অনেকবার তোমার আমার মুখোমুখি হয়েছে। আমার বিশ্বাস, তুমি জানতে। মায়ের শেষের দিনগুলোতে, যখন আধশোয়া বিছানায়, চোখ বন্ধ, আমার হাতে ধরা স্যুপের বাটি, চামচ... সেই নির্জন নির্বান্ধব শূন্যতায় তুমি, "অ্যায় মালিক তেরে বন্দে হম"... কিম্বা "হাম মনকি শক্তি দে না"... কিম্বা মায়ের প্রিয় 'পাকিজা'র গানগুলো... "চলতে চলতে"... তুমি না থাকলে মাকে সেদিন স্যুপ খাওয়াতাম কি করে? আমার মনে হত তুমি সত্যিকারের আমার পাশে বসে বলছ, আমি আছি, তুই খাওয়া.. এত ঘাবড়ে যাস না...
তারপর যখন শূন্য হল সব, সেই গানগুলো থেকে গেল, যারা মাঝে মাঝেই বেজে যেত আমার ইয়ারফোনে... তুমি আবার উৎসাহ দিয়ে বলতে, কিচ্ছু হারায় না... ধৈর্য রাখ... জীবন নিজেই শিখিয়ে দেয় জীবনের চলার পথ...
তোমার জীবনী আমি পড়িনি। কিন্তু এত এত গান, এত এত ভাবের শুনেছি, শুনতে শুনতে মনে হয়েছে, তুমি সব বোঝো। টিভির পর্দায় যতবার তোমায় দেখেছি, কি শান্ত, স্থির, নম্র তুমি। যেন সব আবেগের শেষে এই শান্ত থাকাটাই বড় একটা কথা।
তোমার গলায় আমি কোনোদিন বিষাদ শুনিনি। বা নঞর্থক ভাব জাগেনি কোনোদিন। যেমন জাগে না আমার রবিশঙ্করের সেতারের ছড়ে। মনে হয় সব ঠিক হয়ে যাবে, আমায় শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
দুঃখ আছে। সে শিল্পী হারানোর না। আত্মীয় চলে যাওয়ার শোক। এ অবশ্যম্ভাবী। হবেই। নইলে অতগুলো নির্জন মুহূর্ত মিথ্যা হত। তা কি হয়? অনেক কোলাহল, প্রতিশ্রুতি অবশেষে মিথ্যা হয়, কিন্তু নির্জন একাকীত্বের মুহূর্ত কোনোদিন মিথ্যা হয় না। আজ সে মুহূর্তগুলো ঘিরে তোমার স্মৃতিরা। সে কি মিথ্যা হয় কোনোদিন!
সারা ভারতের রাষ্ট্রীয় শোকের সঙ্গে, তাই আজ আমাদের অনেকের ব্যক্তিগত শোক আজকে। যাদের একাকীত্বের মুহূর্তে তুমিই ছিলে, সান্ত্বনা হয়ে, সুখ হয়ে, বিশ্রাম হয়ে, আশা জাগিয়ে, ভরসা হয়ে। প্রণাম।