Skip to main content
 
 
মেঘের পরে মেঘ জমেছে আঁধার করে আসে...
       চারিদিকে ধ্বংসস্তূপ। কারোর বাড়ির চাল নেই। কোথাও পোস্ট ভেঙে পড়ে। না, সে সব ছবি দিচ্ছি না। তারাই অনেকে মাঠে। অনেকে পুকুর পাড়ে। অনেকে মাছ ধরা দেখতে ভিড় করে। সোশ্যাল ডিস্টেন্স না মেনেই। কিন্তু সেই নিয়েই খুব বড় একটা জ্ঞানগর্ভ আলোচনা মাথায় ভিড় করে এল না। ওদের আবার ঘর গড়ে তোলার বিশ্বাস, আবার লড়াইয়ে নেমে পড়া, আবার রুখে দাঁড়ানোর ভরসা, দুর্যোগকে মেনে নিয়ে সামলে নেবার আশ্বাস - এই তো দেখলাম। কান্নাকাটি করে মাটিতে আছড়ে পড়ে আমার ফেসবুকের পোস্টের সান্ত্বনায় কাউকে অপেক্ষা করতে দেখলাম না। আমার পাকাবাড়িতে বসে নানা কল্পনার ভয় ওদের চোখেমুখে কই দেখলাম! বেশ জমিয়ে ঝড় নিয়ে আলোচনা - কি কি হতে পারত, কি কি হতে পারত না, কি কি হলে আরো কি কি হতে পারত, কি কি ভয়, কি কি আশঙ্কা, কি কি অসুবিধা... না এসব নিয়েও কোনো কথা নেই তেমন। কারণ অবশ্যই একটাই, সময় নেই। প্রচুর কাজ সামনে। কেউ টিভি চালিয়েও বসার কথা ভাবছে না, কেউ ইন্টারনেট পাচ্ছে না বলে হা হুতাশ করছে না। সবাইকে দেখলাম ভীষণ ব্যস্ত। সত্যিকারের ব্যস্ত। নিজেকে ব্যস্ত রাখার ভাণ করছে না। ভীষণ সত্যিকারের ব্যস্ততার মধ্যেও আনন্দ, মজার, ঠাট্টার উপকরণ খুঁজছে। বাঁচতে হবে না। সে সরকার, মিডিয়া চাইলেও কি, না চাইলেও। কার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে? কতদিন থাকবে?
       তাই আমিও "আহা বেচারা" বলার থেকে নিজেকে বিরতই রাখলাম। আমার তো আর টি আর পি বাড়ানোর নেই, না তো আমার সহানুভূতির বিজ্ঞাপন করার আছে। আমি তাদের লড়াইকে কুর্নিশ জানাই। বাকি সুক্ষ্মবিচার, নানা কাজিয়া তর্জা তো রইলই।
       তবে গানের এই লাইনটা কেন মনে এলো? মাঠের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, গ্রামের থেকে যখন বেরিয়ে আসছি তখন রবীন্দ্রনাথের সেই "লোকহিত" প্রবন্ধটার কথা মনে পড়তে লাগল। "লোকসাধারণ বলিয়া একটি পদার্থ আছে", সেই পদার্থ ভাবনাটার থেকে হয় তো সত্যিই বেশিদূর সরে আসিনি। "এই লোকসাধারণের জন্য কিছু করা উচিত", এই ভাবনাটাও মাঝে মাঝে এখনও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে না যে তা নয়।
       "আমরা পরের উপকার করিব মনে করিলেই উপকার করিতে পারি না। উপকার করিবার অধিকার থাকা চাই। যে বড় সে ছোটোর অপকার অতি সহজে করিতে পারে, কিন্তু ছোটোর উপকার করিতে হইলে কেবল বড়ো হইলে চলিবে না - ছোটো হইতে হইবে, ছোটোর সমান হইতে হইবে। মানুষ কোনোদিন কোনো যথার্থ হিতকে ভিক্ষারূপে গ্রহণ করিবে না, ঋণরূপেও না, কেবলমাত্র প্রাপ্য বলিয়াই গ্রহণ করিতে পারিবে।"
       কিন্তু এই কথাগুলো বুঝতে অন্যের মর্যাদাবোধের প্রতি মর্যাদাবোধ থাকার চেয়ে তার থেকে আমার এমন জগত উদ্ধারের বিজ্ঞাপনের তাগিদ যে প্রবল, উম্পানের থেকেও প্রবল। তাই অনায়াসেই মর্যাদার সীমাবোধ লঙ্ঘন করা যায়, সামান্য হাততালির লোভে। এ লজ্জার।