Skip to main content

        মনসার থানে পূজো দিতে গিয়ে মাথা ঘুরে রাস্তায় পড়ল পুষ্প। সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি। পায়ুদ্বারে ক্যান্সার। সারা শরীর ছড়িয়েছে। চিকিৎসক জবাব দিয়েছে। বরের অবশ্য হাল ছাড়ার প্রশ্ন নেই, সে হাল ধরলই বা কবে। দুটো মেয়ে, ক্লাস এইটে আর সিক্সে পড়ে।
        পুষ্প ভাবল মরছে সে। জ্ঞান আসার পর সে ভুল ভাঙল। দত্তবাড়ির রোয়াকে শুয়ে। দত্তরাও চাষী। তবে তাদের মত ভালো অবস্থা না। পুষ্পদের নিজেদের পুকুর, চাষের ক্ষেত, চারটে ভ্যান, হাস-মুরগী-গরু তো আছেই। তবু পুষ্পকে মরতে হবে। ঠাকুরপুকুরে নিয়ে যেতে বলেছিল এখানকার হাস্পাতাল থেকে। শম্ভু যায়নি। তার হাস্পাতালে গেলে গা গোলায়। পুষ্প দেওরকে বলেছিল, কিন্তু কথা উঠবে না গ্রামে? দেওয়ের সাথে হাস্পাতালে?! ছিঃ!
        কিন্তু পুষ্প মরল না। যম আর চিকিৎসক দুজনের গণনাই ভুল করে বেঁচে রইল। যদিও সে জানে তার এই অকর্মণ্য হয়ে বেঁচে থাকাটাকে কেউ ভালো চোখে দেখছে না, তবু সে বেঁচে থাকল। গ্রামের সবাই জানে তার ক্যান্সার। মাঝে মাঝেই সে এত হাগে যে শম্ভুর নাকি দুই পুকুর জল শুকিয়ে যায় ছোঁচাতে। এরকম নানা গল্প গ্রামের ছেলে, বুড়ো, বাচ্চা বউ সবাই জানে। কেউ বলে পুষ্পর পাছাটা নাকি শুকিয়ে তেঁতুলের মত হয়ে গেছে, কেউ বলে ফুলে পাকা কাঁঠালের মত হয়েছে।
        পুষ্প দত্তদের বাড়ি থেকে যখন বেরোচ্ছে তখন শুনল সে বাড়ির ছোটো বউ তার বরকে বলছে, দেখেছ পুষ্পদির পাছার পিছন পিছন কেমন পোকা উড়ে যাচ্ছে? পুষ্প নিজে বোঝার আগেই তার বাঁ হাতটা নিজের পিছনে একটা চক্কর কেটে ঘুরে এলো। একটা খড়ের টুকরো লেগেছিল শুধু, সে হয়ত রাস্তায় পড়ে যাওয়ার জন্যেই হবে।
        গ্রামে দুহপ্তা হল একটা উত্তেজনা। পুষ্প বিছানা নিয়েছে। তার পাছা থেকে নাড়িভুড়ি খাটের জাজিম বেয়ে নীচে ঝুলে পড়েছে। চক্কোতি ডাক্তার, মানে যে পুষ্পর ডাক্তার ছিল সে দশটাকা ফি বাড়িয়েছে। গোপাল পুরুতের বউ বলেছে পুষ্পদির কাজের টাকা যা পাবে তাতে একটা নথ গড়িয়ে দিতে সোনার। গোপাল পুরোহিত শ্যামলা নাপিতের সাথে দুবেলা খোঁজ নিয়ে আসে শম্ভুর বাড়ি গিয়ে। হরেন বামুন এদিকে দুবার এসেছিল, গোপাল তার বাড়ি গিয়ে আচ্ছা করে শাসিয়ে এসেছে। তবে তাকে ছোটো বামুনের কাজে নেবে বলে এসেছে। আর না বলেই বা কি করে, অমন একটা ডাগর মেয়ে মানুষ যদি পায়ে এসে পড়ে, হরেনের ইস্তিরি, তা মানবিকতা বলেও তো একটা কথা আছে নাকি?
        পুষ্প মরল। ক্যান্সারে না। বিষ খেয়ে, অসহ্য যন্ত্রণায়। তবে সে যন্ত্রণা ব্যাধি না উপেক্ষার, তা বলা কঠিন। শম্ভু কাশী গেল, অপঘাতে মৃত্যু তো! শম্ভু কাশী থেকে ফেরার পর গোপাল আর হরেন গিয়ে বলল বাড়িতে একটা নারায়ণ পূজো দিতে। শম্ভু মারতে বাকি রেখেছিল তাদের। বাজে খরচ তার কোনোদিন পোষায় না। যদিও হরেন আর গোপালের এক্কেবারে লোকসান হয়নি। গ্রামের চণ্ডীতলায় বড় করে নামসংকীর্তন যজ্ঞ হল দশদিন ধরে, কারণ পুষ্পকে নাকি দেখা যাচ্ছে যেখানে সেখানে যখন তখন। তার পাছার উপরে নাকি দুটো কচ্ছপের মত কি, সেখান থেকে নীল দুজোড়া চোখ। মনসা তলাটায় বেশি লোক দেখেছে। তাই সেই মনসাতলা ছেড়ে নতুন মনসাতলা করা হল। আগেরটার নাম হল - পুষ্পপেত্নী তলা।
        শম্ভুর একটা গরুর বাচ্চা হল এই সেদিন, শম্ভু তার নাম রেখেছে - পুষ্প। গ্রামের লোকে তার ছায়া এড়িয়ে চলে। দশদিন পর গলাকাটা সে বাছুরটাকে পাওয়া গেল পুষ্পপেত্মী তলায়। পুলিশ এলো। হরেনকে বেঁধে নিয়ে গেল। গোপাল সেদিনই রাতে বউয়ের জন্য নকল হীরে বসানো একটা নথ আর হরেনের বউকে বাড়ি নিয়ে ঢুকল। একা থাকে কি করে মেয়ে মানুষটা!
        শম্ভু এই প্রথম বাজে খরচ করল। একটা টিয়া কিনে আনল। খাঁচায় রাখল। নাম রাখল - পুষ্প।