সৌরভ ভট্টাচার্য
26 March 2019
চৈত্র মাসের সংক্রান্তির সন্ধ্যেতে রাজার পাঁচটা সন্তান হল। পাঁচটিই পুত্র সন্তান। একজন রাণীর গর্ভ থেকে, বাকি চারজন নগরের নানা প্রান্তে অবৈধ গর্ভ থেকে। রাণী খোঁজ পেয়েই পেয়াদা পাঠালেন তাদের ধরে নিয়ে আসতে, অবৈধ যে-ই হোক না, রাজরক্ত তো!
আনা হল তাদের। রাণী বললেন তাদেরকে আলাদা আলাদা কক্ষে দশ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হোক। কেউ যেন কারোর মুখদর্শন না করে। রাজাও সম্মতি জানালেন। বললেন, তাই হোক।
তাই হল। রাজার চার অবৈধ সন্তান তাদের মায়েদের সাথে পৃথক পৃথক কক্ষে বড় হতে লাগল। আর রাজগৃহে মুক্ত পরিবেশে বড় হতে লাগল রাজার বৈধ সন্তান। নাম রাখা হল – সুকুমার।
দশ বছর কেটে গেল। রাণী হুকুম দিলেন চার অবৈধ সন্তানকে পাঠানো হোক দেশের নানা প্রান্তে একা। একজনকে পাহাড়ে, একজনকে জঙ্গলে, একজনকে সাগরের তীরে, আরেকজনকে মরুভূমিতে। আর সুকুমার করবে অধ্যয়ন রাজ শিক্ষককূলের সমীপে। দেশ-বিদেশ থেকে বই আনা হল, মানচিত্র আনা হল। আরো শিক্ষার কত সরঞ্জাম আনা হল। আর তাদের পাঠানো হল দেশের নানা প্রান্তে। তাদের মায়েরা কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু রাণী বললেন, "ওদের শিক্ষা হবে প্রকৃতির কোলে, অবৈধ শিক্ষা।" রাজা বললেন, "তথাস্তু।" আদেশ হল, পনেরো বছর পর ফিরে এসে তারা তাদের অধীত বিদ্যা রাজার সকাশে নিবেদন করবে। তারা বলল, তাই হোক।
পনেরো বছর কেটে গেল। তারা ফিরে এলো। গোপন কক্ষে তাদের সাথে রাজা মিলিত হলেন। সাথে তাদের মায়েরা। তাদের মায়েরা আবার দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে রাজবৈদ্যের চিকিৎসায়। রাজবৈদ্য তাদের চোখে নানা প্রাণীর চোখ বসিয়ে দিয়েছেন। সেই গোপন কক্ষে রাণী এলেন সুকুমারকে নিয়ে। সবাই বসল গোল হয়ে রাজার সামনে। রাজা বললেন, "একে একে এসে আমার সামনে দাঁড়াও, নিজের অধীত বিদ্যা সংক্ষেপে বলো।"
প্রথমে এসে দাঁড়ালো যে পাহাড়ে গিয়েছিল। তার মায়ের চোখে পাহাড়ি ছাগলের চোখ বসানো। তিনি নীরবে আশীর্বাদ দিলেন পুত্রকে। সে বলতে লাগল,
“মহারাজ পাহাড় অতীব কঠিন স্থান। পায়ের তলায় কঠিন পাথর। বর্ষাকালে যা পিচ্ছিল। শীতকালে যা কুয়াশাচ্ছন্ন। ভূমিকম্পে যা প্রাণঘাতী চঞ্চল প্রস্তরকূলের হিল্লোল। বিষধর সর্প, হিংস্র জন্তুর আবাস এই পাহাড় মহারাজ। তবে মনোরম তার সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের মুহূর্ত। বরফাবৃত শ্বেতচূড়ার দৃশ্যও অতীব মনোরম মহারাজ। আর নানা পক্ষীর কূজন, সুস্বাদু ফলের সমাহারের কথা কি আর বলা, মহারাজের পুণ্য চরিত্রের শোভায় সবই মনোরম।”
মহারাজ খুশী হয়ে তাকে রাজ অঙ্গুরী দিলেন তর্জনী থেকে খুলে। তারপর বললেন, "পরের জন এসো।"
এবার এসে দাঁড়াল যে সমুদ্রের তীরে পনেরো বছর কাটিয়ে এলো। তার মায়ের চোখে হাঙরের চোখ বসানো। তিনি মুগ্ধ হয়ে পুত্রের দিকে তাকিয়ে। পুত্র ঋজু শরীরে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল,
“মহারাজ, সমুদ্র অতি গভীর ও অসীম। আকাশের মত। আকাশে যেমন পক্ষী নির্দিষ্ট দূরে গেলে দৃষ্টির অগোচর হয়, তেমনই সমুদ্রের বুকে কোনো প্রাণী জলরাশি আবৃত হয়ে গোপনে বসবাস করে। আমি কুম্ভক ও রেচক যোগে বহুবার সমুদ্রের তলায় দীর্ঘকাল বসবাস করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। সেই জলরাশির তলায় এক আলাদা জগৎ মহারাজ। সেখানে গুল্ম, লতা, বৃক্ষ থেকে আরম্ভ করে নানা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ প্রাণীর সমাহার। তারা কেউ কোমল মধুর স্বভাবের, কেউ হিংস্র মহারাজ। সেই নোনতা জলেই তাদের জীবনচক্র সমাধা করে সেই নোনতা জলেই তারা লীন হয়ে যায় মহারাজ। সমুদ্রের ঝড়, প্রবল ঢেউয়ের আস্ফালন অতীব ভয়ংকর মহারাজ, সমুদ্র তীরবর্তী নগর বহুবার ভাসিয়ে নিয়ে সমুদ্র আপন গর্ভে নিয়ে গেছে টেনে স্বচক্ষে দেখেছি মহারাজ।“
মহারাজ চিন্তিত মুখে বললেন, "বেশ।" তারপর মধ্যমা থেকে খুলে আরেকটি অঙ্গুরী তাকে দান করলেন।
এরপর এলো যে ছিল জঙ্গলে। তার মায়ের চোখে হাতির চোখ বসানো। তিনি স্থির দৃষ্টিতে পুত্রের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সে বলতে শুরু করল,
“মহারাজ, জঙ্গল অতীব রহস্যময়। সেখানে শিকার আর শিকারীর ক্রীড়া দিবারাত্র সংঘটিত হয়ে চলেছে। পাতার ফাঁকে, গুহার মধ্যে, বৃক্ষের কোটরে, খোলা প্রান্তরে, জলাশয়ে। একটু অসতর্ক হলেই জীবন নাশ মহারাজ। তারই মধ্যে ছয় ঋতু তাদের অপরিসীম সৌন্দর্যের শোভা নিয়ে চারদিক ভরিয়ে তোলে। বর্ষার ধারাপাতের ধ্বনি। শীতের শিশিরপাতের মূর্ছনা। বসন্তের নানা পুষ্পের সমাহার, যেন স্বর্গকে মর্ত্যে আহ্বান করে নিয়ে আসে মহারাজ। নানা অমৃতোপম ফলের স্বাদ প্রাণের স্ফুর্তিকে উচ্ছল করে তোলে মহারাজ। অবশ্য বিষফলও আছে। তবু বনদেবী ও আপনার পুণ্যবলে সবই বড় মাধুর্য ও কল্যাণময় মহারাজ সেখানে।”
মহারাজ স্মিত হেসে অনামিকা থেকে রাজ অঙ্গুরীয় খুলে তার হাতে দিল।
শেষে এলো যে কালযাপন করেছে মরুভূমিতে। তার মায়ের চোখে মরুভূমির বিষাক্ত সাপের চোখ বসানো। তিনি সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পুত্রের আন্দোলিত দেহের দিকে তাকিয়ে তার অবয়ব বোঝার চেষ্টা করলেন। সে বলতে শুরু করল,
“মহারাজ মরুভূমি বড় শুষ্ক, নির্দয়। সেখানে প্রাণধারণের অনুকূল প্রায় কিছুই নাই। না জল, না বৃক্ষের ছায়া, না মধুর সুমিষ্ট ফল, না মেঘের ছায়া। সেখানে বালুঝড়, সেখানে মরীচিকা, সেখানে অসীম তৃষ্ণা। তবু তার মধ্যেও প্রাণীকূল ও কিছু উদ্ভিদ নিজের প্রাণধারণের নানা কৌশল আবিষ্কার করেছে মহারাজ। আমিও তাদের অনুকরণ ও অনুসরণ করে প্রাণধারণের নানা কৌশল শিখেছি মহারাজ। আপনার আশীর্বাদে সহস্র উটের একটি শহর গড়েছি মহারাজ। কোনো মানুষ নেই। শুধু তারা আর আমি। সেই আমার জীবন নির্ভর মহারাজ।”
মহারাজ কষ্ট পেলেন। তিনি কনিষ্ঠা থেকে একটি অঙ্গুষ্ঠি তার হাতে দিয়ে বললেন, "কল্যাণ হোক তোমার।"
আনা হল তাদের। রাণী বললেন তাদেরকে আলাদা আলাদা কক্ষে দশ বছরের জন্য নির্বাসিত করা হোক। কেউ যেন কারোর মুখদর্শন না করে। রাজাও সম্মতি জানালেন। বললেন, তাই হোক।
তাই হল। রাজার চার অবৈধ সন্তান তাদের মায়েদের সাথে পৃথক পৃথক কক্ষে বড় হতে লাগল। আর রাজগৃহে মুক্ত পরিবেশে বড় হতে লাগল রাজার বৈধ সন্তান। নাম রাখা হল – সুকুমার।
দশ বছর কেটে গেল। রাণী হুকুম দিলেন চার অবৈধ সন্তানকে পাঠানো হোক দেশের নানা প্রান্তে একা। একজনকে পাহাড়ে, একজনকে জঙ্গলে, একজনকে সাগরের তীরে, আরেকজনকে মরুভূমিতে। আর সুকুমার করবে অধ্যয়ন রাজ শিক্ষককূলের সমীপে। দেশ-বিদেশ থেকে বই আনা হল, মানচিত্র আনা হল। আরো শিক্ষার কত সরঞ্জাম আনা হল। আর তাদের পাঠানো হল দেশের নানা প্রান্তে। তাদের মায়েরা কেঁদে কেঁদে অন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু রাণী বললেন, "ওদের শিক্ষা হবে প্রকৃতির কোলে, অবৈধ শিক্ষা।" রাজা বললেন, "তথাস্তু।" আদেশ হল, পনেরো বছর পর ফিরে এসে তারা তাদের অধীত বিদ্যা রাজার সকাশে নিবেদন করবে। তারা বলল, তাই হোক।
পনেরো বছর কেটে গেল। তারা ফিরে এলো। গোপন কক্ষে তাদের সাথে রাজা মিলিত হলেন। সাথে তাদের মায়েরা। তাদের মায়েরা আবার দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে রাজবৈদ্যের চিকিৎসায়। রাজবৈদ্য তাদের চোখে নানা প্রাণীর চোখ বসিয়ে দিয়েছেন। সেই গোপন কক্ষে রাণী এলেন সুকুমারকে নিয়ে। সবাই বসল গোল হয়ে রাজার সামনে। রাজা বললেন, "একে একে এসে আমার সামনে দাঁড়াও, নিজের অধীত বিদ্যা সংক্ষেপে বলো।"
প্রথমে এসে দাঁড়ালো যে পাহাড়ে গিয়েছিল। তার মায়ের চোখে পাহাড়ি ছাগলের চোখ বসানো। তিনি নীরবে আশীর্বাদ দিলেন পুত্রকে। সে বলতে লাগল,
“মহারাজ পাহাড় অতীব কঠিন স্থান। পায়ের তলায় কঠিন পাথর। বর্ষাকালে যা পিচ্ছিল। শীতকালে যা কুয়াশাচ্ছন্ন। ভূমিকম্পে যা প্রাণঘাতী চঞ্চল প্রস্তরকূলের হিল্লোল। বিষধর সর্প, হিংস্র জন্তুর আবাস এই পাহাড় মহারাজ। তবে মনোরম তার সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয়ের মুহূর্ত। বরফাবৃত শ্বেতচূড়ার দৃশ্যও অতীব মনোরম মহারাজ। আর নানা পক্ষীর কূজন, সুস্বাদু ফলের সমাহারের কথা কি আর বলা, মহারাজের পুণ্য চরিত্রের শোভায় সবই মনোরম।”
মহারাজ খুশী হয়ে তাকে রাজ অঙ্গুরী দিলেন তর্জনী থেকে খুলে। তারপর বললেন, "পরের জন এসো।"
এবার এসে দাঁড়াল যে সমুদ্রের তীরে পনেরো বছর কাটিয়ে এলো। তার মায়ের চোখে হাঙরের চোখ বসানো। তিনি মুগ্ধ হয়ে পুত্রের দিকে তাকিয়ে। পুত্র ঋজু শরীরে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করল,
“মহারাজ, সমুদ্র অতি গভীর ও অসীম। আকাশের মত। আকাশে যেমন পক্ষী নির্দিষ্ট দূরে গেলে দৃষ্টির অগোচর হয়, তেমনই সমুদ্রের বুকে কোনো প্রাণী জলরাশি আবৃত হয়ে গোপনে বসবাস করে। আমি কুম্ভক ও রেচক যোগে বহুবার সমুদ্রের তলায় দীর্ঘকাল বসবাস করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। সেই জলরাশির তলায় এক আলাদা জগৎ মহারাজ। সেখানে গুল্ম, লতা, বৃক্ষ থেকে আরম্ভ করে নানা ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ প্রাণীর সমাহার। তারা কেউ কোমল মধুর স্বভাবের, কেউ হিংস্র মহারাজ। সেই নোনতা জলেই তাদের জীবনচক্র সমাধা করে সেই নোনতা জলেই তারা লীন হয়ে যায় মহারাজ। সমুদ্রের ঝড়, প্রবল ঢেউয়ের আস্ফালন অতীব ভয়ংকর মহারাজ, সমুদ্র তীরবর্তী নগর বহুবার ভাসিয়ে নিয়ে সমুদ্র আপন গর্ভে নিয়ে গেছে টেনে স্বচক্ষে দেখেছি মহারাজ।“
মহারাজ চিন্তিত মুখে বললেন, "বেশ।" তারপর মধ্যমা থেকে খুলে আরেকটি অঙ্গুরী তাকে দান করলেন।
এরপর এলো যে ছিল জঙ্গলে। তার মায়ের চোখে হাতির চোখ বসানো। তিনি স্থির দৃষ্টিতে পুত্রের দিকে তাকিয়ে রইলেন। সে বলতে শুরু করল,
“মহারাজ, জঙ্গল অতীব রহস্যময়। সেখানে শিকার আর শিকারীর ক্রীড়া দিবারাত্র সংঘটিত হয়ে চলেছে। পাতার ফাঁকে, গুহার মধ্যে, বৃক্ষের কোটরে, খোলা প্রান্তরে, জলাশয়ে। একটু অসতর্ক হলেই জীবন নাশ মহারাজ। তারই মধ্যে ছয় ঋতু তাদের অপরিসীম সৌন্দর্যের শোভা নিয়ে চারদিক ভরিয়ে তোলে। বর্ষার ধারাপাতের ধ্বনি। শীতের শিশিরপাতের মূর্ছনা। বসন্তের নানা পুষ্পের সমাহার, যেন স্বর্গকে মর্ত্যে আহ্বান করে নিয়ে আসে মহারাজ। নানা অমৃতোপম ফলের স্বাদ প্রাণের স্ফুর্তিকে উচ্ছল করে তোলে মহারাজ। অবশ্য বিষফলও আছে। তবু বনদেবী ও আপনার পুণ্যবলে সবই বড় মাধুর্য ও কল্যাণময় মহারাজ সেখানে।”
মহারাজ স্মিত হেসে অনামিকা থেকে রাজ অঙ্গুরীয় খুলে তার হাতে দিল।
শেষে এলো যে কালযাপন করেছে মরুভূমিতে। তার মায়ের চোখে মরুভূমির বিষাক্ত সাপের চোখ বসানো। তিনি সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পুত্রের আন্দোলিত দেহের দিকে তাকিয়ে তার অবয়ব বোঝার চেষ্টা করলেন। সে বলতে শুরু করল,
“মহারাজ মরুভূমি বড় শুষ্ক, নির্দয়। সেখানে প্রাণধারণের অনুকূল প্রায় কিছুই নাই। না জল, না বৃক্ষের ছায়া, না মধুর সুমিষ্ট ফল, না মেঘের ছায়া। সেখানে বালুঝড়, সেখানে মরীচিকা, সেখানে অসীম তৃষ্ণা। তবু তার মধ্যেও প্রাণীকূল ও কিছু উদ্ভিদ নিজের প্রাণধারণের নানা কৌশল আবিষ্কার করেছে মহারাজ। আমিও তাদের অনুকরণ ও অনুসরণ করে প্রাণধারণের নানা কৌশল শিখেছি মহারাজ। আপনার আশীর্বাদে সহস্র উটের একটি শহর গড়েছি মহারাজ। কোনো মানুষ নেই। শুধু তারা আর আমি। সেই আমার জীবন নির্ভর মহারাজ।”
মহারাজ কষ্ট পেলেন। তিনি কনিষ্ঠা থেকে একটি অঙ্গুষ্ঠি তার হাতে দিয়ে বললেন, "কল্যাণ হোক তোমার।"
সবাই যে যার আসনে বসল। মহারাজ নীরবে রাণীর দিকে তাকালেন। সুকুমার মাটির দিকে তাকিয়ে বসে। তার মুখ দেখে বোধ হচ্ছে সে বিস্ময়ে, অব্যক্ত ব্যথায় নিজের বিহ্বল মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। নানা পুস্তক অধ্যয়ন করেছে সে, কিন্তু জীবন তাকে প্রত্যক্ষ কিছুই শেখায়নি। নিজেকে ক্ষীণ, দুর্বল ও হতভাগ্য যেমন তার বোধ হচ্ছে তার সাথে সাথেই তার ভায়েদের এমন সুকঠিন জীবন স্মরণ করে সে যন্ত্রণাও পাচ্ছে। জানে সে, এসবের মূলে তার মায়েরই চক্রান্ত। কিন্তু সে নিরুপায়।
রাণী বললেন, "মহারাজ, এবার স্থান বদল হোক। যে ছিল সাগরের বুকে সে যাক পর্বতে। যে ছিল মরুভূমিতে সে যাক জঙ্গলে। এই রূপে প্রতিস্থাপিত হোক একে অন্যের স্থান।" অবৈধ মায়েদের বুক উঠল কেঁপে। মহারাজ নিজের চমকিত ভাবটা গোপন করতে করতে দেখলেন সুকুমার উঠে চলে গেল সভা ছেড়ে, তার চোখ যেন সজল।
রাণী বললেন, "মহারাজ, এবার স্থান বদল হোক। যে ছিল সাগরের বুকে সে যাক পর্বতে। যে ছিল মরুভূমিতে সে যাক জঙ্গলে। এই রূপে প্রতিস্থাপিত হোক একে অন্যের স্থান।" অবৈধ মায়েদের বুক উঠল কেঁপে। মহারাজ নিজের চমকিত ভাবটা গোপন করতে করতে দেখলেন সুকুমার উঠে চলে গেল সভা ছেড়ে, তার চোখ যেন সজল।
তাই হল। মাস যেতে না যেতেই খবর এলো, যে পাহাড়ে গেল সে মারা গেল খাদে পড়ে। যে জঙ্গলে গেল তাকে খেল বাঘে। যে সমুদ্রে গেল সে গেল তলিয়ে। যে মরুভূমিতে গেল সে মারা গেল পিপাসায়।
রানী খুশী হলেন। রাজা মৌন নিলেন। তাদের মায়েরা আত্মহত্যা করল অগ্নিকুণ্ডে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে। দু'দিন পর সুকুমারকে আর পাওয়া গেল না। তার সুবিশাল গ্রন্থাগারে লক্ষাধিক পুস্তক সরিয়ে সরিয়ে দেখা হল। কিন্তু পাওয়া গেল না। অবশেষে তার শয়নকক্ষ থেকে পাওয়া গেল একটি পত্র। মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা।
রানী খুশী হলেন। রাজা মৌন নিলেন। তাদের মায়েরা আত্মহত্যা করল অগ্নিকুণ্ডে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে। দু'দিন পর সুকুমারকে আর পাওয়া গেল না। তার সুবিশাল গ্রন্থাগারে লক্ষাধিক পুস্তক সরিয়ে সরিয়ে দেখা হল। কিন্তু পাওয়া গেল না। অবশেষে তার শয়নকক্ষ থেকে পাওয়া গেল একটি পত্র। মাকে উদ্দেশ্য করে লেখা।
হে রাণী,
আপনি নির্দয়া। চতুর। আপনি আমার জননী হইলেও নন প্রণম্য। আমি চলিলাম। আমার সন্ধানে প্রবৃত্ত হইবেন না। ফিরাইতে চাহিলে আপনার সকাশে প্রাণহীন শরীর পৌঁছাইবে আমার। শুধু একটি কথা বলিয়া যাইতে চাই।
আপনি আমার ভ্রাতাদের প্রতি প্রথম যে অবিচার করিয়াছিলেন তাহা মানিয়া লইয়াছিলাম। যে কোনো ভাবেই হউক প্রকৃতি তাহাদের শিক্ষা দিবে এ স্থির বিশ্বাস আমার ছিল। কিন্তু আপনার পরের সিদ্ধান্তটি অমানবিক শুধু নহে উহা বর্বর, লক্ষ্যহীন। অতি হীন চাতুরী। আমি আপনাকে কারাগাররুদ্ধ করিয়া পিতার নিকট হইতে রাজ্যের দায়ভার লইতাম হয়ত বা। কিন্তু তাহাতে আমার শিক্ষা অসম্পূর্ণ রহিয়া যাইত। আমার ভ্রাতাদের অধীত বিদ্যাকে গ্রহণ করিতে আমায় পৃথিবীর সেই সব নির্দিষ্ট স্থানে দশ বৎসর করিয়া অতিক্রম করিতে হইবে যে সকল স্থানে তাহারা রহিয়াছিল। জীবন বিদ্যার গ্রহণে বৃদ্ধি হয় রাণী, তাহা ত্যাগ করিলে অপঘাতে শেষ হইয়া যায়। আমার ভ্রাতারা আজ মৃত এই কারণে নহে তাহারা অযোগ্য ছিল, তাহাদের অধীত যোগ্যতাকে আপনি সুকৌশলে অপমান করিয়াছেন। তাহাদের মর্যাদা উল্লঙ্ঘন করিয়া তাহাদের মৃত্যুমুখে ঠেলিয়া দিয়া আপনি বিধাতার নিকট যে পাপ করিয়াছেন তাহার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ চলিলাম।
আপনি নির্দয়া। চতুর। আপনি আমার জননী হইলেও নন প্রণম্য। আমি চলিলাম। আমার সন্ধানে প্রবৃত্ত হইবেন না। ফিরাইতে চাহিলে আপনার সকাশে প্রাণহীন শরীর পৌঁছাইবে আমার। শুধু একটি কথা বলিয়া যাইতে চাই।
আপনি আমার ভ্রাতাদের প্রতি প্রথম যে অবিচার করিয়াছিলেন তাহা মানিয়া লইয়াছিলাম। যে কোনো ভাবেই হউক প্রকৃতি তাহাদের শিক্ষা দিবে এ স্থির বিশ্বাস আমার ছিল। কিন্তু আপনার পরের সিদ্ধান্তটি অমানবিক শুধু নহে উহা বর্বর, লক্ষ্যহীন। অতি হীন চাতুরী। আমি আপনাকে কারাগাররুদ্ধ করিয়া পিতার নিকট হইতে রাজ্যের দায়ভার লইতাম হয়ত বা। কিন্তু তাহাতে আমার শিক্ষা অসম্পূর্ণ রহিয়া যাইত। আমার ভ্রাতাদের অধীত বিদ্যাকে গ্রহণ করিতে আমায় পৃথিবীর সেই সব নির্দিষ্ট স্থানে দশ বৎসর করিয়া অতিক্রম করিতে হইবে যে সকল স্থানে তাহারা রহিয়াছিল। জীবন বিদ্যার গ্রহণে বৃদ্ধি হয় রাণী, তাহা ত্যাগ করিলে অপঘাতে শেষ হইয়া যায়। আমার ভ্রাতারা আজ মৃত এই কারণে নহে তাহারা অযোগ্য ছিল, তাহাদের অধীত যোগ্যতাকে আপনি সুকৌশলে অপমান করিয়াছেন। তাহাদের মর্যাদা উল্লঙ্ঘন করিয়া তাহাদের মৃত্যুমুখে ঠেলিয়া দিয়া আপনি বিধাতার নিকট যে পাপ করিয়াছেন তাহার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ চলিলাম।
ইতি
হতভাগ্য সুকুমার
হতভাগ্য সুকুমার