Skip to main content

প্রচণ্ড রেগে আছে সকাল থেকে। যতবার কাছে গেছে ততবার ঠেলে সরিয়ে দিয়েছে। আজ তো গায়েও হাত তুলেছে। এখন একটা কেক দিয়েছে যদিও। কিন্তু রাগে খিদেতে স্বাদই পাচ্ছে না কেকের। মাঝে মাঝেই আঁচলটা দিয়ে মুখটা মুছছে। থুথু ছেটাচ্ছে। কেকটা গলায় আটকে যাচ্ছে মাঝে মাঝে। চোখটা যেন বাইরে ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। কোনোরকমে গিলে ফেলছে। 

    আবার নতুন পার্টি এলো। এখন অনেক দেরি। অনেক কাজ। ঘি মাখাবে। মন্ত্র পড়বে। আরো কি সব ঢং করবে, তবে নিয়ে যাবে আগুন ঘরে। 

    কল থেকে কয়েক ঢোক জল গিলে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল আবার। একটা কালো মত লোক গায়ে মেরে বলল, এবার কিন্তু খুনই করে দেব তোকে পাগলী... রোজ রোজ তোর এই ঢং ভালো লাগে না। 

    পাগলী তাকে ছাড়িয়ে হুড়মুড় করে চুল্লীর ঘরে গিয়ে ঢুকল। একটা কোণা দেখে বসল। ছেলেটাকে ওই সামনে শুইয়ে রাখল ওরা। তারপর তাকে না ডেকে, না জাগিয়ে ওই ঘরটায় ঢুকিয়ে দিল। ছেলেটা আর বেরোলো না। এক বালতি ছাই দেখিয়ে বলল, সেই নাকি সে ছেলে। 

    ওই কালো লোকটা তাকে বলল, ওই নীচে তার ছেলে আছে। ঘুমাচ্ছে। নিয়ে গেল। তার শাড়িটাড়ি খুলে নোংরামি করল। সে কিচ্ছু বলল না। আবার দু'দিন পর নিয়ে গেল। সে আবার গেল। যতবার ডাকল ততবার গেল। একবারও ছেলেটাকে দেখালো না। তারপর একদিন ডাকা ছেড়ে দিল। এখন সে একা একা নীচে নামে। ওখানে নাভি খোঁজে ডোম। কাবেরী ছেলেকে খোঁজে। একদিন পাবেই। 

    কাবেরী টানটান হয়ে বসল। ওরা আসছে। সেই আকাশ ফাটানো কান্না। কাবেরী উঠে দাঁড়ালো। দৌড়ে গিয়ে চুল্লীর বন্ধ দরজার পাশে শুয়ে পড়ল। যারা নতুন তারা ঘাবড়ে গেল। আবার অশোকের ডাক পড়ল। অশোক তাকে টানতে টানতে সিঁড়ি দিয়ে নামাতে নামাতে বলল, আজ রাতে তোকে আমি চুল্লীতে ঢুকিয়েই দেব। আজ আর কারোর কথা শুনব না। শালা মাল গলায় ঢালি। এই লাফড়া আর আমার পোষাচ্ছে না। 

    কাবেরী বাধ্য মানুষের মত নেমে এলো। অশোক এমন কথা তো বলে না। 

    রাত অনেক। কাবেরী চুল্লীর সামনে বসে। অশোক আসবে। 

    অশোক সত্যিই এলো। আকণ্ঠ চুর। কাবেরীর পাশে গিয়ে কাবেরীর কোলে মাথা রেখে শুলো। উপুড় হয়ে শুলো। কাবেরীর কোলের মধ্যে মুখটা গুঁজে, কাবেরীর কোমরটা জড়িয়ে। অশোক চীৎকার করে কাঁদছে। অশোকের স্মৃতি বেয়ে বর্ষার জলের মত বয়ে যাচ্ছে তার বউয়ের মুখ। বিগত দিনের সুখ। তাকে ছেড়ে গেছিল সে। যার সঙ্গে গেল সে ভিখারি করে পালালো। তার কাছে না ফিরে সে লাইনে গলা দিল। দেমাক ছিল রূপের। 

    কাবেরীর রুগ্ন শুকনো পিঠের চামড়ায় দাগ বসে যাচ্ছে অশোকের নখের। কাবেরী শান্ত। তার সরু সরু আঙুলগুলো অশোকের চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, নীচে চলো।