পনেরো হাজারের মধ্যে স্মার্টফোনের সেটটা ভালোই লাগল। বললাম এটাই দিন।
প্রচণ্ড গরম। দরদর করে ঘাম হচ্ছে। দোকান ভিড়ে ঠাসা। রবিবারের ভিড়। সকাল সাড়ে বারোটা হবে। দোকানে পাঁচজন হিমসিম খাচ্ছে খদ্দের সামলাতে।
মোবাইলটা প্যাক করছে, হঠাৎ একজন মাঝবয়েসী লোক দোকানদারদের মধ্যে ঠেলে এগিয়ে এসে বলল, এটা ভালো না, নেবেন না। আপনি এই মডেলটা নিন। বলে একটা মডেল নীচে ফেলে দিল তাক থেকে। অমনি পাশের লোকটা হাইমাই করে তেড়ে উঠে বলল, কে ফেলল এটা? আমি ওনার দিকে তাকিয়ে সেই ভুঁইফোড় লোকটার দিকে আঙুল দেখিয়ে বললাম, ইনি। ভুঁইফোড় হাসল। প্রথম দোকানি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কার কথা বলছেন?
আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছে। ঘাম মুছতে রুমালটা বার করতে গিয়ে হাত থেকে পড়ে গেল। ঝুঁকে তুলে যেই দোকানের ডান দিকে তাকিয়েছি, অমনি দেখি সেই ভুঁইফোড় লোকটার ছবি, মালা দেওয়া।
আমার গলা শুকিয়ে গেছে। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে। কথা বেরোচ্ছে না। একজন দোকানি, বয়স্ক, আমায় বললেন, আপনি একটু এদিকে আসুন তো। গেলাম ভিড় ঠেলে। উনি ক্যাশে বসে। উনি আমার হাতে হাত রেখে বললেন, আমার মেজো ছেলে, গত বছর মোবাইল ফেটে মারা গেছে। আপনার হাতে যে মডেলটা, ওটাই। এদিকে দিন।
আমি মনেই করতে পারলাম না সেটটা কি করে আমার হাতে এলো, কখনই বা এলো। ক্যাশের ভদ্রলোক চীৎকার করে বললেন, এই পাঁচু, দাদার এই মডেলটা চেঞ্জ কর, আর কতবার বলেছি এই মডেলটা তুলিস না।
যা হোক আমি অন্য মডেল ২৫% ছাড়ে পেয়ে, বাদাম লস্যি দোকানির অনুরোধে খেয়ে যখন বাইকে স্টার্ট দিলাম, তখন পৌনে দুটো। বাইকের ক্লাচ ছাড়তে যাব, দেখি আয়নায় সেই মেজোছেলের প্রতিচ্ছবি, আমার পিছনেই দাঁড়িয়ে, সারা মুখ পোড়া, চোখদুটো নেই, গর্ত দুটো, মুখের অর্ধেক মাংস নেই, দাঁত কপাটি অর্ধেক বেরিয়ে।
আমি ধাঁ করে পিছনে ঘুরলাম, ক্যাশিয়ার ভদ্রলোক আমার পিছনে দাঁড়িয়ে, বললেন, আগের মোবাইলের বিলটা আপনার সাথে রয়ে গেছে...
তাড়াতাড়ি পকেট হাতড়িয়ে দিলাম। কি করে ওটা আমার পকেটে এলো তাও বুঝলাম না। উনি দোকানে ঢুকছেন যখন দেখি ওনার পিঠে ঝুলে ওনার মেজোছেলে। আমার দিকে মাথাটা ঘোরানো।
সৌরভ ভট্টাচার্য
10 June 2018