কজন মানুষ আত্মহত্যার প্রাক্কালে এত স্থির, দৃঢ় সঙ্কল্পের সাথে নিজের মৃত্যুকে জাস্টিফাই করতে পারে! যদি নিরপেক্ষ আর প্রাক ধ্যান-ধারণা মুক্ত হয়ে শুনি, তবে শেষের কথাগুলো ভাবিয়ে তুলবার। সত্যিই বেঁচে থাকার অর্থ কি?
আসলে বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজতে যাওয়াটাই অনর্থের মূল। কোনো কারণ নেই। আত্মজ্ঞান, ঈশ্বরদর্শন, সমাজসেবা, ভোগ-ত্যাগ ইত্যাদি সব ধারণাতেই ক্লান্ত মানুষ। ফেসবুকেই তো দেখি কি পরিমাণ বাণী+পজিটিভিজিম+ দেব-দেবীর লাইক-শেয়ারের ধূম। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি মনের মধ্যে যত শূন্যতা বাড়তে থাকে মানুষ তত বাণী-উপদেশ কেন্দ্রিক হয়ে বাঁচতে শুরু করে। তার একটা শান্তি আছে বৈকি। কিন্তু জীবনের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি সেও দাঁড়াতে পারে না। আশেপাশে যখন সব কিছু মোটামুটি মসৃণ চলছে তখন কোনো রকমে চলে যায়। কিন্তু যেই বিগড়াতে শুরু করে সব, তখন?
আসলেই কিছু নেই। মানুষের জীবনে সব চাইতে বড় সম্পদ তার আশেপাশের সম্পর্কগুলো। সেগুলোতেই বেঁচে থাকার স্বাদ। জীবনে বড় বড় ঝড়ের সময় হাত ধরেছে কিছু মানুষ - বন্ধুরা। তার চাইতে বড় সম্পদ মানুষের জীবনে আর কি হতে পারে? পরিবার পরিজন সব থাকুক। কিন্তু এ সবের বাইরে কিছু বন্ধু থাকুক। টাইমপাসওয়ালা বন্ধু নয়। সিরিয়াস বন্ধু। বাকি সব সম্পর্কের একটা লক্ষণরেখা থাকে। একমাত্র সম্পর্ক বন্ধুত্ব যার কোনো লক্ষণরেখা নেই, কোড অব কণ্ডাক্ট নেই, সময় - অসময় নেই, শ্লীল - অশ্লীল নেই, রাখঢাক নেই।
এই মানুষটা নিজেকে মিক আর ইন্টোভার্ট বলেছেন। হয়ত সেভাবে কোনো বন্ধুও ছিল না। জানি না। যে যেখানে থাকুন, ভালো থাকুন খারাপ থাকুন, শান্তিতে থাকুন অশান্তিতে থাকুন, অভাবে থাকুন প্রাচুর্যে থাকুন, যেমনই থাকুন না বন্ধুত্বে থাকুন। নির্বান্ধব বাঁচবেন না। সেটা একটা মানসিক সমস্যা। এতবড় বিশ্ব সংসার বন্ধুহীন হয়নি এখনও। ভুল বোঝালে সে আপনার ইগো। ইগো ব্যাটা মহাবজ্জাৎ। এমন যুক্তি সাজিয়ে মাথাটা ঘুরিয়ে দেয় যে সহজ হাত বাড়ানোটা জটিল হয়ে পড়ে। দূর হোক সে। একটা গতিমান সম্পর্ক থাকুক। নিঃশর্ত বন্ধুত্বের - পরিবার পরিজন ছাপিয়ে। এতবড় অবসাদ বিষাদ নিবারক অন্তত আমার জানা নেই এ বিশ্বসংসারে।
সৌরভ ভট্টাচার্য
13 August 2017