Skip to main content
মূর্তিগুলো

এই মূর্তিগুলো দুদিন আগেই মণ্ডপ আলো করেছিল। মন্ত্র, স্তব, আরতি, ভোগ, মালা, চন্দন, ভক্তি - সব এই মূর্তি কেন্দ্র করেই (অশালীন আচরণ ভক্তির নামেও প্রবল, সে না হয় অপসংস্কৃতি। তা তো শাস্ত্রে লেখা ছিল না।)
        আজ সেগুলো সার দিয়ে গঙ্গার তীরে রাখা। মাটির সাথে মিশে যাবে, বৃষ্টির জলে ধুয়ে। তবে কি হিন্দু মূর্তিপূজক? পৌত্তলিক? তবে এরা এত অনাদরে অবহেলায় কেন?
        হিন্দু আত্মায় বিশ্বাস করে। এক অসীম, অনন্তের চিরস্থায়ী অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। সে শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্ত। সে এক হয়েও নানা। সে নিরাকার। নির্গুণ। তাই সবাকার, সবগুণ। এ বিশ্বাসের কথা। নিজের ভিতরে একটা ছুটি খোঁজার কথা।
        গঙ্গার তীরে, এই প্রাচীন প্রবহমানতার সামনে দাঁড়িয়ে মনে হয়, ক্ষতি কি? মঙ্গলই তো চেয়েছিল। মঙ্গলের একটা রূপের মধ্যেই তো নিজের কাজকে, চেষ্টাকে সাকার করতে চেয়েছিল। তবে হল না কেন? বারবার হেরে যাওয়া কেন?
        কারণ, কেউ কেউ বলল, এই মাটিই সেই অসীম। এই মূর্তিই হল ভগবান। সীমার মধ্যে অসীমকে খোঁজা ছেড়ে, সীমাকেই অসীম বলে জানা। তাকে আপ্রাণ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। অন্যের ছোঁয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রবল প্রয়াস, সব কিছুকে সঙ্কীর্ণ করে দিল। তাই ভুলটাই হল ধর্ম, আর ঠিকটা হল মিথ্যা, ফাঁকি, শূন্য। যা হাতের মুঠোয় ধরা গেল, তাই খাঁটি। আর বাকি রইল সব মিথ্যা। এরকম একটা ধারণায় শুধু ছোটই হতে থাকলাম। যে অসীমের মধ্যে নিজে ঠাঁই পেতাম, বড় হতাম, সেই অসীমকে উপেক্ষা করে অসীমের কল্পনাকে অতিবাস্তব করে সব কিছুর সাথে নিজের চারধারে পাঁচিল তুলে নিজেকে একই সাথে সুরক্ষিত করলাম আর বনসাইও করলাম।

        তাই বারবার প্রজ্ঞালোক প্রাপ্ত মানুষেরা এসে বললেন, বাইরে না, ভিতরে। ধরে না, ধরা দিয়ে। চিন্তায় নয়, অনুভবে। দৃশ্যে নয়, দিদৃক্ষায়। পেয়ে না, হারিয়ে। ভেদে নয়, অভেদে।
        একি কল্পনা? যদি কল্পনা হত, তবে রোহিঙ্গার একটা মৃত সন্তানকে বুকে জড়ানো মায়ের ছবিটা অমন বুকে এসে বাজত না। সে তো বিসর্জন নয়! সে হাহাকার! সে তো মাটি নয়! সে শরীর - জীবনের প্রবহমানতার অববাহিকা। একবিন্দু জল কোথাও দূষিত হলে, সে দূষণ সর্বত্র ছড়াবে। বাঁধের আয়ুষ্কাল হয়, নদীর বেগের নয়।
        সহমর্মিতা কল্পনা না। সেটা বাদ দিলে বাকি জীবনটাই কল্পনা, জীবনের ছায়া, জীবন না।