- হাতমোছার ন্যাকড়াটা একটু এদিকে দেবে?
কুসুম ন্যাকড়াটা দিয়ে হাত মুছে, চায়ের কাপটা নিয়ে বিনতার পাশে এসে বসল। কুসুম এ বাড়িতে কাজ নিয়েছে মাস চারেক হল। কালিন্দীর এদিকে অনেক বাড়িতেই সে কাজ করেছে। বেশিদিন করে না। কিছুটা হাতে জমলেই ছেড়ে দেয়। বাড়ির লোক বেশি কিছু সন্দেহ করার আগেই। এতে তার কিছু অপরাধ মনে হয় না। স্বামী মাতাল হলে অনেক দিকে ফুটো হয়ে যায়। আর ছেলেটা এবার মাধ্যমিক দেবে। খরচ কে চালাবে?
- তুই নাকছাবিটা পরেছিস একদিনও? বিনতা ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞাসা করল।
- কোন নাকছাবি? একটা ঠাণ্ডা জল কুসুমের পিঠের দাঁড়া দিয়ে নেমে গেল।
- ছাড়। চা'টা শেষ করে কাপড়গুলো ভিজিয়ে দে।
কুসুম বাথরুমে ঢুকল। বুকটা হাপরের মত ওঠানামা করছে। ওটার কথাই বলছে কি বৌটা? চারদিন আগেই ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ারে পেয়েছে। কিন্তু জানবে কি করে? বৌদি তো তখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিল। যা হোক, বেশি ক্যাঁচাল করলে সেও ঝামেলা করে সরে পড়বে।
- আসলে ওটা আমার শাশুড়ির। ওনাকে আবার ওনার মা দিয়েছিলেন।
কুসুম খেয়াল করেনি বিনতা কখন পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে। সে শোনেনি মতন করে জোরে কল চালিয়ে দিল।
বেরোতে যাবে, বিনতা বলল, তবে কি জানিস, ওটা বেচিস না। তোকে মানাবে খুব। দেখিস আয়নায়। বরকে যে জিজ্ঞাসা করবি সে কপাল তো করিসনি। আমি বুঝি না, নিজে রোজগার করে ওই মাতালটার সাথে পড়ে আছিস কেন? ছেলেটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেই তো পারিস।
কুসুম কি বলবে বুঝতে পারছে না। কেমন গা পাক দিচ্ছে। খুব ভয় পেলে ওর এরকম হয়। দাঁড়াতে পারল না। হুড়হুড় করে বমি করে ফেলল, একদম দরজার কাছেই। অনেকক্ষণ ধরে একটা চাপা অম্বল হয়েছিল, বোঝেনি। ভীষণ টকটক গন্ধ।
কুসুম লজ্জায় তাড়াতাড়ি বাথরুমের দিকে যেতে গেল, বিনতা হাত চেপে ধরল। বলল, যা গিয়ে শো। এখনই বাড়ি যাস না। বাইরে ভীষণ রোদ।
একপ্রকার হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতেই তাকে বিছানায় নিয়ে শুইয়ে এসি অন্ করে দিল বিনতা। বমি হওয়ার পর শারীরিক অস্বস্তিটা কমেছে, কিন্তু মাথার ভিতর কি যেন একটা হচ্ছে। বৌদি তাকে কি একটা ওষুধ দিল। তার পাশে বসে আছে এখন। খুব গোলমাল লাগছে সব।
বিনতা বলল, কি জানিস তোর দাদাভাইয়ের ফোন, অর্চির ঘড়ি এগুলো অত মূল্যবান না। ও একটা গেলে হাজার একটা হবে। কিন্তু ওই নাকছাবিটা অন্য জিনিস।
হঠাৎ কি হল কুসুমের। কেঁদে ফেলল।
- তুমি সব জেনেও চুপ করে আছ? কিছু বললে না তো আমায়?
বিনতা চুপ করে। তার স্বামীর সাথে অফিসের কত কিছু বাড়িতে আসে। কত উপরি টাকা বাড়িতে আসে। সে হিসাব বুঝবে কুসুম? বুঝবে না।
বিনতা বলল, তুই ওরকম একটা গড়িয়ে নিবি, আমি টাকা দিলে?
হঠাৎ কলিং বেল বাজল। কুসুমের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। পুলিশ!
বিনতার বুকটা ধড়ফড় ধড়ফড় করতে লাগল। সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, কাকে চাই?
- আপনি মিসেস মিত্তির?
- হ্যাঁ, কুসুম তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বিনতা কুসুমের হাতটা চেপে ধরল নিজের হাতে। কুসুম অবাক হয়ে বিনতার মুখের দিকে তাকাল। এত ফ্যাকাসে কেন বৌদির মুখটা?
- আসলে আমরা ওই উপরের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক যিনি গায়ে আগুন দিয়েছিলেন ওনার ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করব।
বিনতা কিছুক্ষণ থেমে বলল, ভিতরে আসুন। কুসুম একটু চায়ের জল চাপাও।
(ছবি - সুমন)