সৌরভ ভট্টাচার্য
23 March 2019
চিন্তাকে পড়তে জানতে হয়। পড়ি। সব সময় বুঝি না। আবার কে চিন্তার সুতো পাকাচ্ছে তাও বুঝি না।
চিন্তা অনেকটা বইয়ের মত। মাথার মধ্যে থরে থরে সাজানো। কোনোটা নতুন বই, কোনোটা পুরানো। কোনোটা প্রিয় বই, কোনোটা তেমন একটা প্রিয় না, মাঝারি। কোনোটা এক্কেবারেই প্রিয় বই না। তবু আছে। পোকায় কাটে না। বিস্মৃতিতে কাটে। কোনো একটা বেশ বড় সাজানো চিন্তার টুকরো স্মৃতি এসে মনটায় আনমনা দমক লাগিয়ে যায়। খোঁজ খোঁজ তখন বাকি চিন্তাটা। সে চিন্তায় কার মুখ, কার হাসি, কার চাহনি, কার কণ্ঠস্বর, কার স্পর্শ, কার চুম্বন, কার সজল আঁখি - মন হারালে কাজের গোড়া।
চিন্তা অনেকটা ফলের মত। অনুভবটা তার রস। টোকো চিন্তার টোকো অনুভব। মিষ্টি চিন্তার মিষ্টি অনুভব। আবার শাঁখ আলু কিম্বা ইডলির মত স্বাদহীন চিন্তাও আছে। ঝুরো ঝুরো চিন্তার ঝুরো ঝুরো অনুভব, সেও আছে।
আসলে মানুষের একটা কুঁজ আছে। অন্তরজগতের কুঁজ। বাকি সব প্রাণীর আছে বাইরের জগত। আমাদেরই আছে একটা অন্তর্জগতের কুঁজ। তাকে বয়ে নিয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণা। সবার অন্তর্জগতে নিজের নিজের বিশ্ব। সেখানে গ্রহণ আছে, ধুমকেতু আছে, উল্কাপাত আছে। আলো আঁধারির খেলা আছে।
কথা হচ্ছে সেই অন্তর্জগতেই সব কি আমার মনের মত? ধুর। তাও কি হয়? একটুও মনের মত নয়। নিজের মনের গতি নিজের মনের ধার ধারে না। "মন রে ওরে মন তুমি কোন সাধনার ধন, পাইনে তোমায় পাই নে, শুধু খুঁজি সারাক্ষণ"।
এখন এই হল অবস্থা। যার বাইরের প্রচুর কাজ, সে ভাবে যার কাজ নেই তার যেন মস্ত ছুটি। আহা তাই যদি হত। চিন্তার নাগরদোলায় একবার চাপলে আর দেখতে হচ্ছে না। যতই বলো, ওরে আমায় নামিয়ে দে না... ওরে কে কোথায় আছিস বাছা নামিয়ে দে না...
কেউ কোত্থাও নেই। নাগরদোলা এই উঠছে, ওই নামছে। এই নামছে, ওই উঠছে। তাকিয়ে দেখো কেউ কোত্থাও নেই। ওদিকে সুয্যি পাটে যাবে যাবে কচ্চে। দেখতে দেখতে চলেও গেল। একটা একটা তারা ফুটে উঠল সারা আকাশ। মানুষ ঘুরতে ঘুরতে বলছে, ওই সপ্তর্ষি..নামিয়ে দে না... চুমু খাব... ঊই দূরে কালপুরুষ উঠল... নামিয়ে দে না... ঘর বেঁধেছি, তাতে চাল ছাইব, বর্ষা এলো বলে... ঊই ধ্রুবতারা উঠল... নামিয়ে দে না... আমি পূজো কোব্বো, উপোস কোব্বো, যজ্ঞ কোব্বো, জগতের কল্যাণে পেরান দেব... নামিয়ে দে না... ও পিসি.. ও শিবুদা.. নামিয়ে দে না...
কেউ নামে না। চরকি ঘুরেই চলে, ঘুরেই চলে, ঘুরেই চলে। তারপর একদিন...কি জানি কি হয়.. কেউ বলে দেহ ছেড়ে সে নাকি তাও নাগরদোলা আঁকড়ে বলতে থাকে, এঁই দ্যাঁক এখুঁনো নাঁমিনি...
কেউ বলে না গো না, দেহ পুড়লেই বা মাটিতে মিশলেই সব শ্যাষ...
আমি ওসব কিচ্ছু জানি না। মাইরি বলছি। কেউ কেউ আবার দেখি, হাঁকিয়ে কলম কষিয়ে বলে, এই হল আমার শ্যাষ লেখা.. তারাই বা বোঝে কি করে কইখানে কি শেষ..
আমি ওসব কিচ্ছু জানি না। ও মন কোথায় শুরু কোথায় যে শেষ কে জানে...
একতারাটা কে বাজায় জানেন দাদা? আর জেনেই বা কি হবে? আমি কি ছাই একতারা? আমি যে সিন্থেসাইজার... কখন যে কি সুরে বাজে.. যাই হোক, এই তো জীবন দাদারা... নামিয়ে দে না বললেই আর নামাচ্ছে কে...