ছেলেটা একলা হাঁটল অনেক দূর
মেঘের সাথে দেখা হল। সে বলল, যাবি?
ছেলেটা বলল, চল
মেঘের সাথে এক যুগান্ত হেঁটে এল
নদী বলল, যাবি?
ছেলেটা বলল, যাব
নদীর সাথে এক সমুদ্র বেড়িয়ে এল
এভাবে সে এক জঙ্গল হাঁটল গাছের সাথে
এক তেপান্তর হাঁটল দিগন্তের সাথে
এক স্বর্গ হাঁটল দেবতার সাথে
এক নরক হাঁটল অসুরের সাথে
এখন সে একলা হাঁটে
প্রজাপতির ডানার রঙে আলপনা আঁকে
ঘুঘুর ডাকে ডাকতে ডাকতে দীঘিতে যায় নাইতে
পেঁচার সাথে সারারাত জুজুবুড়ি খুঁজে বেড়ায়
ওর সুখের সাথে কারোর সুখ মেলে না
ওর দুখের সাথে কারোর বোঝাপড়া হয় না
লোকের কাছে ও একটা বালির পাহাড়
ওর কাছে সব লোক মরীচিকা
তবু ফাল্গুনের পূর্ণিমাতে কিছু একটা ঘটল
এক মেয়ে এল আমাদের নায়কের জীবনে
তাকে সে দেখল মাঠে মাঠে বীজ বুনতে
কাঁখে করে জল ভরতি কলসী নিয়ে আসতে
ছেলেটার বুকে চোরকাঁটা বিঁধল
পায়ে লাগল আলকুশি, চোখে পড়ল বালি
তার চলতে ফিরতে আদরের মত বাধা
সুখের মত কান্না। অস্থিরতার দুঃখ।
পলাশে রাঙানো চিন্তা।
সে হাঁটতে গেলে হোঁচট খায়
বলতে কথা হারিয়ে যায়
জলে নেমে মাথা ডুবাতে ভুলে যায়
ভিজে গা মুছতে ভুলে যায়
বাইরের থেকে ভিতরে দেখে বেশি
রূপের রাজ্যে অরূপ যেন এল
বসল তার খামখেয়ালীর ভাঙা ঘরে
সে মেয়েটার নাম দিল রাঙানীয়া
সে নাম সে সিঁথির মাঝে রাখল
চোখের মণিতে গাঁথল
হৃদি কলসীতে লুকালো
মেয়েটা এল তার ঘরে
সে বলল, বোসো
সেদিন আকাশ জুড়ে মেঘ
প্রেমের উপবন থেকে এল বর্ষার দূত
নামল তার ঘরকে ঘিরে ঘিরে
বাজল নূপুরের মত তার ছাদে
উপছে পড়ল কলসী
দুই কলসীর জল নামল
অলকানন্দা মন্দাকিনী
তাদের ঘরটা ঘিরে ঘিরে বাজল বাঁশি
বাজল বীণা। বাজল পাখোয়াজ।
মল্লারের সুরে সুরে ফুল ফুটল বাগানে
পাখি গাইল রাগ দেশ
বর্ষা গেল। শরৎ এল।
শীতও ধীর পায়ে নিল বিদায়।
বসন্ত এল। তাদের পাঠাল বার্তা।
তারা এল।
বসন্ত বলল, এবার তোমাদের ফেরার পালা।
তারা বিস্মিত হয়ে বলল, কোথায়?
তাদের চোখে মুখে এখনো মিলনের ঘোর
বসন্ত বলল, এবার সময় বিচ্ছেদের।
তীরবিদ্ধ পাখির মত তারা পড়ল ভূমিতলে
বসন্ত বলল, আবার খুঁজে বার করবে নিজেদের
ছেলেটা বলল, কি হবে খোঁজার সূত্র?
বসন্ত বলল, শূন্যতার হাহাকার
চিনব কি করে?
বসন্ত বলল, হারাবার আশঙ্কায়