Skip to main content

আমাদের ছোটোবেলায় বলতেন বড়রা, লেবু বেশি চটকালে তিতা হয়ে যায়।

     সোশ্যালমিডিয়ায় এসে নিউজমিডিয়াগুলোর আচরণ ঠিক তা-ই লাগতে শুরু করছে। একজন মানুষের অসুস্থতা, এমনকি মৃত্যু নিয়েও যে এমন চক্ষুলজ্জাহীন ব্যবসা করা যায় সেটা দেখে হতাশই হচ্ছি। বাঁচতে কি শুধু উন্মাদনা, একটা অবসেসড হওয়ার কিছু লাগে? এর বাইরে কিচ্ছু না?

    বাড়ির অত্যন্ত নিকটতম মানুষের অসুস্থতাতেও দেখেছি সে নিয়ে বেশি না কথা বলে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টাই করি আমরা। অন্তত স্বাভাবিক থাকার অভিনয়টুকু করি।

    আজ কল্যাণীর একটা সিনেমা হলে 'দোস্তোজি' দেখতে গিয়েছিলাম। প্রচুর ইয়ং জেনারেশান ছিল। সিনেমা শুরুর আগে তাদের অনেককে শুনলাম মৃত্যুর খবরটা ইয়ার্কির বিষয় করে তুলেছে। "ভাবছি অশৌচ রাখব"... "মনে হচ্ছে দু’দিন স্কুলকলেজ অফিস সব বন্ধ থাকবে"... "শুনেছি বিশ্বকাপে ফুটবল খেলাও নাকি একদিন পিছিয়ে দেওয়া হল শোকে"... ইত্যাদি ইত্যাদি। এই জায়গা অবধি খবরটাকে আনল কে?

    শোক এক জিনিস, আর শোকের উদযাপন আরেক জিনিস। আমরা কেন বারবার ব্যক্তিগত সীমাটা লঙ্ঘন করে ফেলছি এত সহজে? আমাদের সব প্রতিক্রিয়াই কি তবে মিডিয়া সেনসেসান? আসল, হৃদগত, আন্তরিক, খাঁটি বলে কিছুই থাকবে না অবশেষে? মাঝখানে তো দুজন পুরুষের ফেসবুকীয় মন্তব্য নিয়েও লড়িয়ে দেওয়া হল। যখন মানুষটা মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে। একজন দীর্ঘ মন্তব্যও লিখে ফেলছেন মৃত্যুপথযাত্রীকে পাশে রেখে? এত কিছু করা যায়? সম্ভব হয়? জানি না।

    আমরা কি সব রোমের গ্ল্যাডিয়েটারের যুগকে ফিরিয়ে এনেছি? মিডিয়া রোজ নতুন নতুন লড়াই আমাদের সামনে এনে দেবে আমরা মৃত্যু, অসুস্থতা, হত্যা সব চেটেপুটে লুটেপুটে খাব? আমরা কি রোজ সেজেগুজে গ্যালারিতে বসব? কখনও হাসব, কখনও "আহারে" বলব, কখনও হাততালিতে ফেটে পড়ব? মজার কথাটা হচ্ছে এগুলো সব কোনো শিল্প, সাহিত্যকে নিয়ে নয়, এগুলো সব হচ্ছে সত্যিকারের মানুষের একদম অন্দরমহলে ঢুকে পড়ে। কি চোখের পাতাহীন হয়ে যাচ্ছি আমরা!

    "দোস্তজি" সিনেমাটা চলা কালে মাঝে মাঝে অত্যন্ত সংবেদনশীল জায়গাতেও হাসি। মজা। ব্যঙ্গ। সব চলেছে। আশ্চর্য হয়েছি। সবাই নয় অবশ্যই। কেউ কেউ। তাদের অনেকে সদ্য কলেজের গণ্ডি পেরিয়েছে। বড়জোর বয়েস তাদের পঁচিশ ছুঁয়েছে কি ছোঁয়নি। ক্রমাগত সেল্ফি হলের মধ্যে। যে মানুষটা ব্যক্তিগত জায়গায় যা নিয়ে মজা করছে, সে-ই আবার ফেসবুকে গিয়ে "রিপ" লিখছে।

    আমাদের চোখ-কান-বোধ সব মিডিয়াগত। আমাদের আলোচনা, বিবেকবুদ্ধি সব মিডিয়ার নিক্তিতে মাপা হয়ে যাচ্ছে। খবর এত মনোরোম টাটকা খাদ্যের মত হয়ে উঠেছে যে আমি জোম্যাটো, সুইগির মত ইম্মিডিয়েট কোনো টাটকা আপডেট চাইছি। আমার মস্তিষ্কের লোভ এত এত বেড়ে গেছে।

    বড্ড হতাশ লাগছে। একটা মিডিয়া সৃষ্ট সমবেদনার আড়ালে একটা মৃত্যুও এভাবে সংবাদের পণ্য হয়ে যাচ্ছে দেখে। এতটা ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় দিলে একদিন আসবে যখন নিজের চোখের দিকেও নিজে তাকাতে পারব না। মিডিয়াকে জিজ্ঞাসা করব, মিডিয়া আমি কে?