Skip to main content

লকডাউনে রাস্তায় বেরোচ্ছেন, খুব সাবধান। জানি না ভ্যাক্সিন হয়েছে কিনা, মাস্ক পরাবে কিনা আপনাকে। তবে যতটা সম্ভব দূরত্ব রাখার চেষ্টা করবেন, জানি যদিও সেটা আপনার হাতে নেই। 

    দেখুন আপনার কাছে অজানা কিছু নেই, কত কত লক্ষ মানুষ যে অসময়ে, নিদারুন যন্ত্রণায়, অব্যবস্থায় দেহ ছেড়েছে সে আপনার অজানা নয়। আপনি দু'বছর হল ভাইরাসের উপর এত সদয় যে আমাদের পক্ষে তা অসহ হয়ে উঠছে। অথচ দেখুন আপনার মন্দিরে আপনার নানাবিধ সেবার যত ঝক্কি মানুষই পোহায়। কোন ভাইরাস আপনার জন্য ছাপ্পান্ন ভোগের আয়োজন করবে? কোন ভাইরাস আপনার রথ টানবে? সব তো মানুষেই করবে। তা অত দুর্বল হলে, অত হাঁপালে মানুষ পারে এত কিছু করতে? এটা আপনি একটু ভেবে দেখবেন না?

    আর জানেন তো বহু মানুষের বাড়ি আজ লক্ষ্মীছাড়া। অন্নপূর্ণার এমন অবস্থা যে প্রতি মিনিটে এগারোজন মানুষ অনাহারে প্রাণত্যাগ করছে। মানুষের এমন দুর্দিন আজ। তবু উৎসব হবে। শৃঙ্গার আরতি স্তবস্তুতি সব হবে। আসলে আপনার চুপ করে থাকার সুযোগে মানুষ নিজের লাফঝাঁপটা করে নেয় বুঝলেন তো। ভক্তি জাগে অথচ দয়া জাগে না, এমন প্রাণ যে কত দেখলাম নাথ আপনার দুনিয়ায়। সবই বড় গোলমেলে। 

    যাক গে, আমিই বা বুঝে কি করব বলুন? আমার আপনার উপর কোনো অভিযোগ নেই। আপনার দুনিয়া আপনি যা খুশি করতেই পারেন। সমস্যা হল আপনার আশেপাশে থাকা মানুষদের নিয়ে। তারা এমনভাব করে যেন সব বুঝে ফেলেছে। সব তত্ত্ব ঘেঁটে সব জেনে ফেলেছে। হঠাৎ করে তাই আপনার জ্ঞানরূপ ছেড়ে আপনার ছায়া বড় করে তোলা হচ্ছে। মশায় জ্ঞানসূর্যের ছায়া পড়ে না, কিন্তু সে সূর্যকে আড়াল করার মোহ এদিক ওদিক। সেই মোহের বশে আপনি হয়ে দাঁড়ান স্থবির। 

    আসলে আমাদের প্রার্থনা নেই, আমাদের হুল্লোড় আছে। আমাদের একান্ত নিভৃতে বসে ধ্যান নেই, আছে ষোড়শ উপাচারের আড়ম্বর। আড়ম্বর আর উৎসবকে চলতেই হবে, সেই আমাদের ধর্মের একমাত্র ধ্বজা এখন। আমাদের প্রাণের গভীরে যে রথ, সে বহুদিন হল অবহেলায়, আবর্জনায় ভরে স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে। তার ভাষা নেই, সুর নেই, বাণী নেই। পুরাকালের আপনার ভক্তগণও মূক সাক্ষী, ভীষ্মের মত। আমাদের প্রাণের গভীর থেকে আজ আর ইঙ্গিত আসে না। সব তাড়া, সব হুজুগ, সব উন্মাদনা শুধু বাইরেটুকু নিয়েই। তবে আজ যদি আপনি এ উৎসবে সাড়া দেন, লোকে আপনাকে নিরোর সমকক্ষ বলবে প্রভু। ভাগবত বলেন, আপনাতে আর অসুরে প্রধান ভেদ আপনার অনুকম্পায়। সেই যদি না প্রকাশ পায় তবে আর কি রইল নাথ?