হুইলচেয়ারে সারাটা রাত বসে থাকে ছেলেটা। তার মায়ের হুইলচেয়ার। ছিল।
গঙ্গার হাওয়া আসছে। ছেলেটা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, মা, কেমন আছ?
একটা কুকুর গঙ্গার পাড় বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে তাকে দেখে থমকে দাঁড়ালো। তার কাছে এলো। লেজ নাড়তে নাড়তে, তাকে শুঁকতে শুঁকতে শুয়ে পড়ল, গুটিয়ে। ছেলেটা আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, দশ বছর হল। তুমি কি অন্যকোথাও চলে গেছ, না আছো?
একজন ভিখারি। হুইলচেয়ারের সামনে বসল। প্লাস্টিক খুলে ডাল মাখা ভাত বার করল। গন্ধ বেরোচ্ছে। পচা ভাত। কুকুরটা উঠে বসল। ছেলেটা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল, ভিখারিটা একদলা ভাত তার মুখের সামনে ধরে, কুকুরটাও তাকিয়ে। সেকি খাবে? মা খাব?
ছেলেটা খেল। হয় তো বমি পায়খানা হবে। হোক। কুকুরটা একদলা খেয়ে আবার জায়গায় এসে শুলো। ভিখারিটা তার বোঁচকা মাথায় নিয়ে, কুকুটাকে জড়িয়ে শুয়ে।
ছেলেটা দিগন্তের দিকে তাকালো। খানিকবাদে লাল হবে ওদিকটা। আবার আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি আছো। নইলে চোখ জুড়ে আরামের ঘুম নামছে কেন?
কেউ যেন বাঁশি বাজাচ্ছে কোথাও। ধুপের গন্ধ তার নাকে আসছে। মধুবাতা ঋতায়তে, মধুক্ষরন্তি সিন্ধবা....সমস্ত মধুময় হয়ে যাচ্ছে কি করে? সমস্ত জগত মা হয়ে যাচ্ছে যে!
ছেলেটা ঘুমিয়ে পড়ল। শান্তিতে। ভালোবাসাকে দুই পার মিলিয়ে না পেলে পূর্ণ হয় না তো মানুষ! যে পূর্ণ, তার ভয় কি!