Skip to main content
 
 
লোকটা ভেবেছিল কি, যেখানেই যাবে চারদিক থেকে নাকি টুপ টুপ করে ভালোবাসা পড়বে। বৃষ্টির মত। শিশিরের মত। মধুর মত।
       তাই কি পড়ে? যাও কয়েক বিন্দু ভালোবাসা পড়ল তাও এত কষাটে যে মুখে রুচলো না। আর বাদবাকি কোথাও অম্ল, কোথাও তিতে, কোথাও ঝাল এই সব টুপ টুপ পড়ে, লোকটা চাখে, আর বেজায় চটে যায়।
       কেউ তাকে বলল, আহা, জানো না বুঝি, সংসার মানেই তো এমন ধারা গো, সব দুঃখময়, শুদ্ধধনের ছেলেটা সেই শোকে রাজপাট ছেড়ে বিবাগী হয়েছিল না? তুমি ঈশ্বরের সাধনা করো, মনটা আনন্দে ফুরফুর করবে। জগৎ সংসার তো সব মিথ্যা গা। মায়া!
       লোকটার মনে ধরল কথাটা। দীক্ষা নিল। একটা প্রাচীন বটগাছের তলায় বসে গেল সাধনায়। বছর গেল। লোকটার কোষ্ঠকাঠিন্য হল, উকুন হল, ঘামাচি হল, ছত্রাক সংক্রমণ হল কুঁচকিতে, বগলে, তাও সে উঠল না। আজকাল সুজাতা তো পায়েস নিয়ে আসে না। তাই পাশের হোটেলে দু'বেলা খাবারের অর্ডার দেওয়া থাকত তার।
       একদিন পূর্ণিমায় হঠাৎ করে ঈশ্বর এসে উদয় হলেন। ছেঁড়া কম্বল, গায়ে বোটকা গন্ধ, সারা মুখে যুগ-যুগান্ত না-কাটা দাড়ি। চুল উসকোখুসকো। হলদে দাঁত। তার পাশে এসে একটা বোঁচকা মাথায় দিয়ে শুয়ে পড়লেন। ঈশ্বরের গায়ে এত গন্ধ হবে লোকটা কল্পনাও করতে পারেনি। সে হুড়মুড় করে উঠে পড়ল। ঈশ্বর তখন নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। তার নাক থেকে সর্দি গড়িয়ে মাটিতে পড়ে নদী হচ্ছে। লালাগুলো মাটিতে পড়ে ঘূর্ণি তৈরি করছে। সে ঘূর্ণিতে চাঁদের আলো। সে নদীতে বাতাসের বুদবুদ।
       লোকটা একবার ভাবলো ঈশ্বরকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে, এ তোমার কেমন হাবভাব। ভাবতে না ভাবতেই ঈশ্বর আকাশ কাঁপিয়ে বলে উঠলেন, কে বলেছে রে আমার নধরকান্তি, গোলগাল, দাড়িগোঁফহীন, মাকন্দ চেহারা? পা টেপ আমার!
       এ তো অন্তর্যামী! লোকটা বাধ্য হয়ে পা টিপতে বসল। পা ভর্তি কাদা, বিষ্ঠা, পোকা। লোকটা নাক সিঁটিয়ে চোখ বন্ধ করে টিপতে যাবে, যা! ঈশ্বর নেই। হাপিস!
লোকটা ভাবল, যাক বাঁচা গেছে। একটা স্বস্তির শ্বাস ফেলে ছুটল নদীতে। স্নানটান সেরে, ভালো করে পেটপুরে খেয়ে একজন অচেনা পথিককে জিজ্ঞাসা করল, এদিকে কোথাও মেয়েমানুষ পাওয়া যায় গো, যারা টাকা দিলে ভালোবেসে পাশে শোয়?
       কথাটা বলে নিজেরই কেমন লাগল, এখনও ভালোবাসা খোঁজে! একটা পাড়া দেখিয়ে দিল অচেনা পথিক।
       গভীর রাত। লোকটা সেই পাড়ার দিকে যাচ্ছে। হঠাৎ তার পাঁজরগুলো টনটনিয়ে ব্যথা করে উঠল। জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। লোকটা দেখল চারদিক থেকে কিলবিল করে ছোটো ছোটো মাকড়সা সার দিয়ে এসে তার পা বেয়ে উঠে পড়ছে তার শরীরে। পাঁজরগুলো ফাঁক করে ঢুকে পড়ছে। মাথার ভিতর ঢুকে পড়ছে। কানের ভিতর, নাকের ভিতর, লিঙ্গের ভিতর ঢুকে পড়ছে। লোকটা বলে উঠল, কারা তোমরা? কানের কাছে একটা মাকড়সা বলল, ভালোবাসা। তুমি নাকি আমাদের খুঁজছিলে। আমরা জাল বিছাব তোমার মাথায়, বুকে, চোখে, কানে, জিভে, লিঙ্গে, হাতে, পায়ে। তারপর আমরা আর তুমি শিকারের আশায় থাকব, কেমন?
       লোকটার ভালো লাগল কথাটা। সে বলল, তবে এতদিন আমার কাছে এলে না কেন? মাকড়সারা বলল, এতদিন তুমি ভুল ঠিকানায় ঘুরেছ তো?
       লোকটা বলল, মানে?
       মাকড়সারা বলল, ভালোবাসা টুপ করে আকাশ থেকে কি পড়ে? না ঈশ্বর তার খোঁজ রাখে? তুমি চাইছ মাটির ভালোবাসা। এতদিন তুমি মাটির দিকে তাকালে কই?