Skip to main content
 
 
       চারিদিকের হইচই করিয়া নারীদিবসের মোচ্ছব বুঝাইয়া দিতেছে আসলেই সমাজটি পুরুষতান্ত্রিক। আমরা আজ তোমাদের স্বীকৃতি দিতেছি। স্তবমালা রচিতে আমাদের জুড়ি নাই। আমরা যখন সতীদাহ, বিধবা নির্যাতন, বাল্যবিবাহ ইত্যাদি অত্যন্ত বিবেকী প্রথায় সমাজের বিধিব্যবস্থা করিয়াছি তখন হইতেই তাহার বহুপূর্ব হইতেই আমরা বহুবিধ নারীর স্তবমালা রচিয়াছি। দূর্গা, কালী, লক্ষ্মী, সরস্বতী... নাম করিতে করিতে আসমুদ্রহিমাচল আসিয়া পড়িবে তবু শেষ হইবে না। শুধু আমরা জানি কিভাবে স্তব করিলে নারীকূলের মন জয় করা যাইতে পারে। কিভাবে ক্ষণে ক্ষণে গার্গী মৈত্রেয়ী ইত্যাদি নামগুলি সেই কুম্ভীরের শাবকের ন্যায় সম্মুখে তুলিয়া ধরিতে হয়। এই প্রথা বহুকালযাবৎ অনুশীলন করিয়া আমরা এমন অভ্যস্ত হইয়াছি যে আপন মনে বিড়বিড় করিলেও অতি নিন্দুকের পক্ষেও খুঁত ধরা মুশকিল হইয়া পড়ে। 
       তবু নারী নারী করিয়া নৃত্য করিবার কোনো কারণ আছে বলিয়া আমার মনে হয় না। কিভাবে উহারা স্তন-নাভি ইত্যাদির ফাঁদ পাতিয়া সাধককূলকে, শুদ্ধস্বভাব পুরুষজাতকে ভ্রষ্ট করিতে পারে তাহা কি আমরা জানি না? নারী পূজার যোগ্য হইলে অসুবিধা নাই, কিন্তু নারী শয্যায় আসিলে পুরুষের সকল মহত্ব কেমন নষ্ট হইয়া যায় তাহা আমাদের সাধককূল গোত্রীয় মহাপুরুষগণ বারংবার সাবধান করিয়াছেন। নানা শাস্ত্র, লক্ষ বাণী ইত্যাদি তাহার সাক্ষ্য বহন করিতেছে। সে কথা রহুক। 
       সদ্য মাইকেল জ্যাকসনের উপর নির্মিত একটি তথ্যচিত্র নেট হইতে চুরি করিয়া দেখিলাম, লিভিং নেভারল্যাণ্ড। কি অপূর্ব কৌশলে পুরুষ মানবশাবকের সহিত নির্দোষ যৌনক্রীড়া করিয়া তাহাদের আমোদিত করিয়া তুলিতেন, নিজের যৌন বাসনা তৃপ্তি করিতেন দেখিয়া বিস্মিত হইলাম। যতই নিন্দুক উহাকে বিকার, নিপীড়ন আখ্যা দিক। কি সাংঘাতিক মানব শিশুর মূঢ়তা, দুর্বলতা। 
       নারী অবলা। তাহাকে রক্ষা করিতে হয়। সাজাইতে হয়। পূজা করিতে হয়। সম্ভোগ করিতে হয়। সীমার রেখায় পুষিতে হয়। এই কথা পুরুষ বুঝে। তাহা সে অক্ষরে অক্ষরে পালনও করে। আর নারী? তাহারাও বুঝে তাহাদের একটি নির্দিষ্ট বৃত্ত আছে আলোচনার, নির্দিষ্ট চ্যানেল আছে দেখিবার, নির্দিষ্ট সময় আছে ভ্রমিবার, নির্দিষ্ট প্রথা আছে মানিবার। ইহার অন্যথা হইলে যত না পুরুষকূল চমকিয়া উঠে, নারীকূল চমকিয়া উঠে আরো তীব্র।
       অপরপক্ষে আরেক নারীকূল, যাহারা সংখ্যায় অল্প, তাহারা সর্বক্ষণ নিজেকে নারী না ভাবিলে, কিম্বা পুরুষের প্রতি কোথাও ক্ষুন্ন হইবার, ক্রুদ্ধ হইবার, অভিযোগ করিবার অবসর না পাইলে ক্ষিপ্র হইয়া উঠে। আপন অস্তিত্ব সংকটে ভুগিয়া সান্নিপাতিক বিকারগ্রস্থ আচরণ করে। যে স্থলে মানবিক আপোষ করিলে শান্তি রহে সেই স্থলে তাহারা আপন অলৌকিক দৃষ্টির সাহায্যে শুধুই নারীর নির্যাতন দেখে। ফলস্বরূপ তাহারা ক্রমে মানুষ হইতে নারী হইয়া উঠে এবং সর্বদা পুরুষের নির্যাতনের উদাহরণ অন্বেষক হইয়া কালাতিপাত করে। তাহাদের সব রহে, কেবল শান্তিটুকু ছাড়া।
 
       আসলে একটি নীতিই সার নীতি। বুদ্ধিমান বুঝে। মূঢ় তর্ক করিয়া মরে। যখন যেমন তখন তেমন, যেখানে যেমন সেখানে তেমন ও যাহাকে যেমন তাহাকে তেমন।
সম্মুখে শান্তিকে আদর্শ করিয়া চলিলে ইহার চাইতে উৎকৃষ্ট পথ নাই। ইহাই আজ যে মহাপুরুষের জন্মতিথি সেই রামকৃষ্ণদেব সারদাদেবীকে সংসারের দ্বারে উপনীত হইবার কালে শিখাইয়াছিলেন।