Skip to main content

শীতকালে সবাইকে সুখী লাগে। এমনি এমনিই লাগে। এত মেলা, এত উৎসব, এত সাজ, এত গরিমা, এত আনন্দ। সবাই সুখী। অনায়াসে সুখী।

এমনকি রাস্তার ধারে, চাদর, কাঁথা গায়ে শুয়ে থাকা মানুষটাকেও সুখী লাগে। ওর পাশে শুয়ে থাকা কুকুর দুটো সুখে কুঁকড়ে।

ঠেলা গাড়িটা মন। কুয়াশা মাখা রাস্তাটা মন। খোলা মাঠে অন্ধকার গুটিসুটি মেরে বসে ঘাসেদের নিয়ে, সেও তো মন। চারদিকে ছড়িয়ে যা কিছু, সবই তো মন।

কাজের বেলায় লাটাইয়ের মত করে মনটা গুটিয়ে আনতে হয়। তারপর এই রাতের বেলা সব সুতো খুলে গোটা সংসারে ছড়িয়ে পড়ে। জড়িয়ে পড়ে সব নিয়ে। তখন আমি নেই, শুধু আমার মন।

হঠাৎ এসে একটা পাখি বসল তারের উপর। পাখিটা বসল এসে মনের উপর। মন বলল, আমি চিনি ওকে।

আমি বললাম, কি করে?

মন বলল, আমি সবাইকেই চিনি। আমার মধ্যে একটা কোকুন। ব্যথার কোকুন। তুমি জানো না। তুমি তোমার চিন্তায় মশগুল। আমি তোমার থেকে তোমায় ছাড়িয়ে আলাদা। তুমি আমায় বাঁধতে চাও। আমার সাজাতে চাও। আমি চাই না। আমি শূন্য নিয়ে বাঁচি। তুমি শূন্যকে পাও ভয়। আমি শূন্যে জন্মাই, শূন্যেই হই লীন। আমার কোনো আশা নেই, আকাঙ্ক্ষা নেই।

মন সংবেদনশীল মানে বিষণ্ণ। শূন্যতা মানে বিষণ্ণতা। কিন্তু বিষণ্ণ মানে কি? অতৃপ্তির পায়ে অস্থিরতার নূপুর। আমি চাই সুখ। মন বিষণ্ণ। আমি চাই তৃপ্তি। মন অতৃপ্ত। আমি চাই শান্তি। মন অস্থির। আমি চাই অর্থ। মন অর্থশূন্য।

মন শূন্যের দিকে টানে। বুদ্ধি অর্থের পর অর্থ বানিয়ে জাল বোনে। বাসা বাঁধে। শূন্য জিতে যায়। বুদ্ধি হার স্বীকার করে না। বুদ্ধি বিষণ্ণ অস্তিত্বকে বলে, এই আমার বেঁচে থাকার তত্ত্ব, আমার বিষাদবাদ।

আমি আত্মমগ্ন বুদ্ধির হাতটা ঘুমন্ত মানুষের শিথিল হাতের মত ছেড়ে বাইরে আসি। শূন্যের সামনে দাঁড়াই। যে শূন্যতা মানে মন। এক আকাশ তারা নিয়ে অন্ধকার পড়ছে শূন্যের নামতা। অবশেষে সব শূন্য। বুদ্ধি না। যুক্তি না। কোনো অন্বেষণ না। শুধু স্থির দাঁড়িয়ে শূন্যের সামনে। আমি না, মন। যে মন অনাদিকাল থেকেই শূন্য। যে শূন্যের সাক্ষী আনন্দ।