বকগুলো আকাশে উড়ছিল। আকাশের মা বারবার বারণ করছিল, উড়িস না, উড়িস না এখন, আমি এইমাত্র আকাশটায় নীলরঙ লেপেছি। তা কে কার কথা শোনে। সব বকগুলো ঝাঁক বেঁধে উড়তে শুরু করল। আকাশের কাঁচা নীলরঙ লাগল তাদের সারা গায়ে। তাদের ডানার দোলায় বিন্দু বিন্দু নীলরঙ এসে পড়তে শুরু করল মাটিতে। মাটি সেই রঙ জমিয়ে একটা ফুল বানালো - অপরাজিতা।
কিন্তু বকেরা পড়ল ভীষণ বিপদে। সারা গায়ে এমন নীলরঙ মেখে তো আর বাড়ি যাওয়া যায় না! মা যে ভীষণ বকা দেবে! কি করা যায় তবে? উড়তে উড়তে নীচে তাকালো৷ ওই তো সমুদ্র! সব বকেরা ঝাঁক বেঁধে নামল সমুদ্রে। তাদের গায়ের সব নীলরঙে মিশে সমুদ্র হল নীল। তাদের গায়ের কিছু কিছু সাদা রঙও গেল মিশে, তাই তো সমুদ্রের ঢেউ যখন পাড়ে এসে ভাঙে, সে রঙ সাদা, দেখোনি?
দেখেছি তো। বললাম, এ তো গেল, সমুদ্রের কথা, তবে ওই যে সার সার নারকেল গাছের পাঁচিল দেওয়া পুকুরটা, ওর রঙ সবুজ কি করে?
সে ফ্রকে ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াল। তারপর ছাদের কার্ণিশের কাছে গিয়ে পায়ের বুড়ো আঙুলে ভর করে উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে বলল, ওই-ই পুকুরটা?
বললাম, হ্যাঁ তো।
সে খানিক ভাবল। তারপর বলল, ওই হাঁসগুলোর জন্যে তো।
বললাম, কি করে?
সে বলল, আরে মাঠের মা সবুজ রঙ লেপেছিল না মাঠে, আর ওরা ওখানে দাপাদাপি করে সবুজ রঙ মাখল... তারপর পুকুরে গিয়ে ধুয়ে নিল, ব্যস!
সে ফিরে গেল। তার ফ্রকের নীল সাদা রঙ আমার সারা ছাদ লেগে রইল। তার স্নিগ্ধ পাওডারের গন্ধ আমার ঘরময়। আমার তবে এ রঙ মোছার দায় রইল না। পুকুরের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়ায় গা ধুতে এসেছে সামনের পাড়ার এক বুড়ি। অমনি আমার মনে হল, এই কি তবে রাতে চাঁদের বুড়ি হবে? ছাদে ঘুরতে থাকা নীলসাদা রঙ বলল, হ্যাঁ... হ্যাঁ... হ্যাঁ...