লক্ষ্মী ঠেলা দিয়ে ভুতোকে তুলল। ভুতো ধড়ফড় করে উঠে বসল। ঘড়িটার দিকে তাকালো। রাত আড়াইটে। বাইরে ঝিঁঝি ডাকছে। লক্ষ্মী পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
ভুতো বলল, কি হল?
লক্ষ্মী বাইরের দরজার দিকে ইশারা করল। চোখমুখ উদ্বিগ্ন।
ভুতো বলল, আবার!
======
ভুতো টর্চটা জ্বেলে, খালি গায়েই বাইরে এলো। হ্যাঁ ঠিক, ওই তো।
কার্তিক আর গণেশ মাছ ধরছে। কার্তিকের দশ বছর বয়েস, গণেশের আট।
পুকুরে চাঁদের আলো পড়েছে। বাইরেটা নিঝুম। কিন্তু একটা সুর আছে। নিঝুম রাতে একটা সুর বাজে। ভুতো টের পায়। কিন্তু মা কই?
ওই তো ওপাড়ে। বাঁশঝাড়ের কোল ঘেঁষে বসে। জলে পা ডুবিয়ে।
ভুতো পুকুরের পাড় ধরে ধরে ওপারে গেল। মায়ের কাছে। হাঁটতে হাঁটতে পায়ের তলায় শুকনো ডালপালা মড়মড় করে ভাঙল। তাও হুঁশ নেই ছেলে দুটোর।
ভুতো মায়ের কাছে এসে দাঁড়ালো। মা তাকালো না ভুতোর দিকে। ওপারে নাতিদের দিকে তাকিয়ে বলল, কি তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাচ্ছে না রে! বড়টার মুখটা তো তোর বাবার মুখ কেটে বসানো।
ভুতোর মনটা খারাপ হয়ে গেল। মায়ের পাশে বসল। রাগটা গলে শিশিরের মত মায়াবিন্দু হয়ে মনের উপর পড়ে। ভালোবাসা কাকে বলে জানে না ভুতো। মানে টিভিতে সিনেমায় যেমন ভালোবাসা দেখায় আরকি। কিন্তু মায়াটা বড় হয় বুক জুড়ে।
মা-কে বলল, কিন্তু এত রাতে কেন ডাকো ওদের?
মা বলল, থাকতে পারি না। দিনের বেলায় তো আমায় দেখে গ্রামের লোকে দাঁতকপাটি লেগে রাস্তায় মুচ্ছো যাবে। সেকি ভালো হবে? তোকে কে ডাকল, লক্ষ্মী?
ভুতো বলল, আর না তো কে!
=======
ভোর হব হব। ভুতো বলল, মা আসি। তুমিও….
মা তাকালো মুখের দিকে। বলল, এই কার্তিক মাসটাই তো আসিরে শুধু। তারপর তো আবার সারাটা বছর…. যা লক্ষ্মীকে ডেকে দে, আলো ফুটছে… ফিরতে হবে।
=======
কার্তিক, গণেশ ঘুমাচ্ছে। ভুতো দরজার কাছে বসে। চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়ছে। গরম কাপ দুই হাতে জড়িয়ে ওমটা নিচ্ছে ভুতো। এই ওমে মনটা জুড়ায়। কাউকেই তো ধরে রাখতে পারল না, না মাকে, না লক্ষ্মীকে।
দুটো বড় জলের ফোঁটা গাল বেয়ে গড়ালো ভুতোর। ঘুমন্ত ছেলে দুটোর মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া লাগছে। ভালোবাসা কি জানে না ভুতো। মায়া জানে।
হঠাৎ শীতল হাওয়া এসে দুই গালে লাগল। জল শুকিয়ে গেল।
ভুতো জানে, লক্ষ্মীর হাত। মা তো বেলা অবধি ঘুমায়।