Skip to main content

মন্দিরের ছাদে একটা শালিক বসেছিল। যেই না উড়ে গেল, গণেশ বলল, হুস্! চলে গেল।

শুনশান চারদিক। গণেশ সকাল থেকে চব্বিশটা ডিগবাজি খেয়ে ফেলেছে। আজকের মত আর করতে হবে না। সেই আনন্দেই আরো চারটে ডিগবাজি খেতে ইচ্ছা করলেও, থাক, নিয়মের বাইরে যাওয়া ঠিক নয়।

কিন্তু পেটটা টাটাচ্ছে। আসলে খিদে লেগেছে। সকালে খেয়েছে দুটো পেয়ারা। পচে যাচ্ছিল। বেছে খেতে হয়েছে। নইলে দেয় নাকি হাতে। উঁ...!!

গণেশ ধ্যান করার মত বসল। প্রায়ই বসে। কালী, দুর্গা, কার্তিক, শনি যে ঠাকুর মনে পড়ে, মানে যাদের গ্রামে দেখেছে আরকি, তারই ধ্যান করে। যদি আসে। দুটো খেতে দেয়, থুড়ি প্রসাদ দেয়। দেয় নাকি? দেয় না। জগন্নাথদা বলে, ওসব ভগবান-টগবান ফালতু কথা। ঠিক বলে হয় তো। খালি ভগবানের কানে না গেলেই হল। দেবে খচাং করে গলাটা কেটে!

গণেশ আজকে কার ধ্যান করবে ভেবে না পেয়ে মোষের ধ্যান শুরু করল। আসলে মোষটা তার খুব প্রিয়। প্রায় তারই মত গায়ের রং। লোকে বলে গণেশ যখন গড়ার, মানে মোষটার পিঠে চড়ে যায় যেন মনে হয় দুই ভাই যাচ্ছে। শুনে যে কি খুশী হয় গণেশ। মোষটা তার পিসিদের। গণেশ বিচালি কেটে দেয়, স্নান করাতে নিয়ে যায়। ওরা মাঝে মাঝে টাকা দিতে চায় তার জন্য, গণেশ নেয় না। ভাইয়ের জন্য কাজ করে কেউ টাকা নেয়!

গণেশের পিঠে সুড়সুড়ি লাগল। গণেশ পিছন ফিরে দেখে গড়া, কি আশ্চর্য, অ্যাদ্দিন ভগবানকে ধ্যান করে পায়নি, আর এ তো কয়েক মিনিট ধ্যান করতেই….

গণেশ গড়াকে জড়িয়ে ধরল। গড়া বসে পড়ল। গণেশ গড়ার পিঠে ঠেস দিয়ে বসল। বলল, তোর দুপুরের খাওয়া হয়ে গেছে? আমার হয়নি রে! দাদা-বৌদি তারকেশ্বর গেল। কে রান্না করে দেবে আমায় বল! আজ মন্দিরের ভোগও দেবে না। বলল বাড়ন্ত। ইস্... তোর মতো যদি ঘাস খেতে পারতাম। একবার খেয়েছিলাম জানিস, তারপর কি পেটে ব্যথা আর বমি! তারপর তারকদার ওষুধ খেয়ে কমল। তারকদার বাগানে দু'দিন কাজ করলাম, ব্যস্... ওষুধের দাম হয়ে গেল।

গণেশ উঠল, বলল, দাঁড়া একটু জল খেয়ে আসি। পেটটা মোচড়াচ্ছে শালা!

গণেশ কলের কাছে এসে কলে চাপ দিল। জল খেলো। গা গুলিয়ে উঠল। একবার ওয়াক্ উঠেও এলো। কান্না পেল, এতবড় গ্রামে কেউ দুটো খেতে দেবে না!

গণেশ আবার গড়ার কাছে এসে বসল। চোখটা বন্ধ করে বসে আছে। হঠাৎ ঘাসে পায়ের আওয়াজ শুনে তাকালো। পিসির ছেলে। যদুদা। তার কাছে এসে বলল, গড়াকে বাড়ি নিয়ে যাসনি কেন রে হারামজাদা!

গণেশ হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। এ কেমন কথা, তার আবার কখন গড়াকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল!

যদুদা গড়ার পিঠে চাপড় মেরে বলল… চ… চ.. বাড়ি চ…

গড়া উঠল না। যদুদা রেগে গিয়ে দুটো জোরে থাপ্পড় দিল। গণেশের রাগ হল। এমনিই খালি পেট। রাগটা চড়ে গেল। সে উঠে গিয়ে যদুর হাতটা টেনে বলল, খবরদার ভাইকে মারবে না….

যদু গণেশের হাতটা ছাড়িয়ে, তাকে মাটিতে ফেলে, পেটে দুটো লাথি মেরে বলল… ভাই… শালা পাগলের ছাতা!.....

গণেশ কিছু বলল না। বলার মত শক্তিই আসলে নেই। গড়াকে রেখে যদু চলে গেল। গণেশ পড়ে থাকল মাটিতে।

কখন দিন গড়িয়ে সন্ধ্যে হল। দু'পশলা বৃষ্টি হল। গণেশ জানলই না। গড়া সব জানল। কিন্তু বলবে কাকে?

সন্ধ্যে হল। গণেশ গড়াকে নিয়ে পিসির বাড়ির গোয়ালে বেঁধে দিল। বাইরে এলো। কেউ ডাকল না। ওদের ঘরে টিভি চলছে। সিরিয়াল।

গণেশ বাইরে এসে রাস্তায় দাঁড়ালো। কোনদিকে যাবে? কেউ তো নেই কোথাও! এখন গড়াকেও পাবে না। গণেশ ক্লান্ত শরীরটা টেনে টেনে আবার মন্দিরের চাতালে এনে ফেলল। মন্দির বন্ধ। ভিতর থেকে ধুপের গন্ধ আসছে। আজ সারাটা দিন খাওয়া হবে না। রাতেও না। গড়াকে ওরা খেতে দিক তালেই হবে। ভাই তো!

গণেশের ঘুম আসছে না। মন্দিরে যেখানে এঁটো পাতা ফেলে সেখানে গেল। কুড়িয়ে বাড়িয়ে যদি কিছু পাওয়া যায়। কিচ্ছু নেই। দুটো শুকনো খিচুড়ির দানা মুখে দিল। স্বাদ নেই। নাকি তার মুখটা টক? বুঝল না।

হঠাৎ মন্দিরের দরজা খুলে গেল। গড়া বেরোলো মন্দির থেকে। সঙ্গে দু'থালা মিষ্টি। গড়া ডাকল ইশারায়। গণেশ খেতে বসল। গড়া পাশে বসল। এত এত খেলো যে গণেশের পেটটা ফুলে বলের মত হল। গড়া ইশারায় বলল, শুয়ে যা!

গণেশ শুয়ে পড়ল।

ভোর হল। গণেশ উঠল। ঠাকুর মশায় দুটো বাতাসা হাতে দিল। গড়া? এখন তো তার মাঠে চরার সময়… কই সে?

ছুটল গণেশ পিসির বাড়ির দিকে। পিসির বাড়ি চীৎকার হচ্ছে। কে নাকি বিষ দিয়ে গড়াকে মেরে ফেলেছে। তাই হয়?

যদু তাকে দেখে তেড়ে এলো। লোকে ঠেকালো। বলল, পাগল, ওকি ওসব বোঝে….

গণেশ অবাক হল। এই তো রাতে দেখল সে গড়াকে। তবে? গড়া কি তবে ঠাকুর হয়ে গিয়েছিল কাল রাতে?

গণেশ কুমোরপাড়ায় এলো। সামনে দুর্গাপুজো, ঠাকুর বানানো হচ্ছে। মোষের গলা কাটা। অসুর বেরোচ্ছে গলা চিরে। মহিষাসুর। গড়ার পেটে কে ছিল তবে? ঠাকুর না অসুর?

গণেশকে দেখে নিতাই পাল বলল, এই এখানে কাজ করবি? দু'বেলা খেতে দেব আর মাসে একশো টাকা। অনেক কাজ, লোক নেই। তুই মাটি মাখবি।

গণেশ হাঁ হয়ে গেল শুনে। গড়া তবে ঠাকুর ছিল। নইলে খেতে দেবে কেন? সে অনেক অনেক গড়া বানাবে এখন! তার মন এত খুশী হল সে আজ ছাব্বিশটা ডিগবাজি খেয়ে ফেলল। ভয় কি? খেতে দেবে তো!