Skip to main content

মুদির দোকানটা আমার স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় পড়ত
বয়ামে অনেক কিছু থাকত
 আমার চোখে পড়ত শুধু চানাচুর
দোকানের কাকু যে
   সে সবাইকে চিনত
       নামে নামে চিনত
দোকানে খদ্দের হত কম
 সবাই বলত, ওর দোকানে সব বাসি মাল
কাকু খবরের কাগজ পড়ত
  রাস্তার লোক দেখত 
     চা খেত, আবার খবরের কাগজ পড়ত
   আবার লোক দেখত
সত্যিই খদ্দের হত কম
    ভীষণ কম 
দিন গেল
  স্কুল ফুরালো
       হঠাৎ একদিন শুনলাম
              কাকুর নাকি ক্যান্সার
  কাকুর শরীর ভাঙল
      আমার সাইকেলের স্পিডও বাড়ল
   দাঁড়াবার সময় কই! 
তবু মনে হত
   এমন শান্ত নিরীহ একজন মানুষকেও ছাড় দেয় না বিধি! 
     কটা লোক দেখাকেও কেড়ে নিতে হয়?
  সে তো ডাকাত চোর জোচ্চর কিচ্ছু হয়নি
  না হয়েছে নেতা মহাপুরুষ বা নায়ক টায়ক কেউ
    যে বড্ড নাকি চোখে পড়ে
         নজর লাগে
এমন ছা পোষা নিরীহ মানুষটাকেও আনা হল খাটে শুইয়ে
    গায়ে নামাবলী চাদর
       বুকে গীতা,
      বন্ধ চোখে কালো চশমা
         টানটান হয়ে শুয়ে
কত লোক চারপাশে
   যারা কেউ খদ্দের হতে চায়নি
         সবাই বলল, কি ভালো ছিল দাদা!
   কেউ বলল না, বাসি মাল বেচে দিন কাটাত
দোকান রইল বন্ধ দিন পনেরো
   একদিন দেখি একজন রোগা মহিলা বসে
   উদাস চোখ, আড়ষ্ট চালচলন
       কাকিমা!
কাকিমা কাগজ পড়ে না
  সারাদিন শুধু মাথা নীচু করে ভাবে
        দাঁড়ালাম একদিন, 
              জিজ্ঞাসা করলেন
                     "কি নেবে?"
  এতো দোকানির স্বর নয়!
     এতো লক্ষ্মীপুজোয়
      পাড়ার কাকিমার গলা
            "লুচি নেবে আরেকটা?"
  বললাম, চানাচুর আড়াইশো
  কাঁপা কাঁপা হাতে পাল্লা মাপলেন
     সলজ্জ ঠোঙায় চানাচুর ভরলেন সন্তর্পণে
     দোকানের দেওয়ালে কাকুর ছবি
          লোক দেখছেন
      আমায় দেখছেন
           কাকিমাকে দেখছেন
  বুঝলাম মৃত্যু সব নেয় না
      এ কথাটা কি করে যেন
          টের পেয়েছে মানুষ
     তাই চন্দন মাখিয়ে পাঠিয়েও
          আঁচল বিছিয়ে অপেক্ষা করে ফিরে আসার
     ফিরে আসেও
           অন্য দরজা দিয়ে 
               মৃত্যু যার নাগাল পায় না

Category