সৌরভ ভট্টাচার্য
3 October 2019
ভিড় ছিল
লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
ভগবানের অপেক্ষা করতে করতে
মাথাটাথা ঘুরে, চোখে অন্ধকার দেখে
মাটিতে বসে পড়ল
লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
ভগবানের অপেক্ষা করতে করতে
মাথাটাথা ঘুরে, চোখে অন্ধকার দেখে
মাটিতে বসে পড়ল
মানুষটা
তারপর ধাক্কা খেল
লাথি খেল
গালাগাল কিছু জানা
কিছু অজানা
শুনতে শুনতে দরদর করে
ঘামতে ঘামতে
লাথি খেল
গালাগাল কিছু জানা
কিছু অজানা
শুনতে শুনতে দরদর করে
ঘামতে ঘামতে
মানুষটার মনে পড়ছিল
ছোটোবেলায় শোনা রেডিওর মহালয়া
পাশের বাড়ির
ছোটোবেলায় শোনা রেডিওর মহালয়া
পাশের বাড়ির
অবশেষে যখন
অনেকক্ষণ পর
স্বেচ্ছাসেবকদের কব্জীর জোরে
ডাক্তারের টেবিলে তাকে শোয়ানো হল
ডাক্তার লিখতে লিখতে
কল্পনায় নিজেকে ছোট্টো
এক টুকরো খবরে দেখতে পেল
"হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন"
অনেকক্ষণ পর
স্বেচ্ছাসেবকদের কব্জীর জোরে
ডাক্তারের টেবিলে তাকে শোয়ানো হল
ডাক্তার লিখতে লিখতে
কল্পনায় নিজেকে ছোট্টো
এক টুকরো খবরে দেখতে পেল
"হাসপাতালে আনার পর ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন"
লোকটা গ্লুকোজশূন্য শরীরে
চোখ টিপল পুট করে
ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে
চোখ টিপল পুট করে
ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে
তারপর আশ্বিনের বাতাসে
কমলা স্ট্রিটলাইটের আলোয়
কাশের দোলের মত দুলতে দুলতে
কয়েকটা হলুদ কমলা
এলোমেলো সাজানো গাঁদা
আর সাদা চাদরের তলায় শুয়ে
চোখ মেলে আকাশের দিকে তাকালো
কাগজে বলেছে
পুরো পুজোটাই এরকম মেঘ-বৃষ্টি থাকবে
কমলা স্ট্রিটলাইটের আলোয়
কাশের দোলের মত দুলতে দুলতে
কয়েকটা হলুদ কমলা
এলোমেলো সাজানো গাঁদা
আর সাদা চাদরের তলায় শুয়ে
চোখ মেলে আকাশের দিকে তাকালো
কাগজে বলেছে
পুরো পুজোটাই এরকম মেঘ-বৃষ্টি থাকবে
আড়চোখে খাটের পিছনে পিছনে আসা
সাতাশ বছরের স্ত্রী,
ছ বছরের মেয়ে,
পাঁচ বছরের ছেলে
চার বছরের মেয়েকে
দেখতে দেখতে মনে পড়ল
৫৩০৪৯ আর ৫৩০৫০
মোকামা প্যাসেঞ্জারের কথা
যেদিন বিহারের গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় পা দিল
সেদিনের কথা
সাতাশ বছরের স্ত্রী,
ছ বছরের মেয়ে,
পাঁচ বছরের ছেলে
চার বছরের মেয়েকে
দেখতে দেখতে মনে পড়ল
৫৩০৪৯ আর ৫৩০৫০
মোকামা প্যাসেঞ্জারের কথা
যেদিন বিহারের গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় পা দিল
সেদিনের কথা
সবাইকে চলে যেতে হয়
তবু হাওড়া স্টেশান ছেড়ে
আর খানিকবাদেই
ছেড়ে যাবে মোকামা প্যাসেঞ্জার
তাকে না নিয়েই
তবু হাওড়া স্টেশান ছেড়ে
আর খানিকবাদেই
ছেড়ে যাবে মোকামা প্যাসেঞ্জার
তাকে না নিয়েই
সে চোখ বন্ধ করে কল্পনা করল
মোকামা প্যাসেঞ্জার তারাভরা আকাশের নীচে
ব্যাণ্ডেল স্টেশানে এসে দাঁড়িয়েছে
তার পরিবারের খোঁজ করতে
ড্রাইভার আর গার্ড নেমেছে দুজন
মোকামা প্যাসেঞ্জার তারাভরা আকাশের নীচে
ব্যাণ্ডেল স্টেশানে এসে দাঁড়িয়েছে
তার পরিবারের খোঁজ করতে
ড্রাইভার আর গার্ড নেমেছে দুজন
কারা যেন বগির ভিতর থেকে চীৎকার করে বলছে
"কাদের খুঁজছ তোমরা?
ওদের নথিপত্র কই?
কিসের মাংস খায়?
প্রার্থনা না আজান?
বোরখা না শাড়ি?
সুন্নত না পৈতে?"
ওদের নথিপত্র কই?
কিসের মাংস খায়?
প্রার্থনা না আজান?
বোরখা না শাড়ি?
সুন্নত না পৈতে?"
হঠাৎ
মোকামা প্যাসেঞ্জারের ইঞ্জিন ছুটতে শুরু করল
পুরো ট্রেন নিয়ে
ড্রাইভার আর গার্ড
বড় বড় টর্চ নিয়ে তখনও খুঁজে চলেছে
যে টর্চের ব্যাটারি ফুরিয়ে এসেছে প্রায়!
মোকামা প্যাসেঞ্জার ছুটছে
অশরীরী ড্রাইভারের ইশারায়
তারারা ফিসফিস করে বলছে
লাইন ফিসফিস করে বলছে
বাফারেরা ফিসফিস করে বলছে
অশরীরী ড্রাইভারের ইশারায়
তারারা ফিসফিস করে বলছে
লাইন ফিসফিস করে বলছে
বাফারেরা ফিসফিস করে বলছে
কি বলছে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে না
নিভে যাওয়া হেডলাইট শুধু বলছে
ভয় নেই, আমি চিনি পথ!
ভয় নেই, আমি চিনি পথ!
মানুষটাকে কেউ খাট থেকে নামাল না
সে আগুন আর মাটির
দ্বন্দ্বে পাথর হয়ে শুয়ে
তার পাশে বসে
রোগা ছিপছিপে লাঠি হাতে একটা লোক
বিষন্ন
টাকার ছবিতে যেমন হাসে
তেমন নয়
সে আগুন আর মাটির
দ্বন্দ্বে পাথর হয়ে শুয়ে
তার পাশে বসে
রোগা ছিপছিপে লাঠি হাতে একটা লোক
বিষন্ন
টাকার ছবিতে যেমন হাসে
তেমন নয়