমের চির অতৃপ্ত তৃষ্ণা। রাধার সেই অতৃপ্ত প্রেমের আগুন কৃষ্ণকে বিহ্বল করে। তাকে সৃষ্টির সাথে বেঁধে রেখেও রাখে মুক্ত।
আর গৌর-নিতাই? তারা জানে, তাদের প্রভুটির কৃপাশক্তির করুণার উৎস প্রভুর হৃদয় নয়, হৃদয়বিলাসী সে নারী। যার চরণের প্রতিটা নূপুরের ধ্বনিতে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের অনাদি স্বরের সুর বাঁধা পান কৃষ্ণ। সেই নূপুরের ধ্বনিতে জাগে সৃষ্টি। জাগেন কৃষ্ণ। জাগে ভক্ত। গড়ে সংসার।