এতে কি সত্যিই কিছু হচ্ছে? মিডিয়া কি বিচার পাওয়ার জায়গা? আমরা কি একটা ক্যাঙারু আদালতের কথা ভাবছি এই সোশ্যাল মিডিয়ায়? আমরা কি বিশ্বাস রাখি না ন্যায়-বিচার ব্যবস্থায়? আমরা কার কাছে এই আত্মপ্রকাশ ঘটাচ্ছি? কোন সমাজের কাছে? একজনের নামে অনেক অনেক কেচ্ছা হল, তবে আজ কেন? এতদিন পর কেন? মানুষের যৌনতা কি এতটাই ফ্ল্যাট, এতটাই একমাত্রিক একটা বস্তু? আমরা কি প্রমাণ করছি, দেখো এত বড় বড় সেলিব্রিটিরা যদি এর শিকার হয় তবে সাধারণ মানুষের আর কি কথা? আমরা কি পরোক্ষভাবে একটা পুরুষতন্ত্রের মুখোশ খুলতে গিয়ে সম্মিলিতভাবে তার ক্ষমতার কথাই স্বীকার করে নিচ্ছি না? অর্থাৎ তারা এগুলো করার ক্ষমতা রাখে, এবং প্রতিটা মেয়ে সে সেক্স্যুসায়ালি এক্সপ্লয়েটেড হওয়ার জন্য পোটেনশিয়াল, আমরা কি এটাই বুঝিয়ে ফেলছি না? তাদের সাথে আইন-আদালত কিচ্ছু নেই, তারা লজ্জায় মুখ খুলতে পারে না আইনের কাছে, কিন্তু হঠাৎ করে মুখ খুলে ফেলে সারা বিশ্ববাসীর কাছে, ব্যপারটা কেমন অদ্ভুত না?
পুরাণ অনুযায়ী দেবী সীতা জগন্মাতার অংশ। তিনি প্রথম এই ‘মি টু’। কিন্তু দেবী দুর্গা নন। তিনি ওসবের ধার ধারেন না। সীতার হাতে অপশান ছিল না, তাকে রামের মহিমা স্থাপন করতে হত, কিন্তু দুর্গার সেই অবলিগেশান ছিল না। তাই তিনি অনেকটা স্পেশ পেয়ে মহিষাসুরকে আচ্ছা সায়েস্তা করেছিলেন। আমার কথা কারোর অপমানকে অসম্মান জানানো নয়, কিন্তু ব্যপারটা কেমন একটা ব্রেকিং নিউজ হয়ে যাচ্ছে না? একটা ট্রেণ্ড হয়ে যাচ্ছে না? এতে কি সত্যিই কোনো পরিবর্তন হবে?
আসলে এই পোস্ট ট্রুথের জামানায় মিডিয়া একটা ভয়ংকর বস্তু। সে সব কিছুর বিকল্প হতে চাইছে। সেই সব স্থির করে দিতে চাইছে। আমার প্রধান কথা চাই আমোদ। তার যোগান দিতে হবে। মিডিয়া তা দেবে। তার প্রধান কথা আগে ছিল গান-সিনেমা। এখন হয়েছে নিউজ। তিলকে তাল বানাও, ধানকে কান করো। মুশকিল হল এর আসল উদ্দেশ্যটা হারিয়ে গিয়ে মিডিয়া নিজের মত একটা আইটেম বানিয়ে নিচ্ছে। কিছু মানুষের অপমান, কেচ্ছা, চিরকাল মানুষের উপভোগ্য বস্তু। কিন্তু কেচ্ছার তামাশা আর বিচারের ব্যবস্থা কি এক জিনিস! প্রথমটায় আমোদ আছে, উত্তেজনা আছে, নাটকীয়তা আছে। পরেরটায়? তাতে কি আছে, সে তো বোরিং প্রসেস একটা। কিন্তু স্থায়ী কিছু পরিবর্তন আনতে মিডিয়া লাগে না, লাগে সততা, ধৈর্য ধরে একটা লড়াইয়ে টিকে থাকার মানসিকতা, সে মিডিয়ার হাইপ পাক চাই না পাক। মিডিয়া যাই বলে তাই ঠিক, মিডিয়াই ঠিক করে দিচ্ছে কে ঠিক, কে ভুল। এতো সেই গ্রামীন বিচার ব্যবস্থার আধুনিক সংস্করণ! এ তো সেই ক্যাঙারু কোর্টের বিকল্প!
কথা হচ্ছে বিষয়টা এমন একটা রগরগে হয়ে যাচ্ছে যে তা আর সুস্থতার জায়গায় নেওয়া যাচ্ছে না। বড্ড একপেশে। একটা 'এবার কে, এবার কে' উত্তেজনা, 'কি করেছিল? কোথায় হাত দিয়েছিল? কি বলেছিল? শুতো নিশ্চয়, টাকা পাচ্ছে না এখন অ্যাদ্দিন পরে তাই শালা সতী সাজছে'...
মিডিয়া এর চাইতে বেশি কি দেবে? অবশেষে তো সেই পুরুষ আর পৌরুষের দাপটে সব শেষ হয়ে যাবে। জানেন না এ সমাজের মতে সোনার আংটি বাঁকা হয় না? তাই যদি সত্যি বিচার চাই, তবে তা ন্যায্য পথেই চাই। মিডিয়ায় এই সার্কাসটা বন্ধ হোক, আর নেওয়া যাচ্ছে না।
সৌরভ ভট্টাচার্য
10 October 2018