এতক্ষণ সব শান্ত ছিল
এই খানিকক্ষণ আগে অবধিও
ঝড়টা উঠবে উঠবে করে উঠল না যখন
মেজাজটা চড়িয়ে মাঠে এসে দাঁড়ালো
বাড়ির সব চাইতে রোগা বউটা
যার জন্য সবার অশান্তি
কারণ তাকে নিয়ে কোনো সমস্যা নেই,
আর সেও কারোর অশান্তিতে নেই
মাঠে এসে রোগা বউটা
চীৎকার করে গরুটাকে ডাকল।
গরুটা এলো না।
বউটা পুকুরধারে গিয়ে বসল।
গরুটা এলো।
বউটা পুকুরের মধ্যে নেমে যেতে যেতে বলল, আজ মরেই যাব।
গরুটা গলার ঘন্টা দুলিয়ে দুলিয়ে ঘাসে মুখ দিল। সন্ধ্যের সূর্য এক ধামা লাল মুড়ি ছড়িয়ে বলল, মরবি যদি এত দেরি করে এলি কেন লো.... আমি দেখতে পাবনি.... ওঠ ওঠ.... কাল সকালে তোদের উঠানের ধুতরোফুলটা ফুটবে.... আমি দেখতে আসব.... কেমন?
রোগা বউটা ডুবতে ডুবতে বলল, আমার যে কি ভালো লাগে ওর রঙ.....
নীল আকাশ বলল, তুমি আবার ওর ফল গিলো না যেন, নীল বিষে আমার শরীর জ্বলে গেল…. এ তোমার সহ্য হবে না….
বউটা বলল, মর মর… একই শরীরে চাঁদ, সূর্য, তারা, মেঘ…. কেচ্ছা… আমার ওটাও মরে না…. তুমিও মরো না…. আমার শখ হয়, খুব শখ হয়, একদিন সকালে দরজা খুলে দেখি তুমি মড়া এক শালিখ হয়ে আমার দরজার সামনে পড়ে… তোমার পাশে মরে পড়ে আমার বর… মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে ভাতের ফ্যানের মত….. দেব উনুন থেকে দুটো জ্বলন্ত কয়লা এনে মুখে গুঁজে… জন্ম জন্ম মাগীপাড়ায় থাকা বেরিয়ে যাবে….
গরুটা আড়চোখে দেখে বলল, অত সকালে কে তোর জন্য উনুনে আঁচ দিয়ে বসে থাকবে লো…. যত রাজ্যের মিথ্যাকথা…..
বউটা চুপ করে থাকল… জলে দুই হাতে ঢেউ তুলে বলল, একটা বাজল এখনও বান এলো না…. দুটো বাজল এখনও ও এলো না….
গলা ধরে এলো। বাতাস বলল, কাঁদিসনি…. এত দীর্ঘশ্বাসে পুড়ে মরিস না কেন….
রোগা বউটা গলা জলে দাঁড়িয়ে। ঝিঁঝি ডাকছে। সন্ধ্যে হল। চাঁদের আধখানা খেয়েছে উইপোকার। সেই পোকায় কাটা গা নিয়ে উঠে বলল, হ্যাঁ রে মরিসনি আজও?!…. যা যা…. বাঁজা মেয়েমানুষ…. লজ্জাশরম নেই…. যা যা…. বাড়ি যা…. মরবি যেদিন পুজো দেব তোর নামে….. ওই অশ্বত্থের গোড়ায়…. ঘেঁটু ঘেঁটু কার ঘেঁটু…..
ঝড় উঠল। তাড়াতাড়ি গরুটাকে নিয়ে বাড়ি এলো, বাড়ির সব চাইতে রোগা বউটা। যে খায় না, ঘুমায় না, হাগে-মোতে না, বাচ্চা বিয়ায় না… শুধু বেঁচে থাকে….. ঝোপঝাড়ের পোকার মত..
রোগা বউটা ঘরে এলো। তার ঘরে আলো নেই। আলো ভালো লাগে না। সব দেখা যায়। একা ঘর। একা সে। সব স্পষ্ট হয়ে যায়। অন্ধকার পরপুরুষ। গোটা শরীর রগড়ায়, আদরের মত। আদর নয়। আদর কেন করবে? সেকি দুধ দেওয়া গরু? না ডিম দেওয়া মুরগী!
একদিন বউটা সত্যি সত্যিই মরে গেল। একটা ছোটো খাটে, একটা ছেঁড়া শাড়ি পেতে, আরেকটা ছেঁড়া শাড়িতে জড়িয়ে তাকে যখন শোয়ানো হল…. মনে হল বাতাসের গায়ে কেউ যেন আলপনা দিচ্ছে….
ধুপ জ্বালানো হল।
বাতাস বলল, আয়, সাবধানে। সূর্য বলল, মুখটা ঢাক না মাগী, কান্না লাগছে যে। ধুতরো বলল, আদর রইল। গরুটা বলল, ওই পুকুরধারের ঘাসগুলো তিতা….
চাঁদ অনেক রাতে এলো। ওর ঘরের জানলা দিয়ে ঢুকল। অন্ধকারকে বলল, একটু সরে বসো না।
একটা দীর্ঘশ্বাস বলল, মড়া শালিখটা আসেনি… না?